কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের রোল মডেল

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ইতিহাসেরই সবচেয়ে গোছানো এবং পেশাদার দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তাঁদের পেশাদারত্বের অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। কিন্তু একটা দিক দিয়ে তাঁদের ধারেকাছেও নেই বিপিএল ইতিহাসের অন্যকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি।

বর্তমান যুগে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দলগুলার ভূমিকায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন শুধু টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া এবং শিরোপা জেতার মধ্যেই তাঁদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ নয় বরং বছরব্যাপী হোম টাউনে বিভিন্ন প্রচারণা চালানো, ওখানকার মানুষের সাথে জনসংযোগ এবং ওখানে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কিংবা প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির মাধ্যমে একেবারে তৃণমূল থেকে কিছু স্থানীয় প্রতিভা বের করে এনে পরিচর্যার সুযোগ করে দেওয়াও।

কুমিল্লার লালমাইয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ট্যালেন্টহ্যান্ট ক্রিকেট অ্যাকাডেমি পরিচালনা করছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পরামর্শক এবং বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ স্টিভ রোডসকে। বিদেশি কোচ দিয়েও যে এই কাজটা সম্ভব সেটা কুমিল্লা করে না দেখালে বোঝার উপায় ছিল না।

এমনিতে বিপিএল একটা অনিয়মিত টুর্নামেন্ট। তার মধ্যে দেখা যায় নিয়মিতই ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিবর্তিত হয় এখানে। অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজ টুর্নামেন্টগুলার মতো বিপিএলে কোনো ফিক্সড ফ্র্যাঞ্চাইজি নেই। তাছাড়া টুর্নামেন্টের প্রাইজমানি, সুযোগ-সুবিধাহীন বিভিন্ন নিয়মনীতির জন্যও পূর্বের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলা টুর্নামেন্টে কন্টিনিউ করতে চায় না অনেকসময়। এসব নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও আমাদের দেশে একমাত্র কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকেই এসব কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।

সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হলো, এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটার একটা লক্ষ্য আছে। সেটা বিপিএলের সব ফ্র্যাঞ্চাইজিরই থাকে। কিন্তু অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলার মতো শুধু শিরোপা জেতার লক্ষ্যে বিভোর থাকেন না তাঁরা। তাঁদের লক্ষ্যটা দীর্ঘমেয়াদি।

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবারই কুমিল্লায় গিয়ে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি আয়োজন করার পাশাপাশি স্থানীয়দের সাথে জনসংযোগের দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিরলই বলা চলে। সবশেষ ২০১২ সালে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি না চালালেও ঢাকায় কনসার্ট আয়োজন করে এবং বিভিন্ন এলাকায় ফ্যান ক্লাব তৈরি করে জনসংযোগ করতে দেখেছিলাম কেবল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ফ্র্যাঞ্চাইজিকে।

এই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের একটা সিরিয়াস ভিশন আছে। সেটা হলো কুমিল্লায় একটা স্টেডিয়াম তৈরি করে হোমগ্রাউন্ডে স্থানীয়দের সমর্থনকে সঙ্গে করে নিয়মিত ম্যাচ খেলার। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটাকে স্বপ্নই মনে হবে। কিন্তু এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়াটা অসম্ভব কিছুই না।

উদাহরণ কিন্তু একদম চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে। সম্প্রতি আমাদের ফুটবল ইতিহাসে সর্বপ্রথম ক্লাব হিসেবে নিজেদের স্টেডিয়ামে খেলা শুরু করেছে বসুন্ধরা কিংস। তাই ভিক্টোরিয়ানরা চাইলে সেখান থেকে বারতি অনুপ্রেরণা নিতেই পারেন।

মূলত দূরদর্শী পরিকল্পনা, আউট অব দ্য বক্স ভাবনা এবং অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিদের থেকে চিন্তাচেতনায় বিস্তর তারতম্যের জন্যই নিজের দল ঢাকার পরে কুমিল্লাকে আমি বরাবরই সমর্থন করে আসছি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স একসময় দেশের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য রোল মডেল হবে, বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই নেক্সট বিগ থিং হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করবে, চাওয়া এমনটাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link