সাকিব আল হাসান। ব্যাটিং-বোলিং দুই জায়গাতেই সমান। পরিসংখ্যানও তাই বলে। প্রতিনিয়ত অন্যের রেকর্ড ভেঙে গড়ছেন নিজের নামে। বহুবার আইসির্সির অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে হয়েছেন নাম্বার ওয়ান। তিন ফরম্যাটেই একই সময়েই নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার হওয়ার কীর্তিও রয়েছে তাঁর।
ওয়ানডেতে ৬০০০ রানের পাশাপাশি ২৫০ উইকেট এবং ৫০টি ক্যাচ মাত্র চার জন নিতে পেরেছেন তাদের একজন সাকিব। সবার চেয়ে কম ম্যাচ খেলেই করেছেন এই কীর্তি। একই ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং চার উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন। বিশ্বকাপেই একইম্যাচে হাফসেঞ্চুরি এবং পাঁচ উইকেট শিকারের ক্লাবেও নাম লিখিয়েছেন। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে আছে ১১০০ এর অধিক রান এবং ৩০ উইকেট। আছে ১২টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস, যেখানে তার সামনে শুধু শচীন টেন্ডুলকার।
টেস্টে নয়টি টেস্টজাতির প্রত্যেকের বিপক্ষে আছে পাঁচ উইকেট, যে কীর্তি গড়েছেন কেবলই চারজন। এখানেও সাকিব সবার আগে, মাত্র ৫০ টেস্ট খেলেই পৌঁছে গেছেন এলিট ক্লাবটিতে। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও দশ উইকেটের কৃতিত্বও আছে সাকিবের ঝুলিতে।
টি-টোয়েন্টিতে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। একই টি২০ ম্যাচে ৪০ এর বেশি রান ও পাঁচ উইকেট নেয়ার রেকর্ডও সাকিবের দখলে। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৫০০ রান ও ১০০ উইকেট রয়েছে আল হাসানের। বিপিএলে সর্বাধিক চারবার টুর্নামেন্ট সেরার খেতাব জিতেছেন। সদ্য সমাপ্ত বিপিএলেই টানা পাঁচ ম্যাচে হয়েছেন ম্যাচ সেরা, যে কীর্তি ক্রিকেট বিশ্বের আর কোথাও ঘটেনি।
তিন ফরম্যাটে ১১০০০ রান এবং ৫০০ উইকেটের এলিট ক্লাবে সাকিবের সঙ্গী মাত্র একজন। বলাই যায়,এখানেও সাকিব দ্রুততম। আরেকটি রেকর্ডের সামনে দাড়িয়ে আছেন বাংলার বরপুত্র,টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটা সেঞ্চুরি করতে পারলে তিনি হবেন বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় যার তিন ফরম্যাটে সেঞ্চুরি এবং পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব আছে।
এতসব রেকর্ড গড়েও সাকিব কি সর্বকালের সেরা? প্রশ্নটা থেকেই যায়। ব্যক্তি পর্যায়ে মানলেও আন্তর্জাতিক পর্যায় মানবে না, দুঃখবোধের জায়গা এখানেই। সাকিবের জন্মটা বাংলাদেশে, তাই অনেক অতিমানবীয় পারফরম্যান্সও ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স হয়ে উঠতে পারেনি।
সাকিব আল হাসানের টেস্টে বেস্ট বোলিং ফিগার তৈরির ম্যাচেও হেরেছিল বাংলাদেশ। তখন নিশ্চয়ই এমন অসাধারণ বোলিং ফিগারের মার্কেট ভ্যলু থাকে না,থেকে যায় শুধু পরিসংখ্যানের পাতায়। ২০১৯ বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচে ব্যাটে, বলে সমানতালে পারফর্ম করেও মাত্র তিনটি ম্যান অব দ্য ম্যাচ; ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্সের অভাবেই হয়তো পাওয়া হয়নি টূর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কারটিও।
খেলতে পারেন না অনেক সংখ্যক ম্যাচও। সাকিবের অভিষেকের পর থেকে সর্বোচ্চ টেস্ট খেলেছেন স্টুয়ার্ট ব্রড, প্রায় ১৫০টির বেশি অন্যদিকে সাকিব খেলেছেন ৫৭টি। প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। পঞ্চাশ টেস্ট খেলেই এত কীর্তি, ১৫০টি খেললে আরো কত রেকর্ডই গড়া হতো রেকর্ড বয়ের।
বাংলাদেশের জয় পাওয়া ১৬টি টেস্টের চারটি বাদে বাকি বারোটিতে রেখেছেন অবদান। সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ তিনবার জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে যার মধ্যে একটি প্রথম টেস্ট জয়; ২০০৫ সালের। আর একবার নিউজিল্যান্ডকে। টেস্টে সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশের জয়ের হার ৫% এর মত যেখানে, সেখানে সাকিব থাকলে জয়ের হার ২০% এর কাছাকাছি।
ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স এর অভাব,ম্যাচ খেলার সুযোগ কম এসবই সাকিবকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সর্বকালের সেরা হতে দিচ্ছে না, অদূর ভবিষ্যতেও দিবে না ধরাই যায়। ইমরান খান, গ্যারি সোবার্স, জ্যাক ক্যালিস, হালের বেন স্টোকস এদের ক্যারিয়ার গ্রাফ সাকিবের তুলনায় নিচু হতে পারে কিন্তু ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স বেশি।
তাই আমরা, বাংলাদেশিরা সাকিব বাংলাদেশের বলে গর্ব করলেও সাকিব হয়তো ক্যারিয়ার শেষে হতাশা আর আক্ষেপ নিয়ে বলতে পারেন তার জন্মটা বাংলাদেশে। এই হতাশার কোন সমাধান নেই, আফসোসের জবাব নেই। বাঙালির আকাশে বাঙালির দু:খ উড়ে বেড়ায়, আক্ষেপ হয়ে ঝরে পড়ে।