ফিলিপ কিংবা ফিনিক্স কৌতিনহো

প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় এক পাখির কথা বেশ প্রচলিত ছিল – ‘ফিনিক্স পাখি’। এ পাখি লড়ে যায়, এ পাখি ধ্বংসস্তুপ থেকে বারেবারে জন্ম নেয়। এমন এক পাখির দেখা মিলেছে এই একবিংশ শতাব্দীতে। তবে তা মানুষ বেশে ফুটবল মাঠে। সে পাখির নাম ফিলিপ কৌতিনহো। সবাই যখন ভাবে তিনি শেষ ঠিক তখনই তিনি আবার হাজির হন নতুন উদ্যমে।

ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলার ফিলিপ কৌতিনহো নিজেকে মেলে ধরেছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লিভারপুলে। প্রিমিয়ার লিগে তিনি তাঁর পাখা মেলে উড়েছেন। অলরেডদের আক্রমণের অন্যতম কাণ্ডারিতে পরিণত হন তিনি। তবে উড়তে থাকা কৌতিনহো আরো উপরে উঠতে চাইলেন। দেখতে চাইলেন আকাশ ঠিক ছোঁয়া যায় কিনা। তবে সেখানটাই যেন বড্ড বড় এক ভুল করে বসলেন তিনি।

আকাশ ছোঁয়ার বদলে যেন মাটিতে পড়লেন মুখ থুবরে। নিজের পাখাগুলো ভারি মনে হতে শুরু করলো তাঁর। লাল জার্সিটা ছেড়ে গায়ে জড়ানো স্পেনের সেই খয়েরি-বেগুনি জার্সিটায় ঠিক স্বাচ্ছন্দ্য নেই। ২০১৭/১৮ মৌসুমের মাঝপথে ইংল্যান্ড ছেড়ে কৌতিনহো পারি জমিয়েছিলেন স্পেনে বার্সেলোনা শহরে। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর অর্জনে ঠাসা ক্লাবটাকে সঙ্গী করে তিনি ছুঁতে চেয়েছিলেন সুবিশাল নীলাম্বর।

তবে মানুষ যা ভাবে তা হয় কি? কৌতিনহোর ক্ষেত্রেও ঘটনাটা তা হলো না। নিজেকে ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। নতুন ক্লাব বড্ড বেশি অপরিচিত তাঁর জন্যে। দলও তাঁকে নিয়ে পরীক্ষ-নিরীক্ষা চালাতে থাকে। কিন্তু নিজের স্বভাবচারিত খেলাটা আর খেলা হয়ে ওঠে না তাঁর। দলের ফরমেশনও আসলে তাঁকে সেই সুযোগটা খুব একটা দেয়নি। তাঁর দুরপাল্লা সেই জোরালো শটগুলোও কোথাও একটা হারিয়ে গেলো।

এখন অবধি ১০৬ ম্যাচ খেলেছেন তিনি কাতালানদের হয়ে। গোল করেছেন মাত্র ২৫টি। তাছাড়া অ্যাসিস্ট কেবলমাত্র ১৪টি। ভাবুন তবে! কৌতিনহো কি তবে খেলাই ভুলে গেলেন? এমন প্রশ্নও হয়ত জেগেছিলো অনেকের মনে। কিন্তু কৌতিনহো যে শেষ হয়ে যাননি সেই প্রমাণ দিলেন বুন্দেসলিগায় গিয়ে। জার্মান ক্লাব ফুটবলের পরশক্তি বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে এক মৌসুম ধারে খেলতে যান তিনি।

সেখানে তিনি সেই ফিনিক্স পাখির মতো নতুন উদ্যমে নিজেকে আবিষ্কার করেন। জার্মান ক্লাবটির হয়ে দারুণ পারফর্ম করেন তিনি। সংখ্যার বিচারে হয়ত কৌতিনহোর পারফর্মেন্স বিচার করা যাবে না। তবে সেই এক মৌসুমে জার্মান ক্লাবটির হয়ে মাঠে তাঁর উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। তিনি যেন নিজেকে ফিরে পাওয়ার মানসিক রসদটুকু নিয়ে বার্সা ডেরায় আবার এসে হাজির হন।

আবারও সেই একই দশা। কৌতিহোর সেই ধার দেখা যায় না। লা লিগায় এলেই ভোতা এক তরবারী বনে যান কৌতিনহো। অগ্যতা বার্সেলোনারও আর কিছু করার থাকে না। সম্ভাবনা রয়েছে তবুও মাঠের পারফর্মেন্সে তাঁর প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে না। আবারও ধারে পাঠানো হলো তাঁকে। সেই আবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। এবার ক্লাবটা অ্যাস্টন ভিলা। মৌসুমের মাঝে তাঁকে ধারে দলে আনেন কৌতিনহোর অলরেড সতীর্থ স্টিভেন জেরার্ড।

সদ্যই ইনজুরি কাটিয়ে উঠেছেন। বার্সেলোনা তাঁকে রিকভারি করার সেই সুযোগটা খুব একটা দেয়নি। জেরার্ড দিলেন। অ্যাস্টন ভিলার হয়ে শুরুর একাদশেও সুযোগ পেলেন কৌতিনহো। সাত ম্যাচের ছয়টাতে। পুরনো সতীর্থ জেরার্ড জানেন তাঁর শক্তির জায়গাটা আসলে কোথায়। কৌতিনহোর সম্পূর্ণটা নিঙরে নিতে বদ্ধপরিকর জেরার্ড। নিজেকে উজাড় করেই দিতে প্রস্তুত ফিনিক্স কৌতিনহো।

সাত ম্যাচে তাঁর অবদান ছয় গোলে। তিন অ্যাসিস্ট ও তিন গোল। আবার স্বরুপে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছেন যেন। তাঁর থেকেও বড় কথা সাবলীল সেই কৌতিনহোর দেখা মিলছে। মাঠে এখন খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় তাঁকে। প্রভাবটা বোঝা যায় অ্যাস্টন ভিলার খেলার ধরণে। আকাশ ছুঁতে গিয়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে যে পাখি ভুলে গিয়েছিলো গান সে পাখি এখন সরব ইংল্যান্ডের মাটিতে। সুমধুর কণ্ঠে কিংবা সুনিপুণ ফুটবলের কারিকুরিতে মুগ্ধ করেন সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link