সাকিবকে কোথায়, কতখানি প্রয়োজন!

একটা সময় হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশ ছোঁবে। তবে সেই আকাশ ছোঁয়া সাফল্যও প্রতিবার স্মরণ করিয়ে দিবে একজন কিংবদন্তির কথা। বাংলাদেশ থেকে উঠে আসা একজন ক্রিকেটার যিনি ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরাদের একজন হয়ে উঠেছিলেন। হয়তো আরেকজন সাকিব আল হাসানের খোঁজ গোটা ক্রিকেটবিশ্ব চালাবে একটা শতাব্দী জুরে। তবুও কী আরেকজন সাকিব ফিরে পাওয়া যাবে?

একটা সময় বাংলাদেশ যখন ম্যাচ খেলার জন্যই খেলতো তখন এই লোকটাই বাংলাদেশকে জিততে শিখিয়েছে। অন্তত সাকিব দেখিয়েছেন কীভাবে ক্রিকেট পরাশক্তিদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে হয়। কীভাবে নিজের শরীরি ভাষা দিয়ে প্রতিপক্ষের সমীহ আদায় করে নিতে হয়। কীভাবে একটা গোটা ক্রিকেট জাতির প্রাণ হয়ে উঠা যায়।

পনেরো বছর ধরে অনবরত সাকিব এই কাজটা করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন এই সাকিবরাই। তবে সাকিব এবার একটু বিরতি চাচ্ছেন। সেই চাওয়ার পক্রিয়া নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনাই হতে পারে। সেই দোষ সাকিব কিংবা বিসিবি দুজনের কাঁধেই দেয়া যায়।

তবে সেই আলোচনা আপাতত তোলা থাক। একটু মাঠের ক্রিকেটে ফেরা যাক। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটে সাকিবের রোলটা কী সেটা একটু তলিয়ে দেখা যাক। তবে এর আগে বলে রাখা ভালো। সাকিব অনন্য, বাংলাদেশ কিংবা গোটা বিশ্বেই আরেকটা সাকিব পাওয়া দুষ্কর। তবুও সব ভালোরই একটা সময় ইতি টানতে হয়, নক্ষত্রদেরও একদিন মরে যেতে হয়।

সাকিব তাঁর শেষ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়েছে এই দলে আমি একজন প্যাসেঞ্জার। যা আমি কখনোই হতে চাই না।’ সত্যিই তো। আর সাকিবের মত একজন চরিত্র চালকের আসনে থাকবেন না, মাঠের তাঁর ইচ্ছেমত খেল দেখাবেন না তা মেনে নেয়াও তো কঠিন।

অন্য সিনিয়র ক্রিকেটারদের মত সাকিবও আসলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখছেন ওয়ানডে ক্রিকেটে। এই ফরম্যাটটা নিয়মিতও খেলছেন তিনি। যদিও ব্যাট হাতে খুব ভালো সময় কাটাচ্ছেন তা বলা যাবেনা। ২০১৯ বিশ্বকাপে তিন নাম্বারে নেমে সাকিব যেই উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটা এখন আর নেই। এমনি ওই বিশ্বকাপের পর আর কোন সেঞ্চুরিরও দেখা পাননি তিনি।

পুরো ক্যারিয়ার প্রায় ৮২ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করা সাকিবের স্ট্রাইকরেটও গত দুই বছরে নেমে এসেছেন ৬৯.৮০ তে। ফলে ব্যাটে যে আগের সেই ধারটা নেই সেটা স্পষ্ট। তবে বল হাতে সাকিব এখনো সেরাদের একজন। তবে ব্যাটসম্যান সাকিব তিন নাম্বার পজিশনে খেলার মত অবস্থায় আছেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটটা নিজে থেকেই খেলছেন না এই অলরাউন্ডার। পাঁচদিনের ম্যাচ খেলাটা ৩৫ বছর বয়সী সাকিবের জন্য বড় চ্যালেঞ্জই বটে। যেমন ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাকিব টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৩ টি। আর এই ফরম্যাটে শেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন পাঁচ বছর আগে। তাই টেস্টেও সাকিব মূলত বোলার হিসেবেই দিয়ে যাচ্ছেন।

তবুও টেস্টে এখনো বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব হতে পারতেন যদি তিনি নিয়মিত খেলতেন। তবে তিনি খেলবেন কি খেলবেন না সেটা সিরিজের আগ মুহূর্তেও নিশ্চিত হওয়া যায় না। ফলে টেস্ট দল কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় যেতে পারে না।

যেমন  ইয়াসির আলী রাব্বিকে খেলানো হচ্ছে সাকিবের জায়গায়। তবে সাকিব কোন ম্যাচে হঠাৎ খেললেই এই ক্রিকেটারের জায়গা নিয়ে টানাটানি হয়। তাই একট স্থায়ী সিদ্ধান্ত আসা জরুরি।

ওদিকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ব্যাট হাতে সাকিবের আগের সেই ইমপ্যাক্টটা নেই। সাকিব নিজেও সেটা বুঝতে পারেন। সেজন্যই বিপিএলে নিজের ব্যাটিং স্টাইলে খানিকটা পরিবর্তন এনেছেন। পরে বিপিএলে সাফল্য পেলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো সেভাবে পাননি। তবে এই ফরম্যাটে বল হাতে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার তিনি।

সবমিলিয়ে এই তিন ফরম্যাটেই মাঠে নামাটা বোধহয় সাকিবের শরীর আর পারমিট করছেনা। এছাড়া তাঁর ব্যাটের রিফ্লেক্সও যে অনেকটা কমেছে সেটাও স্পষ্ট। এক্ষেত্রে বয়সও একটা বড় কারণ হতে পারে। ফলে সাকিব কোন ফরম্যাট খেলবেন, দলে তাঁর রোল কী থাকবে এগুলো নিয়ে দ্রুতই একটি সমাধানে আসা জরুরি। সেটা সাকিবের জন্যেও, দেশের ক্রিকেটের জন্যও।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link