প্রতিপক্ষ হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদকে কিলিয়েন এমবাপ্পে যতটা ম্যাচে পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি পেয়েছেন লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়ররা। স্প্যানিশ লা লিগায় এল ক্লাসিকোতে একাধিক ম্যাচে এই দুজন বার্সেলোনার জার্সি গায়ে খেলেছেন। তবে নেইমারের চেয়ে বেশি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন মেসি। আজকের ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য এই তিনজনই আতংকের নাম। যদিও এমবাপ্পের খেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এই ম্যাচে রিয়াল নিজেদের মাটিতে খেললেও সতর্ক পাহাড়ায় রাখতে হবে। এদিকে পিএসজির বিপক্ষে আজকের ম্যাচে দুই বড় অস্ত্রকে পাচ্ছে না মাদ্রিদের ক্লাবটি। আজকের সেই মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই কি-না দুই বড় অস্ত্রকে পাবে না রিয়াল! গত মাসে প্রথম লড়াইয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের শেষ মুহূর্তের জাদুকরীতে পিএসজি ১-০ গোলের জয় পায়। ফলে কোয়াটার ফাইনালে উঠতে হলে আজ মধ্যরাতে পিএসজির বিপক্ষে কমপক্ষে ২-০ গোলের জয় তুলে নিতে হবে রিয়ালকে। তবে কাজটা যে কার্লো অ্যানচেলত্তির দলের জন্য যে খুত একটা সহজ হবে না, তারই যেন একটা আভাস মিলছে আগে থেকেই। রিয়াল মাদ্র্রদ কোচের হাতে যে দুই বড় অস্ত্র থাকবেনা আজ।
ব্রাজিলিয়ান ক্যাসেমিরো আর ফেরলান্দ মেন্দিকে পাচ্ছে না স্প্যানিশ জায়ান্টরা। কারণটা যদিও ইনজুরি নয় নিষেধাজ্ঞার কারণেই মাঠে নামা হচ্ছেনা দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের। পিএসজির মাঠ পার্ক দেস প্রিন্সেসে প্রথম লেগে দুজনই হলুদ কার্ড দেখার কারণেই আজকের ম্যাচে তাদের পাচ্ছে না দলটি। ক্যাসেমিরো ও মেন্দি, দুজনই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রæপ পর্বে দুটো করে হলুদ কার্ড দেখে দলকে বিপদে ফেলেছিলেন।
ফলে নকআউট পর্বের যে কোনো পর্যায়ে একটা হলুদ কার্ড দেখলেই পরের ম্যাচে নিষিদ্ধ হওয়ার সামনে পড়তে হতো দুজনকে। রিয়ালের দুই খেলোয়াড়ই কার্ড দেখেছেন পিএসজির হোম গ্রাউন্ডে। যার ফলে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়ে মাঠ তো নয়ই, ডাগ আউটে থাকছেন তারা। সেই ম্যাচে ক্যাসেমিরো প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজির আরেক মিডফিল্ডার দানিলো পেরেইরাকে ফাউল করে কার্ড দেখেন মেন্দি।
মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে খেলতে পারা আর এই দুজনের না খেলাটা কিছুটা হলেও প্রভাব থাকবে। সেখানে এগিয়ে থাকবে পিএসজি। কোচ আনচেলত্তিকে মেন্দির জায়গাটা নিয়ে তেমন একটা সমস্যায় পড়তে হবে না। ফরাসি এই ডিফেন্ডারের জায়গায় ডেভিড আলাবা থাকতে পারেন মূল একাদশে। রিয়ালে মূলত সেন্টারব্যাক পজিশনে কেলে থাকেন। যে কারণে রক্ষণের মাঝামাঝিতে তার জায়গাটা নিতে হবে নাচো ফার্নান্দেজকে।
তবে, সমস্যা হতে পারে ক্যাসেমিরোর অনুপস্থিতি পূর্ণ করা নিয়ে। রিয়ালের মাঝমাঠে তার আগমনের পর থেকেই লিওনেল মেসির গোল একরকম নাই হয়ে গেছে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। তার অনুপস্থিতিটা সামলানো যে কঠিন বিষয়, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
তাই মেসিকে আজকে একটু কম টেনশন নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ এসেছে। স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যম মার্কা জানাচ্ছে, তার জায়গায় আসতে পারেন এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা কিংবা ফেদে ভালভার্দের যে কেউ। এটা হতে পারেন যদি টনি ক্রুস তার ফিটনেস ম্যাচের আগে ফিরে না। তবে ফিটনেস ফিরে পেলেই কবেল তাকে দেখা যেতে পারে রিয়ালের মিডফিল্ড পজিশনে।
তাই আজকের ম্যাচে নিশ্চিতভাবে লিওনেল মেসিকে আটকানোর জন্য একটু বেশিই চিন্তা করতে হবে রিয়ালের কোচিং ডিপার্টমেন্টকে। তবে রিয়াল আগেও এই ধরনের কার্ড আর ইনজুরি সমস্যা নিয়ে মাঠে নেমেছে। এখন তো দল হিসেবে বেশ ভাল অবস্থায় রয়েছে তারা। তবে আজকের ম্যাচে পিএসজির বিপক্ষে জয়ের কোন বিকল্প নেই। পিএসজি, রিয়াল মাদ্রিদ ও কিলিয়ান এমবাপ্পে এই তিনটি নাম ঘিরে গত কয়েক মৌসুম ধরে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছে অনেক।
সেটাকে আরো উসকে দিয়েছে ফরাসি সেনসেশনের রিয়াল মাদ্রিদে খেলার স্বপ্ন দেখার বিষয়টি প্রকাশ্যে বলার কারণে। ফুটবলবিধাতার কী খেলা, দুই ক্লাবকে এবারের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্বের শুরুতেই একে অপরের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিয়েছে! প্রথম লেগে আবার এমবাপ্পের একমাত্র গোল গড়ে দিয়েছে ম্যাচের পার্থক্য! সেই জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাদ্রিদ মাঠে নামার অপেক্ষায় পিএসজি।
চ্যাম্পিয়নস লিগে টিকে থাকতে এ ম্যাচে জয়ের কোন ভিন্ন পথ খোলা নেই রিয়ালের সামনে। কারণ শেষ ষোলোর প্রথম লেগের খেলায় ১-০ গোলের হারে পিছিয়ে রয়েছে আসরের রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা। মেসি-এমবাপ্পেদের নিয়ে গড়া বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমণভাগ নিয়ে মাদ্রিদ কাপানোর অপেক্ষায় পিএসজি। তাদের হারাতে জোর প্রস্তুতি বেশ ভালোভাবেই সেরে নিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। দুই দলের যে কোন একটি জিতবে। তবে ম্যাচটি যে ফুটটববোদ্ধাদের আলাদা মনযোগে থাকবে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। প্রিয় প্রতিপক্ষ হিসেবে লিওনেল মেসি নিশ্চিতভাবে বার্নাব্যুতে স্বরণীয় ম্যাচটাই খেলতে চাইবেন।