১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৭ সাল। ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের দ্বিতীয় টেষ্টে, সিডনিতে ভিনু মানকড় স্বাগতিক ওপেনার বিল ব্রাউনকে বোলিং করার সময় রান আউট করে দেন। ব্যাটসম্যান নিজের ক্রিজের বাইরে থাকলে বোলার চাইলে রানআউট করতেই পারেন। কিন্তু মানকড়ের সেই আচরণকে এতোটাই অখেলোয়াড়সুলভ বিবেচনা করা হলো যে সেই থেকে এই আউটের আনঅফিসিয়াল নাম দেয়া হলো ‘মানকাডিং’!
ক্রিকেটের আইনের অবৈধ কোন কাজ নয়। তবুও দীর্ঘকাল ধরে ভিনু মানকড় এক দায় বয়ে বেড়িয়েছেন। যেন ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটের একমাত্র অভদ্র লোক তিনিই। যিনি কিনা মাঠে করেছেন অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ। শুধু তাই নয়। এমন আচরণ করা হলো তাঁর সাথে যে তিনি ঘোরতর এক অপরাধ করে ফেলেছেন। এমনকি পরবর্তী সময়েও তাঁর পরিবারকে সহ্য করতে হয়েছে মানুষের আঁড়চোখ।
ভিনু মানকড় আর নেই। এমনকি তাঁর তিন ছেলের মধ্যে জীবিত রয়েছেন কেবল রাহুল মানকড়। মানকড় পরিবারের উপর আসা এমন বিরুপ দৃষ্টি রীতিমত এক মানসিক অত্যাচার। রাহুল মানকড় বেশ কয়েকবার বলেছেন যে এই ধরণের আউটের ক্ষেত্রে তাঁর বাবার নামটা সংযুক্ত করা এবং সেটাকে অখেলোয়াড়সুলভ এক কাণ্ড বলে আখ্যায়িত করা তাঁর বাবার জন্যে বেশ অপমানজনক। বহুকাল এমন অপমান সহ্য করে এসেছেন মানকড় পরিবার।
অবশেষে ক্রিকেটের নীতিনির্ধারক, আইন প্রণয়নকারী সংস্থা মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সভায় এই মানকাডিং-কে শতভাগ বৈধ এক আইন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতরাং এখন থেকে যদি বোলার বল করার আগে বোলিং প্রান্তে থাকা ব্যাটারকে আউট করে দেন তাহলে তা নিয়ে নিন্দা করার কিংবা সমালোচনা করার আর অবকাশ থাকলো না। এ যেন এক স্বস্তির খবর মানকড় পরিবারের জন্যে।
তবে মানকড় পরিবারের সে স্বস্তির সময় নেই। রাহুল মানকড় বর্তমানে যুক্তরাজ্যের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তবে রাহুল আইসিসির এমন নিয়ম পরিবর্তনে পর নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে রাহুল শুধু বলেছেন, ‘আমরা একটা বেদনাদায়ক সময় পার করেছি।’
তাছাড়া নিজের স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন তিনি। দিনকতক আগেই হার্ট অ্যাটাকের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। সুতরাং অবশেষে অপবাদ, অপমান ঘুচানোতে তাঁরা খুব একটা খুশি হতে পারছেন না।
সম্প্রতি মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব কর্তৃক ক্রিকেটের বেশকিছু আইন নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী মেনকাডিং এখন থেকে বিবেচিত হবে রানআউট হিসেবে। ৪১.১৬ আইন থেকে সরিয়ে মানকাডিংকে স্থান দেওয়া হয়েছে ৩৮ নম্বর আইনে। ৪১ নম্বর আইনে মূলত ক্রিকেটের সব ধরণের আনফেয়ার প্লে-গুলোকে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সেখান থেকে পূর্ণ বৈর্ধ এক আইনে পরিণত হলো এই মানকাডিং।
অথচ বিগত এক লম্বা সময় ধরে রাহুল মানকড় আইসিসি, এমসিসি এবং সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে চিঠি দিয়েছেন যেন এই মানকাডিং-কে বৈর্ধ করার জন্যে। তিনি আরো বলেন, ‘এই ধরণের আউট ক্রিকেটের স্পিরিটকে কোনভাবেই কলুষিত করে না। বরং এই যে বল টেম্পারিং, বাউন্স খেয়েও ক্যাচ ধরার মতো কাণ্ড ক্রিকেটকে কলুষিত করে। আর এটা তো নিয়মমাফিক হওয়া একটা ঘটনা। এটাকে কেন একটি ঘৃণিত কাজ বলেই গন্য করা হবে?’
তবে সব সংগ্রাম ও মানসিক দৈন্যতার অবসান ঘটলো ৪৭ টি প্রথম শ্রেণি ম্যাচ খেলা রাহুল মানকড়ের। এখন হয়ত আর নিজেকে অপরাধীর ছেলে বলে মনে হবে না তাঁর। আঁড়চোখেও তাকাবে না কেউ তাঁদের পরিবারের দিকে।