এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের নিউক্লিয়াস হয়ে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপটা মূলত সাজানো হতো তাঁকে কেন্দ্র করেই। মুশফিকুর রহিম ছিলেন ব্যাট হাতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সেনানী। তবে গত এক বছরে যেন সেই চিত্র যেন একেবারেই উল্টে গেল। এই মুহূর্তে বরং বাংলাদেশের পরিকল্পনায় বড় একটা বাঁধা সেই মুশফিকুর রহিমই।
টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি মোটামুটি তিন ফরম্যাটেই এখন কমবেশি এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। কেননা গত দুই বছরে বাংলাদেশের হয়ে মুশফিকের ব্যাট যেন একেবারেই মলিন। তিন ফরম্যাট মিলিয়েই গত দুই বছরে মুশফিকের ব্যাট সেঞ্চুরি ছুঁয়েছে মাত্র একবার। এছাড়া ভালো ইনিংসও এসেছে হাতে গোনা দুই একবার।
টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে শুরু করা যাক। এই বয়সে এসে এবং মুশফিক যে ধরনের ব্যাটসম্যান তাতে তাঁর এই ফরম্যাটটাতেই সবচেয়ে ভালো করার কথা। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্চে উল্টো চিত্র। সাদা পোশাকের ক্রিকেটেও একেবারেই মলিন মুশফিকুর রহিম।
২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মুশফিকুর রহিম মোট ১০ টি টেস্ট খেলেছেন। সেখানে মুশফিক হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মাত্র তিনবার, নেই একটিও সেঞ্চুরি। এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯১ রানের ইনিংস এসেছে গতবছর পাকিস্তানের বিপক্ষে।
ফলে মুশফিক আসলে যে কারণে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে অনেক বেশি জরুরি ছিলেন সেটা এখন আর তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা। খুব বড় ইনিংস তো না-ই, এমনকি হাফ সেঞ্চুরির দেখাও পাচ্ছেন খুব সামান্যই। ফলে মিডল অর্ডারে মুশফিকের ব্যাটিং বাংলাদেশকে স্বস্তি দিতে পারছেনা।
অথচ টেস্ট দলে লিটনের মত ইনফর্ম ব্যাটসম্যানকে ব্যাট করতে হচ্ছে ছয়-সাতে। টিম ম্যানেজম্যান্ট চাইলেও তাঁকে উপরে খেলাতে পারছেনা মুশফিককে জায়গা দিতে গিয়ে। ওদিকে লিটন শেষ দিকে নেমে ফর্মে থাকলেও বড় ইনিংস খেলার সঙ্গী পাচ্ছেন না। ফলে লিটনকেও ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারছেনা বাংলাদেশ। এছাড়া ব্যাটসম্যান মিরাজ গত একবছরে এমন কিছু ইনিংস খেলেছেন যে তিনিও আরেকটু উপরে খেলার দাবি রাখেন। বাইশ গজে তাঁকেও আরেকটু বেশি সময় দেয়া উচিৎ।
ফলে মুশফিক নিজে তো পারছেনই না এরপর আবার ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানদের নিচে খেলতে হচ্ছে তাঁর কারণেই। একইচিত্র অন্য ফরম্যাট গুলোতেও। ওয়ানডে ক্রিকেটেই গত দুই বছরে মুশফিক তুলনামূলক ভালো পারফর্ম করছেন। ২০২১ সাল থেকে এই ফরম্যাটে ১৫ ম্যাচ খেলা মুশফিকের ঝুলিতে আছে একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরি।
তবে এই ফরম্যাটেও মুশফিকের ভালো ইনিংস গুলো আসছে অনেকদিন পরপর। যেমন গত ছয় ইনিংসে তাঁর ঝুলিতে হাফ সেঞ্চুরি মাত্র একটি। সেটি এসেছিল চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে। এদিকে এই ফরম্যাটেও আফিফ ব্যাট করছেন সাতে। সেখানে ব্যাট করেও তিনি প্রমাণ করেছেন একটু সময় পেলেই তিনি বড় ইনিংস খেলতে পারেন। এছাড়া ইয়াসির রাব্বির মত ক্রিকেটাররাও পারফর্ম করতে শুরু করেছেন।
তবে এখন প্রশ্ন হতে পারে মুশফিক তো একেবারে খারাপ করছেন না এই ফরম্যাটে? এখন আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা কী ৩৫ বছর বয়সী মুশফিকের পিছনে বিনিয়োগ করবো নাকি আফিফ, রাব্বিদের পিছনে।
ওদিকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনাটা অনেকদিন ধরেই। এতদিন আলোচনাটা ছিল এই ফরম্যাটে তাঁর স্ট্রাইকরেট নিয়ে। যেমন গত বছর যে ১৩ টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন সেখানে তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ৯০ ছুঁই ছুঁই। এছাড়া ২০২১ সাল থেকে খেলা শেষ ১৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর হাফ সেঞ্চুরি মাত্র একটা। এই ফরম্যাটেও মুশফিকের উপর আস্থা রাখা হবে নাকি আফিফদের প্রমোশন দেয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।
এই সিদ্ধান্তগুলো কঠিন তবে দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে কিংবা তরুণদের উঠে আসতে হলে আজ নাহয় কাল নিতেই হবে। তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মর্তুজাদের মত ক্রিকেটারদের বেলায়ও আমরা সিদ্ধান্ত গুলো নিয়েছি তবে অনেক জল ঘোলা করে। তামিমের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট না খেলাটা যেমন এখনো ঠিক পরিষ্কার নয়। এতে আসলে দেশের ক্রিকেটের ক্ষতি এবং সিনিয়র ক্রিকেটারদের সম্মানহানি দুটোই হয়।