তিনি ৮৯ আর ৯০ তম শতরান করেছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্টে, ৭ দিনের ব্যবধানে। ১৭ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে চট্টগ্রামে অপরাজিত ১০৫ আর ২৪ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মিরপুরে অপরাজিত ১৪৩, যথাক্রমে।
তিনি ৯১ নম্বর শতরান করেছিলেন ৯০ নম্বরের ১৩ দিন পরে, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে নাগপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে ১০০ রান। এর ৮ দিন পরে কলকাতায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখের ১০৬ রান ছিল তার ৯২ নম্বর শতরান।
তার ৯৩ নম্বর শতরান এসেছিল ৯২ নম্বরের ১০ দিন পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে, গোয়ালিয়র ওডিআই-তে।সেটাই ছিল (অপরাজিত ২০০) ওডিআই-তে যে কোন ব্যাটারের প্রথম ২০০ রান।তার বয়েস তখন ২ মাস কম ৩৭ বছর। এবং তখন শেষ ৫টি শতরান করতে তার লেগেছিল ৩৮ দিন।
তিনি ৯৪ নম্বর শতরান (২০৩) করেছিলেন ৯৩ নম্বরের ১৫২ দিন পরে ২৬ জুলাই ২০১০ তারিখে, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কলম্বো টেস্টে। তার ৯৫ নম্বর শতরান এসেছিল ৯ অক্টোবর ২০১০ তারিখে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গালুরু টেস্টে। তিনি রান করেছিলেন ২১৪। ৭৫ দিনের তফাৎ ছিল ৯৪ নম্বর আর ৯৫ নম্বর শতরানের মধ্যে।
তাঁর ৯৬ নম্বর শতরান এসেছিল এর ১০ মাস পরে, ১৬ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে, অপরাজিত ১১১। ৯৭ নম্বর শতরান তিনি পেয়েছিলেন এর ১৭ দিন পরে, ২ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে, সেটা ছিল কেপটাউন টেস্টের ১৪৬।
তিনি ৯৮ নম্বর শতরান পেতে নিয়েছিলেন আরো ৫৬ দিন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ২০১১র বিশ্বকাপ ম্যাচে বেঙ্গালুরুতে, রান করেছিলেন ১২০। ৯৯ নম্বর শতরান এসেছিল এর মাত্র ১৩ দিন পরে, ১২ মার্চ ২০১১ তারিখে, ওই বিশ্বকাপেই নাগপুর ম্যাচে। প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, রান করেছিলেন ১১১।
২০১০ সালে ৭টি টেস্ট শতরান, একটি ওয়ানডে শতরান আর ২০১১তে ১টি টেস্ট শতরান, দু’টি ওডিআই শতরান বুঝিয়ে দেয় ওই সময়ে তার স্বপ্নের ফর্ম। তারপরে কালের নিয়মে তার ব্যাটে এসেছিল রানের ভাঁটা।
১০০ নম্বর শতরানটা আসতে সময় নিয়েছিল আরো ৩৬৯ দিন। বাকি সবই আসছিল, বড় রান, কম রান, ভাল স্ট্রোক, খারাপ স্ট্রোক, যেমন হয় সবার। ৩৮ পেরিয়ে গেছেন ততদিনে। অবশেষে তার ৩৯ হবার মাসখানেক আগে ১০০ নম্বর শতরানটা এসেছিল মিরপুর ওডিআই-তে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, ১৬ মার্চ ২০১২ তারিখে, রান করেছিলেন ১১৪।
তারপরেও আরো ১ বছর ৮ মাস খেলে আর কোন সেঞ্চুরি না করে যেদিন তিনি অবসরে গেলেন মুম্বাই টেস্ট খেলে, তখন আর মাসপাঁচেক বাকি ছিল তার ৪০ ছুঁয়ে ফেলতে।
২০১০, ২০১১, ২০১২ আর ২০১৩তে টেস্টে তার রান ছিল ১৫৬২ (১৪ ম্যাচ, ৭ শতরান), ৭৫৬ (৯ ম্যাচ, ১ শতরান), ৩৫৭ (৯ ম্যাচ, ০ শতরান) আর ২৭৬ (৬ ম্যাচ, ০ শতরান)। আর ২০১০, ২০১১ আর ২০১২তে ওডিআই-তে তার রান ছিল ২০৪ (২ ম্যাচ, ১ শতরান), ৫১৩ (১১ ম্যাচ, ২ শতরান) আর ৩১৫ (১০ ম্যাচ, ১ শতরান)। ২০১৩তে তিনি কোন ওডিআই খেলেননি।
৯৯ আর ১০০ নম্বর শতরানের মধ্যে ফারাকের ৩৬৯ দিন আর ১০০ নম্বরের পরের ১ বছর ৮ মাস কিন্তু তার জীবনও দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন কিছু ভারতবাসীই। কেউ ভোলেনা, কেউ ভোলে এসব। সেই সময় আজকের মত মুখব্যাদান করা মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়া, কোনটাই ছিলনা। তবু সে সময়ের তীব্র শচীনবিরোধিতার কথা খুব ভালো ভাবে বোঝা যাবে প্রথম ছবিটি দেখলে।২৪ বছরের ক্যারিয়ারের অনেকটাই কেটেছে তার এসব সহ্য করেই।
এত কিছু সহ্য করেও রান আর দেশের সম্মানকে পাখির চোখ করা শচীন ২০০টি টেস্ট আর ৪৬৩ টি ওডিআইতে করেছিলেন মোট ৩৪৩৪৭ রান আর একটি টি-টোয়েন্টিতে ১০ রান। যার মধ্যে ছিল ১০০টি শতরান আর ১৬৪টি অর্ধশতরানও। বলে ২০০টি উইকেটও তার নামেই লেখা আছে রেকর্ড খাতায়।
রেকর্ড খাতায় যা লেখা নেই তা হলো এখনো তার ফেলে আসা স্ট্রেট ড্রাইভগুলি সোজা রাখে ভারতবাসীকে, এখনো তার ফেলে আসা হুকগুলি মনে রেখে জীবনের বাউন্সার সামলায় ভারতীয় জনতা এবং এখনো তার ফেলে আসা ফ্লিকগুলি সম্বল করে দু:খকষ্টকে বাউন্ডারীতে পাঠায় ভারতীয় আমজনতা। সেই শচীনের পাশেই ছিল সিংহভাগ ভারতবাসীই। যাদের কথা বলা হয়েছে জয় গোস্বামীর কবিতায়।
কিছু রূপকথা আমৃত্যু সঙ্গ দেয়। আমার জীবনের তেমনই এক রূপকথার নায়ক শচীন রমেশ তেন্ডুলকার।