ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রান কিংবা সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও তাঁর দখলে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলে আসছেন প্রথম আসর থেকেই। কিন্তু সেই বিরাট কোহলি এখন ব্যাট হাতে একেবারে নিষ্প্রভ।
আইপিএলের এবারের আসরে একেবারেই ছন্দে নেই এই তারকা ব্যাটার। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটারের নিষ্প্রভতা মেনে নিতে পারছেন না সমর্থকরাও। আইপিএলে ২১৫ ম্যাচে প্রায় ৩৭ গড়ে ৬৪০২ রানের মালিক বিরাট। স্ট্রাইক রেট ১৩০। আইপিএল ইতিহাসের সেরা এই ব্যাটার এবারের আসরে টানা দুই ম্যাচে ফিরেছেন গোল্ডেন ডাকে।
সময়টা ভাল যাচ্ছে না। ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছুঁটিয়ে বেড়ানো সেই বিরাটের দেখা নেই। ক্যারিয়ারে ভাল সময় যেমন আসে তেমনি খারাপ সময়ও আসে। বছরের পর বছর ২২ গজ দাপিয়ে বেড়ানোর পর নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় পার করছেন বিরাট।
২০১৬ সালে ক্যারিয়ার সেরা মৌসুম পার করেছিলেন তিনি। সেই সময় থেকে পরবর্তী আসরগুলো বিরাটের পারফরম্যান্সে একটু নজর দেওয়া যাক –
২০১৬ – আইপিএল ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে এক মৌসুমে চার সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন বিরাট। ১৬ ম্যাচে ৮১.০৮ গড়ে করেন ৯৭৬ রান! চারবার ছিলেন নট আউট। সেবার ৩৮ ছক্কা হাঁকান বিরাট। বিরাটের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ব্যাঙ্গালুরু ফাইনালেও গেলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের কাছে হেরে যায় ৮ রানে।
২০১৭ – কাঁধের ইনজুরিতে আসরের প্রথম চার ম্যাচ মিস করেন। সেবার ১০ ম্যাচে খেলেন বিরাট। চার ফিফটিতে প্রায় ৩১ গড়ে করেন ৩০৮ রান। ওই আসরে ব্যাট হাতে কোনো ম্যাচেই অপরাজিত ছিলেন না বিরাট। সেবার প্লে অফেও যেতে পারেনি বিরাটের ব্যাঙ্গালুরু।
২০১৮ – আগের আসরের তুলনায় ২০১৮ মৌসুমটায় বেশ ভাল অবস্থানেই ছিলেন বিরাট। ১৪ ম্যাচে ৪৮ গড়ে লিগ পর্বে করেন ৫৩০ রান। তিনবার ছিলেন নট আউট, সর্বোচ্চ স্কোর ৯২। ওই আসরেও চার ফিফটির দেখা পান বিরাট। কিন্তু সেবারও প্লে অফে যেতে পারেনি ব্যাঙ্গালুরু।
২০১৯ – তিন আসর পর আবার ২০১৯ আসরে সেঞ্চুরির দেখা পান বিরাট। ১৪ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি সহ ৩৩ গড়ে করেন ৪৬৪ রান। তবে ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন মাত্র দুই ম্যাচে। ওই আসরেও প্লে অফে যেতে পারেনি ব্যাঙ্গালুরু।
২০২০ – এই আসরটা অনেকটাই যেন ২০১৮ আসরের পুনরাবৃত্তি। ১৫ ম্যাচে ৪২ গড়ে ৪৩৬ রান করেন বিরাট। দেখা পান তিন ফিফটির। চারবার ছিলেন অপরাজিত। এবার অবশ্য লিগ পর্ব পেরিয়ে প্লে অফে পৌঁছায় ব্যাঙ্গালুরু। তবে এলিমিনেটর ম্যাচে হায়দ্রাবাদের কাছে ৬ উইকেটে হেরে বাদ পড়ে বিরাটের দল।
২০২১ – ১৫ ম্যাচে করেন ৪০৫ রান। প্রায় ২৯ গড়ে ব্যাট করেন ওই আসরে। সর্বোচ্চ রান ৭২। ছিল তিন ফিফটিও। এবারও প্লে অফে পৌঁছে যায় ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু সেই একই হাল! এলিমিনেটরে এবার প্রতিপক্ষ ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। নাইটদের কাছে ৪ উইকেটে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় বিরাট বাহিনী।
২০২২ – এখন পর্যন্ত এবারের আসরে নয় ম্যাচে মাত্র ১৬ গড়ে করেছেন ১২৮ রান। সর্বোচ্চ স্কোর মাত্র ৪৮। এখন পর্যন্ত এবারের আসরে দেখা পাননি ফিফটির। এমনকি প্রথমবার পর পর দুই ম্যাচে গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়েছেন তিনি।
আইপিএলে ১৪ ইনিংস ধরে ফিফটির দেখা নেই বিরাটের। শেষবার গেল আসরে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলেছিলেন ৫১ রানের ইনিংস।
ফর্ম ইজ টেম্পরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট – যুগ যুগ ধরেই ক্রিকেটে এই প্রবাদ চলে আসছে ক্রিকেট মাঠে। বিরাটের জন্য ব্যাপারটা ভিন্ন নয়। তার ক্লাস নিয়ে কারও প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন একটাই তিনি কি চিরচেনা রূপে ফিরতে পারবেন? এখন পর্যন্ত ব্যাঙ্গালুরু বেশ ভালই করছে এই আসরে। প্রথম আট ম্যাচে পাঁচ জয়ের দেখা পেয়েছে দলটি। দেখা বিষয় টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচে ব্যাট হাতে ফর্মে ফিরতে পারেন কিনা বিরাট।