দ্য কিউরিয়াস কেস অব ‘চ্যাম্পিয়ন’ সোহান

জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ছিলেন সাদামাটা। উইকেটরক্ষক হিসেবে দুর্দান্ত হলেও ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সটা নিতান্তই সাধারণ। উইকেটকিপিং দিয়ে জাতীয় দলে টিকে থাকার আগের সেই সময়টাও এখন আর নেই। এত এত সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের ভীড়ে জাতীয় দলে নিজের জায়গা মেলাতে হলে পারফরম করতে হবে ব্যাটে-বলে। সেদিক থেকে জাতীয় দলে ব্যাট হাতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান। সুযোগ পেলেও সেই সুযোগের কিঞ্চিৎও তিনি লুফে নিতে পারেননি।

গ্লাভস নামক দস্তানা হাতে তিনি বাংলাদেশের সেরা উইকেটরক্ষক বলা চলে। কিন্তু ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সের ছিটেফোঁটাও নেই। ছিলেন সমালোচনার বৃত্তে। উইকেটের পেছনে হাতের সাথে সাথে মুখটা চললেও ব্যাটে ছিল না রানের দেখা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে গেল বছর ছিলেন নিয়মিত মুখ। ব্যর্থ হয়ে বাদ পড়লেন। তবে টেস্ট স্কোয়াডের সাথে ঘুরছেন দেশ-বিদেশ। লিটন দাস থাকায় একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন না। লিটনের যে উড়ন্ত ফর্মে তাতে সোহানের একাদশে সুযোগের সেই সম্ভাবনাও বেশ কম। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তিনি এক হতাশাই বলা চলে।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ভিন্ন সোহানের দেখা মিলল এবারের আসরের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগে (ডিপিএল)। শেখ জামালের হয়ে ডিপিএলের সুপার লিগে ৮১ রানের অনবদ্য এক ইনিংসে শিরোপা নিশ্চিত করেন সোহান। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের প্রথম শিরোপা। আর সেই শিরোপা জয়ে এবার ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফরম করেন নুরুল হাসান সোহান।

শিরোপা নিশ্চিতের ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে ২৩০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে মাত্র ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে শেখ জামাল। ঠিক সেই সময় ব্যাট হাতে ত্রাতা হয়ে আসেন সোহান। দলের চরম বিপর্যয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় সোহানের ব্যাট। খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলতে খেলেন ৮১ রানের হার না মানা এক ম্যাচজয়ী ইনিংস। সোহানের অনবদ্য ব্যাটিংয়েই প্রথমবার শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় শেখ জামাল।

একই চিত্র ছিল আগের ম্যাচেও। প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৮৬ রানেই দলের ৫ উইকেট নেই। ওই মূহুর্তে নেমে ৭১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দলকে শক্তিশালী সংগ্রহ এনে দেন সোহান। শেখ জামালের টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডারে সোহান ছাড়া কেউই সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি।

রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে ২৪৮ রান তাড়া করতে নেমেও একই দশা জামালের। মাত্র ৮১ রানে নেই দলের পাঁচ উইকেট। প্রায় নিশ্চিত হারের মুখে থাকা ম্যাচে ১১৮ বলে ১৩২ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে দলকে জয় এনে দেন সোহান। এর আগের ম্যাচেও গাজী গ্রুপের বিপক্ষে খেলেন ৭৩ রানের ইনিংস।

৮১*, ৭১, ১৩২*, ৭৩ – ডিপিএলে শেষ চার ম্যাচে ব্যাট হাতে সোহানের পারফরম্যান্স। এছাড়া সিটি ক্লাবের বিপক্ষে ২২ ও রূপগঞ্জের বিপক্ষে ৬৪ রানের একটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসও খেলেছেন তিনি।

৭ ইনিংস, ৪৬৮ রান। ১১৭ গড়, স্ট্রাইক রেট ৯০। ৩৭ চার ও ১১ ছক্কা।

বেশিরভাগ ইনিংসই সোহান খেলেছেন চাপের মুখে। জাতীয় দলে এখন ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবেই থাকছেন তিনি। তবে ডিপিএলের এমন ঝলমলে পারফরম্যান্সে নিশ্চয়ই আবার দেশের হয়ে খেলার হাতছানি দিচ্ছে।

জাতীয় দলের জার্সিতে গেল বছর খেলেছেন ২১ টি-টোয়েন্টি। মাত্র ১০.৬০ গড়ে ১০৭ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন মোটে ১২৮ রান। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট সোহানের হতশ্রী পারফরম্যান্সের চিত্র। এরপর থেকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে আর নিজের জায়গা খুঁজে পাননি তিনি। বেশ কয়েক ম্যাচেই ম্যাচ জিতিয়ে নায়ক হবার সুযোগটা ঠিক ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ লুফে নিতে পারেননি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। সম্ভাবনা জাগালেও ব্যর্থতার বোঝা নিয়েই বাদ পড়েছেন দল থেকে।

সেই ব্যর্থতা ঘুচিয়ে সফলতার আলো পেতে আবার জাতীয় দলে ফিরতে চান সোহান। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন নজরকাড়া পারফরম্যান্স। ডিপিএলকেই হয়ত ফেরার মঞ্চ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। সুযোগ পেয়ে করেছেন বাজিমাত। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে বরাবরই আলোচনা-সমালোচনা আছে। প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারিং, উইকেটের মান সব মিলিয়ে অনেকেই ডিপিএলের পারফরম্যান্সের মূল্য দিতে চান না। কিন্তু সোহান, সাব্বির, সৌম্যদের জন্য জাতীয় দলে ফিরতে হলে এই ঘরোয়া ক্রিকেটেই রানের ফোয়ারা ছোঁটাতে হবে।

আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিটা স্পষ্ট ছিল জাতীয় দলের জার্সিতে। তীব্র সমালোচনা আর হতশ্রী পারফরম্যান্সে অনেকটাই ব্যাকফুটে ছিলেন সোহান। তবে এবার যেন আবার আশা জাগিয়েছেন। চাপের মুখে ম্যাচ জেতাতে পারেন সেটাও প্রমাণ করেছেন। ব্যাট হাতে দেখা মিলেছেন আত্মবিশ্বাসী সোহানের। তবে, সোহান নিশ্চয়ই চাইবেন এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। অবশ্য জাতীয় দলে ফিরতে হলে এর বিকল্প আর নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link