আক্ষেপ, গৌরব আর স্বস্তি

গেল আসরে ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এরপর জাতীয় দলের সবুজ গালিচায় পা রাখতে খুব বেশি দেরি হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন। ওপেনিংয়ে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন লম্বা সময় ধরেই। ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় তারকাদের একজন রুতুরাজ গাইকড়। দুই আসর আগেও সেভাবে তিনি পরিচিতি পাননি। নিজের সামর্থ্য প্রমাণের জন্য ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) চেয়ে বড় মঞ্চ আর কি হতে পারে? এই আইপিএলই এখন জাতীয় দলের পথে যাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম।

এই মঞ্চেই বিশ্বসেরা তারকাদের সামনে নিজেকে প্রমাণ করে সবার নজরকেড়ে জাতীয় দলের সুযোগ পেয়েছিলেন গাইকড়। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শুরুটা অবশ্য ছিল সাদামাটা। নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। তবে জাতীয় দলে নিয়মিত মুখ হতে হলে অবশ্যই পারফরম করতে হবে; সেটাও বেশ ধারাবাহিক ভাবেই। ঘরোয়া ক্রিকেটের পাশাপাশি আইপিএলেও খেলতে হবে দুর্দান্ত সব ইনিংস। কারণ এই টুর্নামেন্টেই বিশ্বের তারকা ক্রিকেটাররা তাকিয়ে থাকে। যেকোনো ভাল পারফরম্যান্সই সাবেক থেকে বর্তমান সব ক্রিকেটারের নজর কাড়ে।

আইপিএলের মঞ্চে গেল আসরে নিজের সামর্থ্যের সবটা দিয়েই নামিদামি তারকা ব্যাটারদের পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন গাইকড়। তবে সেই ফর্মটা টেনে আনতে পারেননি এবারের আসরে। শুরু থেকেই ছিলেন একেবারে সাদামাটা। দেখা মিলছিলো না বড় ইনিংসের। দলের ভরাডুবির সাথে সাথে ওপেনিংয়ে ব্যর্থতার খোলস ছেড়ে বের হতে পারছিলেন না গাইকড়।

প্রথম আট ম্যাচে দলের জয় মাত্র দু’টিতে। গাইকড়ের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও হতশ্রী। আসরের শুরুটাই ডাক দিয়ে। এরপর প্রথম তিন ম্যাচে মোটে দুই রান! গুজরাটের বিপক্ষে ৪৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেললেও পরের ম্যাচেই মুম্বাইয়ের বিপক্ষে গোল্ডেন ডাক। ছন্দহীন গাইকড় ব্যাট হাতে আলোর দিশা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। গেল আসরে ব্যাট হাতে রান বন্যায় ভাসানো সেই গাইকড় এবার প্রথম আট ম্যাচে মাত্র এক ফিফটি করেন।

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন কিন্তু ভাগ্য যেন কিছুতেই সহায় হচ্ছিলেন না। তবে পরিশ্রমীদের থেকে স্রষ্টা মুখ ফিরিয়ে রাখেন না। সাফল্যের খোঁজে যারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যান স্রষ্টা তাকে ফেরান না। টানা ব্যর্থতার পর ঈশ্বর যেনো এবার মুখ তুলে তাকিয়েছেন গাইকড়ের দিকে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে খেলেছেন ৫৭ বলে ৯৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।

গাইকড়ের রানে ফেরার দিনেও আক্ষেপ কিংবা হতাশার কমতি নেই। মাত্র ১ রানের জন্য দেখা পাননি সেঞ্চুরির। ৬ ছক্কা, ৬ চারে ৫৭ বলে ৯৯ রানের ইনিংস শেষে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র এক রান দূরে থাকতে থাঙ্গারাসু নটরাজনের বলে ভুবনেশ্বর কুমারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন গাইকড়।

দুর্দান্ত এক ইনিংস রূপ নিলো আক্ষেপে। আইপিএল ইতিহাসে মাত্র চার ব্যাটার আউট হয়েছে ৯৯ রানে। বিরাট কোহলি, ক্রিস গেইল, ঈশান কিষাণ, পৃথ্বী শ’য়ের পর পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে ৯৯ রানে আউট হন গাইকড়।

অবশ্য এই ইনিংসের মধ্যে দিয়ে আরেকটি গৌরবময় রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন তিনি। মাত্র ৩১ ইনিংসে আইপিএল ক্যারিয়ার হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার মাধ্যমে আইপিএল ইতিহাসে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ডে যৌথভাবে কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের পাশে অবস্থান করছেন গাইকড়।

আসরের মাঝ পথেই চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক বদল। জাদেজার দায়িত্ব আবার ধোনির কাছে। অধিনায়কের সাথে সাথে বদলালো দলের ভাগ্য। ধোনির হাত ধরেই দল পেল তৃতীয় জয়ের দেখা। আর এই ম্যাচের মধ্যে দিয়ে রানেও ফিরলেন গাইকড়। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিটা হয়ত পূরণ করে ফেলেছেন। আসরের বাকি অংশটায় নিশ্চয়ই তিনি চাইবেন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link