গ্যারেথ বেল: ফ্লপ নাকি ভ্রান্ত রিয়াল গ্রেট!

কাতালান ডিফেন্ডার মার্ক বার্ত্রাকে রীতিমত লজ্জার সাগরে ভাসিয়ে তিনি ছুটেছিলেন চিতা বাঘের মত। বার্ত্রা যেন দেখলেন সাদা বিদ্যুৎ ছুটে গেল। ব্যাস! তারপর গোলকিপারকে বোকা বানাতেও খুব বেশি সময় নেননি। এমন কতবার যে তিনি মাদ্রিদ সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়েছেন তার তো হিসেব নেই। তবুও তিনি যেন এখন মাদ্রিস্তাদের ‘চোখের বালি’।

ম্যাচের যখন ১-১ সমতা তখন মাঠে নামেন তিনি। মাত্র দুই মিনিটের মাথায় এক দুর্দান্ত বাই-সাইকেল শট। আর তাতেই ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। না সেখানেই শেষ না। ৮৩ মিনিটে ডি-বক্সের বেশ বাইরে থেকে জোড়ালো বাম পায়ের শট। প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকের ভুল, আর তাতেই তার দ্বিতীয় গোল। ব্যাস! বদলি নেমেই শিরোপা জয়ের নায়ক গ্যারেথ বেল।

শুধু কি ২০১৮ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে করা এই দুই গোল? না আরও কত নান্দনিক গোলের সৃষ্টিশীল কারিগর গ্যারেথ বেল তার হিসেব নেই। অন্তত রিয়াল মাদ্রিদের শুভ্র জার্সিতে তিনি মোটেও মলিন নন। প্রথম মৌসুমেই কোপা দেল রে টুর্নামেন্টের ফাইনালেই তো তিনি মাদ্রিদ জার্সিতে সবচেয়ে ‘আইকনিক’ গোলটির মালিক বনে গিয়েছিলেন। তাও আবার গোলখানা ছিল মাদ্রিদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলনার বিপক্ষে।

কাতালান ডিফেন্ডার মার্ক বার্ত্রাকে রীতিমত লজ্জার সাগরে ভাসিয়ে তিনি ছুটেছিলেন চিতা বাঘের মত। বার্ত্রা যেন দেখলেন সাদা বিদ্যুৎ ছুটে গেল। ব্যাস! তারপর গোলকিপারকে বোকা বানাতেও খুব বেশি সময় নেননি। এমন কতবার যে তিনি মাদ্রিদ সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়েছেন তার তো হিসেব নেই। তবুও তিনি যেন এখন মাদ্রিস্তাদের ‘চোখের বালি’।

অবশ্য এই বিষয়টা একেবারে শুরু থেকেই সহ্য করতে হয়েছে গ্যারেথ বেলকে। ২০১৩ গ্রীষ্মকালীন দলবদলে তিনি মাদ্রিদে আসেন রেকর্ড পরিমাণ ট্রান্সফার ফি-র বিনিময়ে। ১০০ মিলিয়ন ইউরো তার পেছনে খরচ করেছিল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। তবে মাদ্রিদ সমর্থকদের কাছে খুব একটা আপন কখনোই হতে পারেননি বেল। নেইমারকে কিনতে না পারার একটা চাপা ক্ষোভ নিশ্চয়ই ছিল।

তবে সেখানটা থেকে ক্রমেই যেন পরিত্রাণ পেতে শুরু করেছিলেন। বেল, বেনজেমা আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নিয়ে গড়া আক্রমণ ত্রয়ী বহুল পরিচিতি লাভ করে ‘বিবিসি’ নামে। কিন্তু বেল তবুও যেন খানিকটা অনাদরই পেয়ে গেলেন। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছরে যেন সে অনাদরের মাত্রা হয়েছে আরও তীব্র। এর পেছনে অবশ্য স্প্যানিশ গনমাধ্যমকে দায়ী করা যেতে পারে।

আর এই যে মাঠের মধ্যে নিজেদের খেলোয়াড়কে দুয়োধ্বনি দেওয়ার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৯ সালে।  তার দেশ ওয়েলস ২০২০ ইউরোর টিকিট কাটার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেল একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘ওয়েলস, গলফ, মাদ্রিদ’। ব্যাস, স্প্যানিশ গনমাধ্যমে লেগে পড়ে বেলে বিপক্ষে। তাদের মতে, বেলের প্রাধান্যের তালিকায় মাদ্রিদের অবস্থান তৃতীয়তে। সেই প্রোপাগান্ডা থেকেই সবচেয়ে অপ্রিয় হয়ে উঠলেন বেল।

অথচ এই যে সদ্যই জেতা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ছাড়াও আরও চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন বেল। এর মধ্যে দুইটিতে সরাসরি ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাছাড়া লা-লিগা, কোপা দেলরেও জিততে তিনি সহয়তা করেছিলেন মাদ্রিদকে। শুধু তাই নয় রোনালদো লিমার মত কিংবদন্তি ফুটবলারের থেকেও তার গোল সংখ্যা বেশি। মাদ্রিদ জার্সিতে যেখানে রোনালদো লিমার গোল ১০৪ সেখানে বেলের গোল ১০৬।

ইনজুরি বাগড়া না দিলে হয়ত এই গোলের সংখ্যাটা আরও বেশ খানিকটা বাড়িয়ে নিতে পারতেন তিনি। তবে তা আর হল না। তাছাড়া জিনেদিন জিদানের সময়ে ফিট থাকার পরও তাকে শুরুর একাদশেও খুব কম সময় দেখা গেছে। সেটাও আরও একটা কারণ। চোখের আড়াল হওয়া মানেই তো মনের আড়াল হওয়া। এই কারণগুলো ছাড়াও বেল মাদ্রিদ সমর্থকদের কাছের একজন না হওয়ার পেছনে কাজ করেছে তার স্প্যানিশ ভাষায় কথা না বলাটাও।

সাম্প্রতিক সময়ে তিনি লা-লিগা ট্রফি প্যারেডেও যোগ দেননি। অবশ্য তিনি ইনজুরির কথা বলেছেন। তবে কট্টরপন্থী সমর্থকদের মতামত এসবই বাহানা। তিনি মাদ্রিদকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারেননি। তিনি রিয়াল মাদ্রিদের একজন হতে পারেননি। এই টানাপোড়েন নিয়ে আর যাই হোক ফুটবল খেলাটা আর চালিয়ে যাওয়া যায় না। তাই মাদ্রিদকে বিদায় জানাতে চলেছেন।

গ্যারেথ বেল প্রায় নয় বছরের একটা লম্বা সময় পার করে অবশেষে তুলে রাখবেন মাদ্রিদের তুষার জার্সি। হয়ত মাদ্রিদের ভক্তদের প্রিয় একজন হয়ে বিদায়টা হল না তার। তবে লোকে যাই বলুক, তিনি ছিলেন একজন রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি।

– গোল.কম অবলম্বনে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...