আগ্রাসনের দ্বিতীয় অধ্যায়

জীবনে খারাপ সময়গুলি নাকি সর্বদাই দুর্দান্ত সময়ের দিকে নিয়ে যায়। খারাপ সময়ে প্রয়োজন ধৈর্য্য আর ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা। মানুষের ক্যারিয়ার কিংবা মানব জীবনে সবাই ভাল-খারাপ সময় পার করে। কারো কারো ক্ষেত্রে খারাপ সময়টা দীর্ঘ, তো কারো ক্ষেত্রে স্বল্প। এই উত্থান-পতনের চ্যালেঞ্জিং রাস্তায় অবশ্য আলোর দিশা খুঁজে পেয়েছেন জনি বেয়ারস্টো।

খারাপ সময় পার করছিলেন। টেস্টে নিয়মিত সুযোগ পেলেও রঙিন জার্সির ফর্মটা টেনে আনতে পারেননি সাদা পোশাকে। বাদ পড়ার সম্ভাবনাও ছিল। ঠিক তখন-ই দলের কোচ হয়ে এলেন সাবেক ব্ল্যাকক্যাপস তারকা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।

যার কাছে টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টির আলাদা আলাদা কোনো সংজ্ঞা নেই। কৌশল বা লক্ষ্য বলতে তিনি একটা শব্দ-ই বোঝেন – আক্রমণ। রক্ষণাত্মক শব্দটাই হয়তো তাঁর অভিধানে নেই। তাই এটি আমলেও নেননি তিনি। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে গেছেন এই তারকা।

কোচ হিসেবেও নিজের কৌশলে কোনো পরিবর্তন আনবেন না সেটাই স্বাভাবিক। আর সেটা পরিলক্ষিত হলো নিজের প্রথম সিরিজে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দেখা মিললো এক ভিন্ন ইংল্যান্ড দলের। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মাঝেও আগ্রাসী ব্যাটিং করতে দেখা গেছে বেন স্টোকস, বেয়ারস্টোদের।

ম্যাককালাম আসায় যেন নতুন জীবন পেয়েছেন বেয়ারস্টো। মাঝে ব্যাট হাতে বেশ বাজে সময় পার করছিলেন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো। পর পর দুই ইনিংসে ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ে করেন দুই সেঞ্চুরি। টেস্টেও ঠিক স্বভাবসুলভ বেয়ারস্টোর দেখা মিললো। এমনিতেই তিনি আগ্রাসী ব্যাটিং করতে পছন্দ করেন, কোচের কাছ থেকেও নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং ধরে রাখতে হয়তো পেয়েছেন পূর্ণ স্বাধীনতা। আর তাতেই বাজিমাত করেছেন এই ইংলিশ তারকা।

মাত্র ৫৫ রানে দলের ৬ উইকেট নেই। এমন মুখ থুবড়ে পড়ার পর উইকেটে টিকে থাকাই তো বড় চ্যালেঞ্জ। তাসের ঘরের মত যেখানে ভেঙে পড়েছে ব্যাটিং শিবির, সেখানে মাটি কামড়ে পড়ে থাকাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেখানেও কৌশল কিংবা লক্ষ থেকে সরে আসেননি বেয়ারস্টো। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েও করেছেন পালটা আক্রমণ।

মারকাটারি ব্যাটিংয়ে হেডিংলিতে তুলে নিয়েছেন দাপুটে এক সেঞ্চুরি। দলের বাকিরা যেখানে দাড়াতেই পারেনি সেখানে অভিষিক্ত জেমি ওভারটনকে নিয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন বেয়ারস্টো। কন্ডিশন কিংবা প্রতিপক্ষের বোলারদের তোয়াক্কা না করে নিজের স্বভাবসুলভ আগ্রাসী ব্যাটিং করে গেছেন এই ইংলিশ তারকা।

ট্রেন্ট বোল্টকে অফ সাইডে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯৫ বলে তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। আগের টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ট্রেন্ট ব্রিজে ৯২ বলে ১৩৬ রানের এক ম্যাচজয়ী ইনিংসের পর এবার হেডিংলিতে দেখা পেলেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির।

টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন সেটা নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর টানা আট ইনিংসে ছিলেন ব্যর্থতার বৃত্তে। সেখান থেকে দাপুটে এক প্রত্যাবর্তন। নতুন কোচের অধীনে আগ্রাসী বেয়ারস্টোর বিধ্বংসী রূপের দেখা।

বলা হয়, আপনার খারাপ সময় না থাকলে, আপনি ভাল সময়কে উপলব্ধি করতে পারবেন না। খারাপ সময় কাটিয়ে এখন ক্যারিয়ারে ভাল সময়টাই উপভোগ করছেন বেয়ারস্টো। এই ফর্ম আর ধারাবাহিকতা থাকলে হয়তো সাদা পোশাকে অপ্রতিরোধ্য শব্দটা নিজের নামের পাশে জুড়ে দিবেন অল্প সময়ের ব্যবধানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link