গত কয়েকদিন ধরেই খবরের শিরোনাম হচ্ছে সিলেট। তবে সেটা সুখকর কোন কারণে নয়। বানের জলে ভেসে গিয়েছে সিলেটের অসংখ্য মানুয়াষের বসত-বাটি। ভেসে তো গিয়েছিলেন সিলেটের এই সন্তানও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তীব্র স্রোতে কোনভাবেই তাল মেলাতে পারছিলেন না। এইতো মাস ছয়েক আগেও খালেদ আহমেদ মানেই শুধু ভেসে যাওয়ার অপেক্ষা। কিন্তু তিনিই জ্বলে উঠলেন বহ্নি হয়ে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সিলেট অনেকদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে,। কেননা টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের যে একোটা বিপ্লব হয়েছে সেটার পাওয়ার হাউজ সিলেট। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমে পথটা দেখিয়েছিলেন আবু জায়েদ রাহি। এরপর এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ কিংবা রেজাউর রহমান রাজা সবাই এই সিলেটের সন্তান।
তবে খালেদের আহমেদের গল্পটা ছিল একেবারেই আলাদা। সিলেটে আর দশটা ছেলের মত টেপ টেনিস বলে ক্রিকেট খেলে সময় কাটছিল তাঁর। বন্ধুদের সাথে মজার ছলে ক্রিকেট খেলাটাকে বেশিদিন চালিয়ে যেতে দেননি খালেদেরই বন্ধু ইমরান আলী এনাম। তিনি খালেদকে নিয়ে যান সিলেটের রানা মিয়ার ক্রিকেট একাডেমিতে। সেখানেই শুরু হয় খালেদের আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট দীক্ষা।
টেপ টেনিসের মত ক্রিকেট বলেও নিজেকে খানিক প্রমাণ করতে শুরু করলেন। কয়েকবছর বাদে ২০১৫ সালে সিলেট ডিভিশন দলেও সুযোগ পেয়ে যান। সেখানে সিলেটের আরেক পেসার এবাদত হোসেনের সাথে বোলিং জুটি গড়ে তোলেন খালেদ আহমেদ। বছর ছয়েক বাদে এসেও এখন দুইজন কাজটা করছেন বাংলাদেশের হয়ে। সিলেটের ক্রিকেটের জন্য গর্বের কারণই বটে।
জাতীয় দলে অবশ্য এসেছেন অনেক আগেই। সেই ২০১৮ সালে। কিন্তু গত চার বছরে তাঁর অর্জনের খাতা একেবারে শূন্যই ছিল। এমনকি প্রথম আন্তর্জাতি উইকেট পেতে তাঁর অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় ৩ বছর। দিনের হিসেবে ঠিক ১১২০ দিন পর প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উইকেটের দেখা পান গতবছর পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেটাও আবার তুলে নিয়েছিলেন বাবর আজমের উইকেট।
তবে এরপরই আসলে খালেদের জড়তাটা কেটে যায়। তিনি যে ভেসে যাওয়ার লোক নন সেটা বোঝাতে শুরু করেন। ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এরপরের টেস্টে প্রথম ইনিংসেই নেন ৪ উইকেট। পরে টেস্টে আবারো চার উইকেট খালেদের ঝুলিতে। তবে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজটা খুব একটা ভালো কাটেনি। ছিলেন উইকেটশূন্য।
তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশনে আবারো খালেদের জ্বলে ওঠা। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তো তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্নই দেখাচ্ছিলেন। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারণে খুব্ বেশি কিছু করতে পারেননি। দ্বিতীয় টেস্টেও আবার সেখান থেকেই শুরু করেছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ রানের পাহাড় করলেও খালেদ ছিলেন অনবদ্য। তাঁর গতি, নিয়ন্ত্রণ, সিমিং পজিশন দিয়ে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিয়েছেন। ক্যারিয়ারে প্রথমাবারের মত তুলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। ৩১.৩ ওভার বোলিং করে ১০৬ রান করে পেলেন পাঁচ উইকেট।
এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেই নিজের বোলিং দিয়ে জাতটা চেনাচ্ছিলেন খালেদ। শিধু গতির উপর ভরসা করে বসে থাকেননি। টেস্ট ক্রিকেটে সফল হবার জন্য নিজের বোলিংয়ে বৈচিত্র নিয়ে আসেন। কাটার কিংবা ওবল সিমে বোলিং এখন তাঁর সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তবে খালেদের নিয়ন্ত্রণ সত্যিই বড় স্বপ্ন দেখায়।
খালেদদের উঠে আসার পিছনে বড় অবদান আছে সিলেটের আবহাওয়া ও উইকেটের। এছাড়া খালেদ, এবাদত, রাজাদের জাতীয় দল পর্যন্ত আসার রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন সিলেট থেকেই উঠে আসা আরেক পেসার নাজমুল হোসেন। সাবেক এই পেস বোলার সিলেটের এই পেসারদের নিয়ে কাজ করেছেন সবচেয়ে বেশি। এখন অবশ্য তিনি বাংলাদেশ টাইগার্সের পেস বোলিং কোচ হিসেবেও কাজ করছেন।
সিলেটের এই একঝাক পেসারদের নিয়ে তাঁদের কোচ নাজমুল হোসেন বলছিলেন,’ ‘গত কয়েক বছর ধরে আমাদের এখানকার উইকেট খুব ভালো হচ্ছে। জাতীয় লিগের উইকেট তো বটেই, স্থানীয় খেলার উইকেটও খুব ভালো হয়। ছেলেরা বাউন্স পায়, গতি দিতে পারে। ফলে উৎসাহ পায়। এছাড়া আমরা যা শিখেছি, সেটা ওদের বলার চেষ্টা করি। এরা খুব ভালো শিখতে পারে। সহজে কথা ধরতে পারে। এদের উঠে আসার এটাও একটা কারণ।’