শিরোপা জয়ের ফরাসি দূর্গ

ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে রক্ষণে পায়ে লেগে ডিফ্ল্রেক্ট হওয়া বল। গতি ছিল না। তবু হাওয়ায় ভেসে জালের নিশানা খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টা। ব্যবধান তখন ২-১।

একটা গোল হয়ে যাওয়া মানেই ফাইনালে ওঠার রাস্তাটা আরেকটু লম্বা হবে। তবে না। অতন্দ্র প্রহরী ফ্যাবিয়ান বার্থেজ সদা সতর্ক। তিনি আলতো ঘুষিতে বল গোললাইনের বাইরে ফেলে দিলেন। এর খানিকক্ষণ বাদেই রেফারির বাশি।

আর ফ্রান্স পৌঁছে গেল স্বপ্নের ফাইনালে। আর ১৯৯৮ ফাইনালে কি ঘটেছিল তা তো সবারই জানা। ফ্রান্সের কাছে পাত্তাই পায়নি ব্রাজিল। ফ্রান্সের গোলবার আগলে রাখা ফ্যাবিয়ান জন্মেছিলেন ২৮ জুন ১৯৭১ সালে। কেশহীন মস্তক পরবর্তীতে হয়েছিল ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক।

ফুটবল ক্যারিয়ারটা কেটেছে তিনকাঠের নিচেই। তবে তিনি চাইতেন কোন একদিন পুরো মাঠ চষে বেড়াতে। সে সুযোগ তাঁকে দিয়েছিলেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতার বছর দুই বাদে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। রেড ডেভিলদের হয়ে ৯২ খানা ম্যাচে তিনি নেমেছিলেন মাঠে, দস্তানা হাতে।

তবে ২০০১-০২ মৌসুম শুরুর আগে এক প্রীতি ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বেশ শক্ত-পোক্ত অবস্থানেই ছিল। সাত গোল মত করেছিল রেড ডেভিলরা। সে ম্যাচেই বার্থেজের ইচ্ছে পূরণ হয়।

তিনি খেলার সুযোগ পান আক্রমণভাগে। উইংগার হিসেবে তাঁকে মাঠে খেলতে নামান স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। বদলি খেলোয়াড় হিসেবে আক্রমণ ভাগে খেলতে নেমেই তিনি অবাক করে দেন উপস্থিত সবাইকেই।

নেমেই নাটমেগের ফাঁদে ফেলেন প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে। তাছাড়া তাঁর ফুটবলীয় দক্ষতা ছিল বেশ প্রশংসনীয়। গোলবারের সামনে ক্যারিয়ার কাটিয়ে দিলেও বল পায়ে তাঁর দক্ষতাও ছিল বেশ।

আজকের দিনে জার্মানির ম্যানুয়েল নয়্যার যখন মিডফিল্ড অবধি উঠে যান, এডারসনরা দূরপাল্লার নিখুঁত পাস দেন তা আমাদের পুলকিত করে। তবে প্রায় দুই যুগের আগে থেকে সে কাজটা করে আসছেন বার্থেজ।

পেশাদার ক্যারিয়ার তিনি শুরু করেছিলেন ফ্রেঞ্চ ক্লাব টুলুজ এফসির হয়ে। সেখান থেকেই উত্থানের শুরু। তবে আরেক ফ্রেঞ্চ ক্লাব মার্শেইর হয়েই মূলত নিজেকে মেলে ধরার সুযোগটুকু পেয়েছিলেন বার্থেজ।

আর ঠিক সে সময়েই তিনি নিজেকে বিশ্বের সেরা সব গোলরক্ষকদের সাথে তুলনা করবার মত করেই গড়ে তুলতে শুরু করেন। যার ধারাবাহিকতায় ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা গোলরক্ষকদের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন বার্থেজ।

গোলবারের সামনে বার্থেজ ছিলেন প্রচণ্ডরকম আত্মবিশ্বাসী। এরিয়াল বল নিজের তালুবন্দি করতে তিনি যেন কোন কিছুকেই পরোয়া করতেন না।

তাছাড়া তিনি ছিলেন সাহসী, ম্যাচের পরিস্থিতি পড়তে পারার দারুণ গুণও নিজের মধ্যে ধারণ করতেন বার্থেজ। তাইতো কোন প্রকার ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করতেন না। নিজের উপর ভরসা রেখে দলের স্বার্থে নিজেকে বিলীন করে দিতেন।

যার ফলশ্রুতিতে মার্শেইয়ের হয়ে তিনি জিতেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করা ছাড়াও তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে পর পর দুইবার প্রিমিয়ার লিগও জিতেছিলেন। নিজের অনবদ্য পারফরমেন্সের বদৌলতে ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকের পুরষ্কার বাগিয়ে নিয়েছিলেন বার্থেজ।

একটা পর্যায় দস্তানা তুলে রেখেছিলেন। তবে আবার ফিরেছিলেন। স্বদেশী ক্লাব নেন্তেসের হয়ে। ক্লাবটি বেশ ধুঁকছিল একজন অভিজ্ঞ গোলরক্ষকের অভাবে।

সে অভাবটা পূরণ করতেই বার্থেজ অবসর থেকে ফিরে আবার দস্তানা পড়ে দাঁড়িয়ে যান তিন কাঠের নিচে। এক মৌসুমে ১৬টি ম্যাচ খেলেছেন। আর দলে থাকা অন্য গোলরক্ষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতা।

ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর তিনি যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন কার রেসিং এর সাথে। সেখানেও তিনি বেশকিছু টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ফুটবলের মায়া ত্যাগ করা যে বড্ড কঠিন। ফ্যাবিয়ান বার্থেজ তাই ফিরে এলেন চেনা আয়তাকার মাঠে। এবার কোচ হয়ে। বাকিটা সময় নিশ্চয়ই কাটিয়ে দেবেন সবুজ ঘাসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link