বিশ্বের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে সফলতম ক্লাবগুলোর তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে স্প্যানিশ জায়ান্ট এফসি বার্সেলোনা। বিশ্বের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ট্রফি ক্যাবিনেট সম্পন্ন ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যেও একটি তারা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে কাতালান ক্লাবটি। গত কয়েক মৌসুম থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বারবার বিধ্বস্ত হয়েছে দলটি।
২০২১/২২ মৌসুমের শুরুতে দলের মূল তারকা লিওনেল মেসি ক্লাব ছাড়ার পর বার্সেলোনার পারফরম্যান্স আরো খারাপ হয়েছে। তবে এই টালমাটাল অবস্থার পিছনে সবচেয়ে বড় দায়টা ডিফেন্ডারদের। আক্রমণে মেম্ফিস ডিপাই, পিয়েরে এমরিক অবমায়েং কিংবা মিডফিল্ডে সার্জিও বুসকেটস, পেদ্রি-গাভিদের মত মানসম্মত খেলোয়াড় আছে বার্সেলোনার কিন্তু সে তুলনায় ডিফেন্স বেশ নড়বড়ে। আর তাই পরবর্তী মৌসুমে ভাল করার জন্য কিউলদের প্রথম টার্গেট শক্ত ডিফেন্স তৈরি করা।
মূলত কার্লোস পুয়োলের অবসর এবং জেরার্ড পিকের পড়তি ফর্মের কারনেই রক্ষন সামলানোর ক্ষেত্রে ভুগতে হচ্ছে বার্সেলোনাকে। এই দীর্ঘসময়ে ক্লাবটি স্যামুয়েল উমিতি, ক্লেমন্ত ল্যাঙলেটকে দলে ভেড়ালেও, তারা পারেনি ভরসার প্রতিদান দিতে। সবমিলিয়ে টেকসই কোন সমাধান না থাকায় বাধ্য হয়েই গড়পড়তা এইসব ডিফেন্ডারদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে কাতালানদের।
তবে আশার আলো দেখাচ্ছেন উরুগুয়ান তারকা রোনাল্ড আরাউহো। বার্সেলোনার রক্ষণভাগে বর্তমানে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় এই তরুন। তাছাড় সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় এই উরুগুয়ান আছেন সেরা ফর্মে। আগামীতে লম্বা একটা সময় দলের রক্ষনের নেতৃত্বের ব্যাটন যে আরাউহোর হাতে থাকবে সেটি একপ্রকার নিশ্চিতই।
এছাড়া আছেন স্প্যানিশ অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে। বয়সের ভারে গতি কমে গিয়েছে ঠিকই, তবে অভিজ্ঞতা আর টেকনিক দিয়ে দলকে সাহায্য করতে পারার সামর্থ্য রয়েছে এই বর্ষীয়ান সেন্টারব্যাকের। অবশ্য জেরার্ড পিকের উপর পুরো মৌসুম ভরসা রাখা যায় না, আর তাই বার্সার রক্ষনে প্রয়োজন নতুন সেনানী।
সেই লক্ষ্য পূরণের প্রথম ধাপ হিসেবে বার্সেলোনা এবার দলে ভিড়িয়েছে সাবেক চেলসি ডিফেন্ডার আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেনকে। চেলসির সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার পরেই এই ডিফেন্ডার ব্লাউগানা জার্সি গায়ে জড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। লন্ডনে লম্বা একটা সময় কাটানোর পরে চার বছরের চুক্তিতে কাতালোনিয়ায় আসতে যাচ্ছেন ২৬ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
একইসাথে আইভেরি কোস্টের তারকা ফ্র্যাঙ্ক কেসি আসছেন বার্সেলোনাতে। গত বছর এসি মিলানের হয়ে লিগ জেতার পর লা লিগার স্বাদ নিতে স্পেনে চলে এলেন তিনি। ২০২৬ সাল পর্যন্ত ন্যু ক্যাম্পে থাকার চুক্তি করেছেন ২৫ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার।
ফ্রি এজেন্ট হিসেবে আসলেও বার্সার স্পোর্টিং প্রজেক্টের ক্ষেত্রে ক্রিস্টেনসেন এবং কেসি দুইজনেরই রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। আর তাই এই দুই ফুটবলারের নামের পাশে ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর রিলিজ ক্লজ রাখা হয়েছে। এদের পাশাপাশি চেলসির মার্কোস অলোনসো এবং চিজার আজপিলিচুয়েতা এর বার্সেলোনায় যোগ দেয়া নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে।
প্লেয়ার কেনার পাশাপাশি দলের বেতন কাঠামো ঠিক রাখতে অপ্রয়োজনীয় কয়েকজন খেলোয়াড়কে ছেঁটে ফেলতে আগ্রহী ক্লাব ম্যানেজম্যান্ট। আপাতত ক্লেমন্ত লেংলেটের টটেনহ্যাম হটস্পারে যোগ দেয়ার জোরালো সম্ভবনা রয়েছে। স্যামুয়েল উমিতিকেও বিদায় বলার সুযোগ খুঁজছে ক্লাব কতৃপক্ষ।
সবকিছু মিলিয়ে বেশ সন্তোষজনক গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে বার্সেলোনা। ট্রান্সফার উইন্ডো ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে পারলে উত্তরণের একটা পথ পেয়েই যাবে বার্সা, তবে মূল কাজটা করতে হবে খেলোয়াড়দেরই। মাঠে পারফর্ম করতে না পারলে তারকাখ্যাতি দিয়ে তো শিরোপা জেতা যাবে না।
ক্লাব কিংবদন্তি জাভি হার্নান্দেজ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয়েছে বার্সেলোনার। মৌসুমের মাঝপথে এসেও যেভাবে জাভি দলকে গুছিয়ে নিয়েছেন তাতে নতুন মৌসুমে নতুন করে আশা দেখতেই পারে কিউলরা। দলের ডিফেন্সের পাশাপাশি আক্রমনভাগ সবকিছুতেই তো পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে বার্সেলোনা – ভাল কিছু প্রত্যাশা করতে সমস্যা কি আর!