এক সেঞ্চুরিতে রেকর্ড বইয়ে কাটাকুটি

খানিকটা খাটো লেন্থের বল। অফ স্ট্যাম্পের খানিক বাইরের এক লাইন ধরে অগ্রসর হচ্ছে। সপাটে ব্যাট চালালেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা রোহিত শর্মা। মাটি কামড়ে বল দ্রুত গতিতে ছুটে যায় ডিপ মিড উইকেট অঞ্চলের দিকে। আর ছুঁয়ে ফেলে সীমনারেখা। ব্যাস আরও এক সেঞ্চুরি রোহিতের ঝুলিতে।

কি এক রোমাঞ্চকর ফাইনাল উপহার দিয়েছিলেন ২০১৯ এর বিশ্বকাপ! শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড জিতে নিয়েছিল নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ। তবে সে বিশ্বকাপটা নিজের হাতে নিতে না পারার একটা আক্ষেপ হয়ত সারা জীবন তাড়া করবে রোহিত শর্মাকে। কি করেননি তিনি দলের জন্যে। ছিলেন আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

শুধু সেখানেই তো থেমে থাকেননি। তিনি যেন রেকর্ড গড়ার নেশায় মত্ত ছিলেন তিনি। আবার উল্টো চিত্রে বলা যেতে পারে তিনি মত্ত ছিলেন রেকর্ড ভাঙ্গার নেশায়। ২০১৯ এর বিশ্বকাপে তিনি ছুঁয়ে দেখেছিলেন এবং টপকে গিয়েছিলেন দুই কিংবদন্তির রেকর্ড। একই দিনে তিনি একদিকে ভেঙ্গেছিলেন লংকান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারার রেকর্ড। আর অন্যদিকে তিনি ছুঁয়ে দেখেছেন শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ড।

২০১৯ এর বিশ্বকাপের আগে এক বিশ্বকাপ আসরের সর্বোচ্চ চারটি সেঞ্চুরি করেছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা। সেটা তিনি করেছিলেন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। ঠিক তাঁর পরের আসরেই সে রেকর্ডে রোহিত শর্মার আঘাত। সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি দিয়েই তিনি বনে যান এক আসরে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক। সে আসরে মোট পাঁচখানা সেঞ্চুরি এসেছিল রোহিতের ব্যাট থেকে।

প্রথমটা তিনি করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সেটা ছিল ভীষণরকম মন্থর গতির এক সেঞ্চুরি। ১৪৪ বলে ১২২ রানের এক ইনিংস খেলেছিলেন রোহিত। ইংরেজি এক প্রবাদ আছে ‘স্লো আন্ড স্টেডি উইন্স দ্য রেস’। সেটাই বোধ হয় নিজের মধ্যে ধারণ করেছিলেন রোহিত শর্মা। এরপর তো রীতিমত পাগলা ঘোরা হয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন।

সে ছোটার মাত্রা যেন বেড়ে যায় চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানের বিপক্ষে। মাত্র ৮৭ বলেই তিনি তুলে নিয়েছিলেন শতক। এর আগে অবশ্য নিজের ক্যারিয়ারের দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন রোহিত শর্মা। এছাড়া তিনি সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটা এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে।

১১৩ বলে ১৪০ রানের দুরন্ত এক ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ লিগ ম্যাচ তাঁকে নিয়ে যায় অনন্য এক উচ্চতায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৯ স্ট্রাইকরেটের সে ইনিংসটা তাঁকে শচীন টেন্ডুলকারের রেখে যাওয়া মাইলফলক ছুঁতে। ওয়ান্ডে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ছয় খানা সেঞ্চুরির মালিক ‘লিটল মাস্টার’। আর সেই মাইলফলকে ভাগ বসিয়েছেন রোহিত।

২০১৯ সালে ছয় জুন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের সেঞ্চুরিটি রোহিতকে নিয়ে যায় কিংবদন্তিদের কাতারে। এই সময়ের সেরা ব্যাটারদের একজন রোহিত তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে তিনি পারফরম করে এটা যেন আরও এক দফা প্রমাণ করে দেন। মারকুটে এই ব্যাটার বরাবরই রানে থাকতে পছন্দ করেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে খানিকটা হোচট খেলেও তিনি তা পরে সামলে নেন।

সে বিশ্বকাপে রোহিত বিমুগ্ধ করেছিল গোটা পৃথিবীর দর্শকদের। পাঁচটি সেঞ্চুরি ছাড়াও একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন রোহিত। মোট ৬৪৮ রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তাঁর স্ট্রাইকরেট। তিনি প্রায় একশর কাছাকাছি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে গেছেন পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে।

তবে আক্ষেপ নিশ্চয়ই থেকে যায়। সেমিফাইনাল অবধি তিনি নিয়ে যেতে পেরেছিলেন তাঁর দলকে। ফাইনাল অবধিও যেতে পারেননি। শিরোপা জয়ের হাতছানি থাকলেও তা যেন চলে যায় কয়েক আলোকবর্ষ দূরে। সামনে আবারও একটি বিশ্বকাপ, বছর ঘুরলেই। সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা ভাল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন না রোহিত।

তবে ‘হিটম্যান’ রোহিত সবকিছু পিছনে ফেলে আবার নিশ্চয়ই বিধ্বংসী এক রুপে আবির্ভূত হবেন ২০২৩ এর বিশ্বকাপে। আবারও রানের বন্যা বইয়ে দিতে নিশ্চয়ই তিনি প্রস্তুতি নিয়েই হাজির হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link