বেন স্টোকসের অবসরের পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ব্যস্ত সূচি। ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আধিপত্যের কথাও উঠে এসেছে সেসব আলোচনায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চেয়ে এসব জমকালো টুর্নামেন্টের প্রতি আগ্রহ বেশি প্রায় সবার।
টাকার ঝনঝনানি শুনেই হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে নতুন করে দুইটি টি-টোয়েন্টি লিগ চালু হতে যাচ্ছে। তবে বার্ষিক ক্যালেন্ডারে সময় না থাকায় একই সাথে আয়োজিত হতে যাচ্ছে এই দুই টুর্নামেন্ট। শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়ার লিগ বিগ ব্যাশের সূচির সাথেও মিল আছে।
এবার এসব ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ নিয়ে ভিন্নরকম বিতর্কের জন্ম দিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। নিজ দেশের লিগ বিগ ব্যাশ নয়, তাঁর পছন্দ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফ্রাঞ্চাইজি লিগ।
ওয়ার্নারের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মত দিয়েছেন কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। একজন অজি ক্রিকেটারের বিগ ব্যাশের মুখোমুখি অবস্থান নেয়ার ব্যাপারটিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার জন্য ব্যবসায়িক আত্মহুতি বলে অভিগিতি করেন তিনি।
তবে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি গিলক্রিস্টের কাছে দ্বিতীয় ব্যাপার। প্রথমটি হচ্ছে দেশের সম্মান। নিজ দেশের কোন টি-টোয়েন্টি তারকা যদি ঘরোয়া লিগ না খেলে বিদেশে খেলতে যায় তবে সেটা দেশের জন্য বিব্রতকর বলেই মনে করেন সাবেক এই ক্রিকেটার।
গিলক্রিস্ট তাঁর বক্তব্যে ডেভিড ওয়ার্নারের নাম উল্লেখ করেছেন ঠিকই, তবে এই বামহাতি ব্যাটারের পাশাপাশি টেস্ট অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মিশেল স্টার্ক, মার্কাস স্টোয়িনিস, জস হ্যাজেলউডসহ অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়কেই উদ্দেশ্য করে বলেছেন কথাগুলো। সব মিলিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সামনে এমন একটি বিষয় তুলে ধরেছেন, যেদিকে গুরুত্বের সাথেই নজর দেয়া উচিত সংস্থাটির।
কিন্তু এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আসলে কি করতে পারে – শুধু তারা কেন, ভারত ছাড়া বিশ্বের আর কোন ক্রিকেট বোর্ড খেলোয়াড়দের ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? সম্ভবত এটি বলার অপেক্ষা রাখে না, যদি পুরো সমস্যাটি সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতিতে সমাধান করা না হয়, তবে একজন খেলোয়াড় বিদ্রোহও করতে পারে।
সবমিলিয়ে ফ্রাঞ্চাইজির প্রভাবে ক্রিকেটে যে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে তাতে ফুটবলের মত এই খেলাতেও ফ্রি এজেন্ট সংস্কৃতি সৃষ্টি হবে। এই অবস্থায় জাতীয় বোর্ডগুলোর যে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেটি প্রতিরোধের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া যায়।
প্রথমত দেশের মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পেলে ভিনদেশি লিগে খেলার প্রবল আগ্রহ অনেকটা কমে আসবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় চুক্তিতে শর্তারোপ করা যেতে পারে যে, বছরের নির্দিষ্ট সময় অবশ্যই তাকে দেশের জাতীয় এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে হবে। এই সব কিছুর বিকল্প হিসেবে সবাইকে ফুটবলের মত ফ্রি এজেন্ট করে দেয়া যেতে পারে। সবাই লিগগুলোতে খেলবে এবং সেখান থেকে বিরতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিবে।
কিন্তু আবার এই তিনটি পদক্ষেপেরই প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ভিনদেশি লিগ এড়াতে চাইলে বোর্ডগুলোকে অনেক বেশি খেলোয়াড়কে চুক্তির আওতায় আনতে হবে এবং বাড়তি বেতনও দিতে হবে। তাছাড়া চুক্তিতে নির্দিষ্ট সময় আবশ্যক করে দিলে বিদ্রোহের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সবশেষে ফুটবলের মত নিয়ম করলে ক্রিকেটের এতদিনের যে ভিত্তি সেটি ধ্বংস হয়ে যাবে – এমন ধারণাও করছেন অনেকে।
এখন পর্যন্ত তাই কোন সুষ্ঠু সমাধান নেই বললেই চলে। কিন্তু ক্রিকেট মিশে আছে অনেক মানুষের হৃদয়ে। এখন পর্যন্ত ১০৮টি দেশ আইসিসির সদস্যপদ লাভ করেছে। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। তাই ক্রিকেট বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার রীতি বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। এবং এজন্য উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটার বাস্তবায়ন করাটা সংশ্লিষ্টদের জন্য আবশ্যক।