রাত পোহালেই বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ মাঠে গড়াবে। জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিচয় অনেক দিনের। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশ যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চলতে শুরু করেছিল তখন থেকেই জিম্বাবুয়ে দলকে পাশে পেয়েছে তারা। সেসময় ক্রিকেটীয় শক্তিতে জিম্বাবুয়ে এগিয়ে থাকলেও গত কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশের আশেপাশেও নেই দলটি।
শুধু জয় নয়, জিম্বাবুয়ের সাথে আধিপত্য দেখিয়ে জিততে না পারলে এখন হতাশ হয় দর্শক-সমর্থকেরা। কিন্তু এবারের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথমত খেলাটা টি-টোয়েন্টি, সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ রীতিমতো ধুঁকছে। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জয়ের পর থেকে সর্বশেষ ১৩ ম্যাচে মাত্র একটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
তাছাড়া খেলাগুলো জিম্বাবুয়ের ঘরের মাঠে। স্বাভাবিকভাবেই তাই স্বাগতিকদের হোম অ্যাডভান্টেজ থাকবে। আবার জিম্বাবুয়ের মাঠে বাংলাদেশ একেবারে একতরফা ম্যাচও জিততে পারেনি। এখন পর্যন্ত পাঁচটি টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশ জিতেছে তিনবার অন্যদিকে দুইবার জিতেছে জিম্বাবুয়ে।
তবে সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশ এবার জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে। সিনিয়রদের মাঝে তামিম ইকবাল এখন টি-টোয়েন্টিতে অতীত হয়ে গিয়েছেন, সাকিব আল হাসানও ব্যক্তিগত কারনে ছুটিতে আছেন। অন্যদিকে এই ফরম্যাটের নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিকুর রহিমকে একরকম বিশ্রাম দিয়েই দল সাজিয়েছে নির্বাচকরা।
আসন্ন এই সিরিজে নুরুল হাসান সোহান বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, প্রথমবারের মত লাল-সবুজের প্রতিনিধি হয়ে টস করতে যাবেন তিনি। আর তাঁর নেতৃত্বে একঝাঁক তরুণকে পাঠানো হয়েছে এই সফরে।
সাম্প্রতিক ফর্ম, কন্ডিশন আর স্কোয়াডের নতুনত্ব – সবমিলিয়ে তাই বাংলাদেশকে পরিষ্কার ফেভারিট দাবি করা যাচ্ছে না। সহজ ভাষায় বললে, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে সহজ প্রতিপক্ষ ভাবা হলেও আদতে বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
আর এই চ্যালেঞ্জ উতরানোর গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন সাহসী সোহান। উইকেট কিপিং, ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অধিনায়কত্ব – মাঠে বেশ ব্যস্ত থাকতে হবে তাকে।
পরিকল্পনা সাজানোর জন্য অবশ্য ভরসাযোগ্য বেশ কয়েকজনকে পাচ্ছেন অধিনায়ক এবং নির্বাচকরা। ইন ফর্ম ব্যাটসম্যান লিটন দাস আছেন, তামিমের অবর্তমানে দলের টপ অর্ডার সামলানোর কাজটা তাকেই করতে হবে। অন্যদিকে আফিফ হোসেন, নাসুম আহমেদ, শেখ মাহাদীরা এখন টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত সদস্য-ই। তাদের উপরও থাকবে পারফর্ম করার চাপ।
অনেকদিনের চেনাজানা খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দলটা তরুণই বটে। টানা ব্যর্থতার কারনে যে পরিবর্তনের সুর বেজেছিল ক্রিকেটাঙ্গনে তারই একটা প্রতিফলন এই স্কোয়াড। পঞ্চপাণ্ডবদের কেউই নেই, এমন দৃশ্য সচরাচর বাংলাদেশ দলে দেখা যায় না।
এবার তাই দেখা গেলো; সাথে নতুন একটা দৃশ্য দেখার প্রতীক্ষায় আছে ভক্তরা – সেটা টি-টোয়েন্টির ব্র্যান্ড ক্রিকেট। পরিচিত ভাষায় বললে সাহসী আর আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেট। শুধু ভক্তদের কথা কেন বলতে হয়, টিম ম্যানেজম্যান্টের সবাই চায় একই দৃশ্যের মঞ্চায়ন। তাই তো খালেদ মাহমুদ সুজনের কন্ঠে শোনা গিয়েছে, ভয়হীন ক্রিকেট খেলার উপদেশ।
স্কোয়াডে বড়সড় পরিবর্তন, মানসিকতায় পরিবর্তনের ছাপ। আশা করা যায় নতুন করেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলবে সোহানের দল। তাতে অবশ্য ঝুঁকি থেকে গিয়েছে। জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিয়েছে এমন কিছু না-ও ঘটতে পারে এবার।
প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়, কোন রকমের অঘটন ঘটলে এই পরিবর্তনকেই কাঠগড়ায় তুলবে মিডিয়া এবং ক্রিকেট ভক্তরা। কিন্তু আসলে তেমনটি করা মোটেই সমীচীন নয়। এই যে তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর একটা দল খেলতে গিয়েছে তাদেরকে তাদের মতই খেলতে দেয়া হোক কিছু সময়।
জয়-পরাজয়ের হিসেব অনেক করা হয়েছে – এবার সেসব পাশে সরিয়ে রাখা যাক। সাহসী ক্রিকেটের কথা যেভাবে মুখে বলেছেন নুরুল হাসান সোহান, তেমনটা যদি মাঠেও দেখাতে পারেন তিনি, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নবজাগরণের সৃষ্টি করবে। তাই ব্র্যান্ড ক্রিকেট খেলতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে এই দলটার উপরে আস্থা করা উচিৎ।
শীঘ্রই ফলাফল না আসলেও হয়তো একটা সময় আর রাসেল, পোলার্ডদের মত হার্ডহিটার না হওয়ার আক্ষেপের শোনা যাবে না। নিজেদের সমার্থ্য কাজে লাগিয়েই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।