সম্ভাব্য পরিপূর্ণ প্যাকেজ

গত মাসে প্রেসিডেন্ট’স কাপের তৃতীয় ম্যাচ। ১০৭ রানে ৭ উইকেট নেই তামিম একাদশের। ৯ নম্বরে নামলেন মেহেদী হাসান। দলের বিপর্যয় বা চাপ, সেসবের কোনো রেশ দেখা গেল না তার ব্যাটিংয়ে। ৩২তম ওভারে উইকেটে গিয়ে শেষ ওভারে আউট হলেন। নামের পাশে তখন ৫৭ বলে ৮২ রান।

এবার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধার করলেন ৩২ বলে ৫০ রান করে। বিপর্যয়ে নেমে পাল্টা আক্রমণের এমন ইনিংস ঘরোয়া ক্রিকেটে তার আছে আরও। মূলত টপ ও মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন, সেখানে গোছানো ইনিংসও তার বেশ কিছু আছে।

স্নায়ুর চাপকে যেভাবে পাত্তা না দিয়ে খেলেন, পেশীবহুল না হয়েও যেভাবে এফোর্টলেস ছক্কা মারেন, দারুণ!

সময়ের সঙ্গে দেখছি, তার শটের রেঞ্জ বেশ বেড়েছে। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। অথোরিটি বা কতৃত্ব বেড়েছে। পাওয়ার বেড়েছে, প্লেসমেন্টে আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। আজকে রুবেলের বলে একটু শাফল করে ফ্লিকের মতো যে শটটি খেললেন, বিশ্বের যে কোনো বোলারের বলে যে কোনো ব্যাটসম্যান এই শটে গর্বিত হতে পারেন।

বোলিং তিনি নতুন বলে বা পাওয়ার প্লেতে নিয়মিতই করেন। সীমিত ওভারের জন্য বরাবরই দারুণ কার্যকর বোলিং তার। আজকে ডেথ ওভারে যা করলেন, অভাবনীয় ও অসাধারণ – স্নায়ু চাপের কোনো বালাই তার মধ্যে ছিল বলে মনে হয়নি।

ছয় বলে যখন নয় রান প্রয়োজন, তখন বোলার মেহেদির হারানোরই ছিল সামান্যই। দল হারলেও দায় তার থাকত না। দুই বা তিন বল পর ছিল সত্যিকারের চাপের সময়। এরপর মেহেদি যা বল করেছেন, অবিশ্বাস্য!

বিশেষ করে ‘নো বল’ ডাকার পর (যদিও আমার চোখে বলটি মোটেও নো বল ছিল না, কোনো ভাবেই না) যেভাবে সামলে নিয়েছেন, যে কোনো মানদণ্ডেই তা অসাধারণ পারফরম্যান্স – কুইক আর্ম অ্যাকশন, একের পর এক জোরের ওপর ইয়র্ক করে যাওয়া, এসব শুধু স্নায়ের চাপ জয়ের ব্যাপারই নয়, দুর্দান্ত স্কিল ও নিজের ওপর প্রবল বিশ্বাসের প্রতিফলনও।

বাংলাদেশের সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে মেহেদি খেলেছেন। এই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে পরের ম্যাচগুলোর পারফরম্যান্স ভালো হোক বা খারাপ, আশা করি সামনেও বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হবে। সীমিত ওভারের জন্য দারুণ এক প্যাকেজ তিনি হতে পারেন।

নুরুল হাসান সোহানের কথাও না বললেই নয়। ব্যাট হাতে কার্যকর ইনিংস তো খেলেছেনই, শেষ ওভারে মেহেদি নায়ক, সোহান অবশ্যই যোগ্য পার্শ্বনায়ক।

মেহেদির ইয়র্কগুলো যেভাবে সামলেছেন সোহান, ব্যাটসম্যান সজোরে ব্যাট চালাচ্ছে, বল তার প্যাড ছুঁয়ে আসছে, পায়ের ফাঁক গলে আসছে, উইকেট ঘেষে দাঁড়িয়ে এসব বল আটকানো কখনোই সহজ নয়। আমার ধারণা, দেশের অন্য যে কোনো কিপার হলে অন্তত একটি বল ছুটতই, বাই চার বা দুই হতো। সোহান রিফ্লেক্স ও বডি পজিশন মিলিয়ে দুর্দান্ত স্কিল ও নার্ভের প্রমাণ রেখেছেন। কিপিং নিয়ে তার ক্রমাগত খাটুনির ফসল।

এবং মুক্তার আলীকেও ভুলে গেলে চলবে না। শেষ ওভারে একের পর এক পাওয়ার হিটিংয়ে না গিয়ে হয়তো আরেকট স্মার্ট ব্যাটিং করতে পারতেন। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত দারুণ বোলিং-ব্যাটিং করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, ১৪-১৫ বছর ধরে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা একজন সিনিয়র ক্রিকেটার, সুযোগের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অনেক পরিশ্রম করে ফিটনেস আগের চেয়ে অনেক ভালো করেছেন, দারুণ ব্যাপার!

-ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link