কেবলই ‘ছোটদের জম’ নন ফখর

এই একটা অভিযোগ গোটা ক্যারিয়ার জুড়েই শাহরিয়ার নাফিসকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। কিংবা খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করেও সেই ‘গন্ধ’ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেননি এই ওপেনার। তা সেই অভিযোগটা কি?

অভিযোগটা হল, দেশের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এই ব্যাটার নাকি তাঁর ক্যারিয়ারের অধিকাংশ বড় ইনিংস খেলেছেন ছোট দলগুলোর বিপক্ষে। আরও স্পষ্ট করে বললে জিম্বাবুয়ের ওপর। তা, তিনি যতই ফতুল্লা টেস্টে প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়ান বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে নান্দনিক এক সেঞ্চুরি করুন না কেন।

আসলে, সমালোচকদেরও তেমন একটা দেশ এখানে নেই। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়কের চারটা সেঞ্চুরি আর ১৩ টি হাফ সেঞ্চুরি। এর মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরি আর তিনটি হাফ সেঞ্চুরিই তিনি করেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এছাড়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ও কেনিয়ার বিপক্ষে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।

ফলে, সত্যিকার অর্থে শাহরিয়ার নাফিসের নিজের পক্ষে পরিসংখ্যান বলতে তেমন কিছু নেই। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ফতুল্লার ওই টেস্ট সেঞ্চুরি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি আছে তাঁর। সেটাও সেই বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান বোলিং লাইন আপকে পিটিয়ে। সেই লাইন আপে ব্রেট লি, শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পি, অ্যান্ডি বিকেল, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলরা ছিলেন।

শাহরিয়ার নাফিস চাইলে আজকালকার ব্যাটার ফখর জামানকে দেখে খানিক দু:খ ভুলতে পারেন। পাকিস্তানের এই টপ অর্ডার ব্যাটারের নামের সাথেও ‘ছোট দলের যম’ তকমাটা লেগে গিয়েছে। ক্যারিয়ারের সাতটি ওয়ানডে সেঞ্চুরির মধ্যে তিনি দু’টি করেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আর একটি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে।

তবে, রটারডামে স্বাগতিক নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পাকিস্তানি এই ব্যাটারের প্রতি কৃতজ্ঞই থাকা উচিৎ ভক্ত-সমর্থক ও টিম ম্যানেজমেন্টের। কারণ, তাঁর ১০৯ রানের ইনিংসটা বাদ দিলে পাকিস্তানের ইনিংসে ছিল কেবল আর একটা হাফ সেঞ্চুরি। ঠিক ১০০ স্ট্রাইক রেটে করা ইনিংসটার সুবাদেই পাকিস্তান ছয় উইকেট হারিয়ে তুলতে পেরেছিল জয়ের ভিত। বাবর আজমের সাথে তাঁর ১৭০ বলে করা ১৬৮ রানের জুটির সুবাদেই ৩১৪ রান বোর্ডে জমা করে সফরকারী পাকিস্তান দল।

আর সেখানে পাকিস্তানের ঠিক কানের পাশ দিয়েই গুলিটা গিয়েছে। বাবর আজমের দলকে প্রায় ছুঁয়েই তো ফেলেছিল কমলা জার্সিধারীরা। আট উইকেট হারিয়ে জয়ের থেকে মাত্র ১৭ রান দূরে থাকতে থামে তাঁরা। ম্যাচ সেরা যথারীতি ওই ফখর জামানই। তবুও কি সমালোচনা শেষ হয়!

অথচ, সবাই ভুলে যায় যে – এই ফখরেরই ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিং গড় চার ওয়ানডেতে ৫১.৭৫, একটা সেঞ্চুরি ও একটা হাফ সেঞ্চুরির বিনিময়ে। সেই সেঞ্চুরিটা আবার এসেছিল লন্ডনের ওভালে, ভারতের বিপক্ষে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। সেই ফাইনাল জিতে পাকিস্তান। ফখর জামানই পাকিস্তানকে সর্বশেষ কোনো আইসিসি ইভেন্ট জয়ের আনন্দে ভাসান।

এখানেই কি শেষ নাকি! তাঁর বাকি তিনটি ওয়ানডে সেঞ্চুরির একটা ইংল্যান্ড আর দু’টো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ফলে, তাঁর সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করার অর্থ হল বোকার স্বর্গে বসবাস করা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link