পরাজিত হতে হতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না। টি-টোয়েন্টিতে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করা বাংলাদেশ দলের সামনেও তাই নতুন শুরুর বিকল্প ছিল না। আর এই নতুন শুরু হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) টি-টোয়েন্টি দলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
স্কোয়াডের পর এবার পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে কোচিং প্যানেলেও। টি-টোয়েন্টি দলের হেড কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে রাসেল ডোমিঙ্গোকে, এমন গুঞ্জনও আছে। কেননা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ভারতীয় শ্রীধরন শ্রীরাম। তবে ওয়ানডে এবং টেস্টে যথারীতি হেড কোচের দায়িত্বে থাকবেন দক্ষিণ আফ্রিকান ডোমিঙ্গো।
ইতোমধ্যে বিসিবির সঙ্গে শ্রীধরন শ্রীরামের চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে আগামী রবিবারের মধ্যেই কাজে যোগ দেবেন তিনি। অবশ্য রাসেল ডোমিঙ্গোকে টি-টোয়েন্টি দলের কোচিং থেকে বাদ দেয়ার গুঞ্জন উঠেছিল বেশ কয়েকদিন আগে। টিম ম্যানেজম্যান্টের চোখে এই প্রোটিয়া কোচকে ঠিক আক্রমনাত্বক মনে হয়নি। আর তাই এশিয়া কাপে ডোমিঙ্গোকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
নতুন হেড কোচ কে হবে সে-ই তালিকায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছিল জেমি সিডন্সের নাম। একসময় বাংলাদেশের হেড কোচের দায়িত্বে থাকলেও বর্তমানে তিনি আছেন ব্যাটিং বিভাগে। শেষপর্যন্ত সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নতুন কোচের নাম ঘোষনা করেছে বিসিবি। ভারতের শ্রীধরন শ্রীরামকে বেছে নেয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে কাজ করার সুবাধে এশিয়া কাপের ভেন্যু আরব আমিরাতের সাথে ভাল পরিচয় শ্রীধরনের। মূলত এই কারনে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে তাঁর উপর ভরসা রাখছে বাংলাদেশ।
অবশ্য শ্রীধরন শ্রীরামের সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করেনি বিসিবি। আপাতত এশিয়া কাপের জন্যই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। তবে এই টুর্নামেন্টে ভালো করলে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও থাকবেন শ্রীরাম। সেসময় হয়তো দীর্ঘ মেয়াদে টি-টোয়েন্টি কোচ করা হতে পারে সাবেক এই ক্রিকেটারকে।
শ্রীধরন শ্রীরাম একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বাম হাতি অর্থডক্স বোলার। ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভারত জাতীয় দলের হয়ে আটটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন শ্রীধরন শ্রীরাম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেটার হিসেবে বলার মত কিছু করতে পারেননি তিনি। তবে তামিলনাড়ুর এ ক্রিকেটারের ঘরোয়া রেকর্ড দুর্দান্ত। রঞ্জি ট্রফিতে এক মৌসুমে রেকর্ড ১০৭৫ রান করেছেন তিনি।
সবমিলিয়ে আটটি আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ৮১ রান করেছেন শ্রীধরন শ্রীরাম। অন্যদিকে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ১৩৩ ম্যাচে ৩২ সেঞ্চুরিতে ৯৫৩৯ রান এবং ১৫ টি২০তে ২৩৩ রান।
আবার কোচ হিসেবেও অনেক বেশি অভিজ্ঞ এই ভারতীয়। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কোচ ডেরেন লেহম্যান এর সাথে অজিদের স্পিন কোচ হিসাবে নিয়োগ পান। এর আগে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের ভারত সফরে হেড কোচের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তিনি। আবার ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া দলের বাংলাদেশ সফরেও টিমের সাথে ছিলেন। ২০১৯ সালে অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার কোচিং স্টাফের অন্যতম সদস্য করা হয় তাঁকে। একই বছরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং ও স্পিন কোচ হিসেবে নিয়োগ পান শ্রীরাম।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ক্রিকেটের যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে তার শুরুটা হয়েছে আইপিএলে। তাই আধুনিক টি-টোয়েন্টির সাথে বেশ সখ্যতা আছে শ্রীধরন শ্রীরামের। আবার একইসাথে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনের সাথেও জানাশোনা আছে শ্রীরামের। সবমিলিয়ে তাই বলা যায়, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সবচেয়ে সেরা অপশনকেই বেছে নিয়েছে টি-টোয়েন্টির দলের জন্য।
এদিকে আবার শোনা গিয়েছে কোচ নয়, ট্যাকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে আসছেন শ্রীধরন শ্রীরাম। তবে যে-ই পরিচয়ে আসেন, দায়িত্বটা একই থাকবে তাঁর জন্য। বিশ ওভারের খেলার ধরন বুঝতে না পারা টিম টাইগার্সকে পথ দেখানো শ্রীরামের প্রাথমিক লক্ষ্য।
আইপিএলের দলের সাথে কাজ করেছেন, কাজ করেছেন অজিদের সাথে – ব্র্যান্ড ক্রিকেট নতুন কিছু নয় শ্রীধরন শ্রীরামের কাছে। এই টি-টোয়েন্টি সুলভ সাহসী মনোভাব বাংলাদেশ দলের মাঝে আনতে পারলেই সফল বলা যাবে তাকে। সম্ভাবনার পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল আছে শ্রীরামের, এবার সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। লাল-সবুজের ভক্তরাও সেই আশায় বুক বেঁধেছে।