এবারের এশিয়া কাপের আসরের অন্যতম ফেবারিট ছিল পাকিস্তান। অন্তত টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই শিরোপার বড় দাবিদার ভাবা হয়েছিল বাবর আজমের দলকে। কিন্তু শেষমেশ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে ২৩ রানের কঠিন এক পরাজয় সহ্য করতে হয়েছে ‘মেন ইন গ্রিন’ দের। শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার পর থেকে সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রিকেটবোদ্ধাদের রোষানলে পড়ে গিয়েছে পাকিস্তান দলটি।
সাবেক ক্রিকেটাররা প্রশ্ন তুলছেন এশিয়া কাপের দল নির্বাচন নিয়ে। তাছাড়া বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটার খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স, বিশেষ করে ব্যাটারদের পারফরম্যান্স নিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন। এই তালিকায় সবার আগে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দিকেই আঙুলটা তুলছেন তাঁরা। অথচ রিজওয়ান এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
ফাইনালে শ্রীলঙ্কার দেয়া কঠিন ১৭১ রান তাড়া করতে গিয়ে রিজওয়ান ৫৫ রান করেন, কিন্তু তা বেশ ধীর গতিতে আসে। এই রান করতে এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ৪৯ টি বল খরচ করেছেন। যা টি-টোয়েন্টির স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী মোটেও যুতসই নয়। এবং শেষমেশ তিনি ক্যাচ আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। রিজওয়ানের এমন ব্যাটিং আচরণকে অনেকেই সেলফিশ আচরণ বলছেন। কারণ তিনি দলের সবচেয়ে বড় ভরসা হয়েও, দলের জন্য ভেবে ব্যাটিং করেননি। পাকিস্তানের সাবেক পেসার শোয়েব আখতার এবং সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক রিজওয়ানের পারফরম্যান্সের চরম সমালোচনা করেন।
ফাইনালের পরদিন টুইটারে শোয়েব আখতার বলেন, ‘৫০ বলে ৫০! এটা এখন আর কাজ করবে না। পাকিস্তানের কোনও উপকার হলো না।’
এদিকে ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে বিশ ওভার ব্যাট করতে হয়। হাতে দশটি উইকেট থাকে। তা হলে কেন একজন কেই শেষ পর্যন্ত খেলতে হবে। ভারত, শ্রীলঙ্কাকে দেখুন। ওদের সবাই প্রথম বল থেকে মেরে খেলার চেষ্টা করে। কেউ এক জন বড় রান করলেই দলের রান বাড়বে। কিন্তু আমাদের ক্রিকেটাররা ৫০ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলে। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করে। তাতে কোনও লাভ হয় না।’’
রিজওয়ানের মন্থর গতির ব্যাটিং নিয়ে যেখানে সাবেকরা কটুক্তি ও সমালোচনা করছেন তাকে নিয়ে, সেখানে এই দু:সময়ে রিজওয়ান পাশে পেলেন কোচ সাকলাইন মুশতাককে। পাকিস্তান দলের প্রধান কোচ সাকলাইন মুশতাক রিজওয়ানকে রক্ষা করতে এসে ‘বিশেষজ্ঞদের’ প্রতি পরোক্ষ ব্যঙ্গ করেছেন, বলেছেন বাইরে থেকে মন্তব্য করাটা বেশ সহজ কাজ।
সবাই হাল ছেড়ে দিলেও দলের পাশে আছেন স্বয়ং কোচ। সংবাদ সম্মেলনে খ্যাতনামা সাবেক এই স্পিনার বলেন, ‘তাঁরা কেবল ফলাফল এবং স্কোরকার্ড দেখেছে এবং তাদের মতামত জানাচ্ছে। কিন্তু ড্রেসিংরুমের ভিতরে কী ঘটছে, খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস এবং তারা যে আঘাতগুলি বহন করছে সে সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছি। তাই আমি জানি কিভাবে এসব বিষয় কাজ করে। একবার তারা ভিতর থেকে ক্রিকেটারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করলে তবেই তারা টিম বন্ডিং, পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারবে।’ এর অর্থ হল আপাতত এই যাত্রায় টি-টোয়েন্টিতে টিকে যাচ্ছেন রিজওয়ান।
যাই হোক বাবর আজম এশিয়া কাপের আসরে ব্যাট হাতে তেমন প্রভাব রাখতে পারেননি। তাঁর পরিবর্তে পুরো টুর্নামেন্টে পাকিস্তান দলের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ছিলেন রিজওয়ান। বলা যায় একাই টেনে নিয়েছেন পাকিস্তানের রানের চাকা। কোচ সাকলাইন মুশতাক কাছ থেকে রিজওয়ানের চেষ্টাটা দেখেছেন বলেই হয়তোবা তাঁর উপর ভরসা এখনো অটুট রাখছেন। একজন যোগ্য গুরুই দু:সময়েও শিষ্যকে রক্ষা করে। রিজওয়ানদের ভাগ্যবান বলতেই হয় তাই!