হঠাৎ সহ-অধিনায়কের মেজাজ খারাপ

ইনজুরির কারণে গোটা এশিয়া কাপ থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন নুরুল হাসান সোহান। হাতের আঙুলের আঘাত কয়েক সপ্তাহের জন্যে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয় তরুণ এই ক্রিকেটারকে। ইনজুরি কাটিয়ে উঠেছেন সোহান। অস্ত্রপচারের ক্ষত শুকানোর পরপর আবার ব্যাট হাতে ফিরেছেন মাঠে। জায়গা করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াগামী বিশ্বকাপ দলে।

শুধু জায়গা করেই ক্ষান্ত হননি সোহান। তাঁর উপর তো এসে পড়েছে সহ-অধিনায়কের গুরু দায়িত্ব। সহ-অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে পূর্ণ প্রস্তুত করেই তো হাজির করতে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে। সে প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সেন্টার উইকেটের দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং অনুশীলন করতে দেখা যায় নুরুল হাসান সোহানকে।

বিরতি কাটিয়ে ব্যাট-বলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টাতেই যেন মগ্ন ছিলেন সোহান। তবে শুরুর দিকে ব্যাটে-বলে সংযোগটা ঠিকঠাক স্থাপন করতে পারছিলেন না তিনি। বেশকিছু শট চেষ্টা করেও ফলাফল ঠিক পাচ্ছিলেন না মনমত। স্বাভাবিকভাবেই মেজাজটা খানিক চটে যাওয়ারই কথা। তাই তিনি ডাউন দ্য উইকেটে এসেও শট খেলার চেষ্টা করেন। তাতেও সন্তুষ্টি মেলেনি।

লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন ছাড়াও আর বেশকিছু বোলারকে সোহানের অনুশীলনে সহয়তা করতে দেখা যায়। তাঁদেরই মধ্যে থেকে একজন থ্রোয়ারের ছোড়া বল গিয়ে আঘাত করে সোহানের কোমড়ের নিজের অংশে। থাই প্যাডের রক্ষণ পেড়িয়ে  বলটি আঘাত করে। প্রথমত ঠিকঠাক ব্যাটিংটা করতে পারছিলেন না। তাঁর উপর কোমড়ে লাগা বলে বেশ ব্যথাই পেয়েছেন তিনি। সেই সাথে হাতে আবারও ব্যথা পাওয়ার সুযোগও ছিল।

সব মিলিয়ে নিজের মেজাজটা আর ঠিক ধরে রাখতে পারেননি সোহান। ছুড়ে মারেন একজন ব্যাটারের সবচেয়ে পছন্দের বস্তু- ব্যাট। ঠিক তখনই আবার মাঠের প্রবেশ করেন কোচ মিজানুল রহমান বাবুল। সোহানকে এই পর্যায়ে আনার পেছনে অবদান রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে বাবুল থাকবেন সবার উপরে। দীর্ঘকাল ধরে তিনি সোহানকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি জানেন ঠিক কোথায় সোহানের দুর্বলতা রয়েছে।

সোহান বেশ কিছুক্ষণ উইকেটের বাইরে নিজের ব্যথা কমবার অপেক্ষা করে আবারও ফিরলেন। এবার উইকেটের পেছন থেকে টোটকা বাতলে দিলেন বাবুল। সেই টোটকা মোতাবেক ব্যাটিং করতে শুরু করেন সোহান। নিজের হারানো আত্মবিশ্বাস যেন ক্রমেই ফিরে পেতে শুরু করেন তিনি। খুঁটিনাটি ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেন বাবুল। আর সেগুলো শুধরে নিয়ে ব্যাটিং করতে থাকেন সোহান।

শেষদিকে ব্যাটের সাথে বলের সংযোগটা বেশ জমেছে। বড় কিছু শট খেলেছেন। নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার কাজটুকু সেরে নিয়েছেন নতুন এই সহ-অধিনায়ক। তবে তাঁর মেজাজ হারিয়ে ফেলার বিষয়টা খানিক দৃষ্টিকটু। তাঁর উপর এখন দায়িত্ব অনেক। তিনি তো দলের দ্বিতীয় নেতা। শোনা যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তিনিই হয়ত পালন করবেন অধিনায়কের দায়িত্ব।  মাঠের ক্রিকেটে কঠিন থেকে কঠিনতম সব মুহূর্ত সামাল দিতে হবে সোহানকে। তখনও কি সোহান স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে পারবেন?

স্নায়ুচাপ সামলে নেওয়ার প্রশিক্ষণটাও হয়ত তিনি সেরে নিতে চাইবেন বিশ্বকাপের আগে। সেটাও বড্ড বেশি প্রয়োজন। তাঁদের হাতেই তো এখন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। মাঠ ও মাঠের বাইরের এমন মেজাজ হারিয়ে ফেলার ঘটনা নিশ্চয়ই প্রভাব ফেলবে পারফরমেন্স। তখন অবশ্য ক্ষতিটা হবে টিম টাইগার্সদের। হয়ত ব্যাটিংয়ে দেওয়া টোটকার মত করেই মিজানুর রহমান বাবুল তাঁর শিষ্যকে মাথা ঠাণ্ডা রাখার টোটকাটাও দিয়ে দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link