মহেন্দ্র সিং ধোনির নামের সাথে যেন একটা তকমা জুড়ে ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের আদ্যোপান্ত। ‘ফিনিশার’ তকমাটা নিয়েই তিনি ছেড়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ময়দান। ভারত জাতীয় দলের হয়ে বহুবার তিনি ম্যাচ শেষ করেও এসেছেন। সেটার নজিরও তো একেবারেই যে নেই তেমনটাও নয়। সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মুহূর্তটা নিশ্চয়ই ২০১১ সালের সেই ছক্কটা।
তবে রোমাঞ্চের রঙিন দুনিয়া ছাপিয়ে বাস্তবের রুঢ় পথে ধোনি আসলে একটা জায়গায় ব্যর্থ। আর সেটা টি-টোয়েন্টির ফিনিশিংয়ে। হ্যাঁ, এই বক্তব্যের পর অনেকেরই হয়ত চক্ষু ছানাবড়া হবার উপক্রম হবে। কেউ কেউ হয়ত এক বাক্যে বলে দেবেন, ‘না, এমনটা হতে পারে না।’ তবে বিষয়ে সত্যতা রয়েছে। সেখানে তাঁর থেকে এগিয়ে রয়েছেন দীনেশ কার্তিক।
দীনেশ কার্তিক, ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান সময়ে বেশ চর্চিত এক নাম। যখন সবাই অবসরের পরিকল্পনা সাজায় ঠিক তখন কার্তিক ভারতের হয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চ কাপানোর ছক আঁকছেন। গেল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে, নিজেকে দুর্দান্ত এক ফিনিশার রুপে আবারও সামনে এনেছেন দীনেশ কার্তিক। যার সুবাদেই তিনি নির্বাসন কাটিয়ে জাতীয় দলে ফিরেছেন, সুযোগ গুলো কাজে লাগিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বকাপ দলেও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রাইম টাইমে তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির সাথে। সমসাময়িক সময়ে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে নিজের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের জোরে দলে জায়গা পেতেন ধোনি। তাছাড়া একজন ব্যাটার হিসেবেও যে একেবারে ফেলে দেওয়ার মত ছিলেন তিনি তা নয়। ভারতকে বহু ম্যাচে একেবারে জয়ের বন্দরে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শেষ ওভারে সাতের বেশি রানের সমীকরণের সামনে ধোনি ছিলেন ব্যর্থ।
তবে দুই দফা দীনেশ কার্তিক সে কর্ম সাধন করে দেখিয়েছেন। চোখের সামনে নিশ্চয়ই নিদাহাস ট্রফির শেষ বলের দৃশ্য ভেসে উঠছে। হ্যাঁ, সে ম্যাচেও কার্তিক শেষ ওভারে সাত রান করে দলকে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। তবে সাতের বেশি রান করে তিনি ম্যাচ জিতিয়েছেন দুই দফা। সবচেয়ে কাছের উদাহরণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলা সিরিজ। সেখানে শেষ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল নয় রান। বোলিং প্রান্তে ছিলেন ড্যানিয়েল স্যামস।
নাগপুরে বৃষ্টি বিঘ্নিত আট ওভারের ম্যাচে ভারতের টার্গেট ছিল ৯১ রান। শেষ ওভারে জয়ের জন্য টিম ইন্ডিয়ার প্রয়োজন ছিল নয় রান। নবাগত ব্যাটার কার্তিক। আর অন্যদিকে নিজের আগের ওভারে দশ রান খরচ করে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন স্যামস। তবে নিজের খেলা প্রথম দুই বলেই একটি বাউন্ডারি ও একটি ওভার বাউন্ডারি হাঁকান কার্তিক। যার সুবাদে জয়ের বন্দরে ভেড়ে ভারতের রণতরী। এমন দৃঢ়তা আগেও দেখিয়েছিলেন কার্তিক।
২০০৬ সালে তিনি শেষ ওভারে সাতের বেশি রান নিয়ে ভারতীয় দলকে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। সেটা ছিল ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সে ম্যাচেও শেষ ওভারে নয় রান প্রয়োজন ছিল জয়ের জন্য। নয় রানের আট রান এসেছিল কার্তিকের ব্যাট থেকে। সে ম্যাচ এক বল বাকি থাকতেই জিতে নিয়েছিল। তবুও কার্তিক থেকে যান আলোচনার বাইরে, লোকচক্ষুর আড়ালে।
হ্যাঁ, এ কথা সত্য মহেন্দ্র সিং ধোনি অধিকাংশ সময়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছেন। তবে টি-টোয়েন্টিতে এই মানদণ্ডে আসলে দীনেশ কার্তিক, ধোনির থেকে এগিয়ে থাকবেন। সময় বহমান। বহমান অববাহিকায় সব তর্ক-বিতর্ক ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। তবুও দিনশেষে এতটুকু অন্তত কার্তিক প্রত্যাশা করেন, যেন তাকেও বিবেচনা করা হয় সেরা ফিনিশারদের একজন হিসেবে।