টি-টিয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় শিবিরে দু:সংবাদ। ব্যাকস্ট্রেস ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে গিয়েছেন বল হাতে দলের মূল ভরসা জাসপ্রিত বুমরাহ। টানা এই ইনজুরির খবর শুনে তাঁর ক্যারিয়ার নিয়েই শংকায় পড়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় ভক্ত-সমর্থকরা। তবে আইসিসি মেডিকেল কমিটির সদস্য দীনশ্ব পারদিওয়ালার কথা শুনে খানিকটা স্বস্তিই পাবেন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা।
‘পিঠের নিচের দিকের ব্যাকস্ট্রেস ইনজুরি ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়ার মত মারাত্নক কিছু না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পূর্ণ বিশ্রাম আর পরিচর্যা পেলে বোলারের পূর্নদমে ফিরে আসতে খুব একটা সমস্যা হয় না।’, বলেন পারদিওয়ালা। তবে আশার বাণী শোনানোর পাশাপাশি কিছুটা শংকার কথাও জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘স্ট্রেস রিয়্যাকশন দ্রুত সেরে গেলেও স্ট্রেস ফ্র্যাকচার সারতে বেশ সময় লাগে। এই চোটের রিহ্যাব প্রক্রিয়া খুবই ধীরগতির এবং আপনার আসলে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। স্ট্রেস ফ্রাকচারে আসলে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই, তবে সময় দেয়ার বিকল্প নেই। তাড়াহুড়ো করলে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা প্রবল।’
শুরুতে সবাই ভেবেছিল বুমরাহর ইনজুরি খুব একটা মারাত্নক না। বিসিসি আই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলিও তাই জানিয়েছিলেন বুমরাহকে এখনও দল থেকে বাদ দেয়া হয়নি। তবে পেইন কিলার খেয়ে সাময়িক ব্যথা প্রশমিত করে মাঠে নামার এই চিন্তা মাথা থেকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে দিতে বলেছেন নীরাজ চোপড়া, সাইনা নেহওয়াল, রবীন্দ্র জাদেজাদের সাথে কাজ করা পারদিওয়াল।
তিনি বলেন, ‘আপনি শক্তিশালী পেইনকিলার খেয়ে হয়তো ব্যথাটা কমিয়ে মাঠে নামতে পারবেন। কিন্তু কখনোই নিজের শতভাগ দিতে পারবেন না। তাছাড়া এটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণও বটে, আরও গুরুতর কোনো ইনজুরির দিকে ঠেলে দিতে পারে। যদি না আপনার ক্যারিয়ারের মহাগুরুত্বপূর্ণ কিংবা শেষ টুর্নামেন্ট হয়, সেক্ষেত্রে ঝুঁকি না নেয়াই হবে বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত।’
‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে রিহ্যাব প্রক্রিয়ার সময় আপনাকে ধীর গতির হতে হবে। কোনোভাবেই দ্রুত হওয়া যাবে না। অনেক সময় অ্যাথলেটরা গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে ব্যথা কম থাকলে পেইনকিলার খেয়ে খেলতে নামেন। কিন্তু দিনশেষে তাতে উপকারের বদলে ক্ষতিটাই বেশি হয়। ইনজুরিটা আরও বাজে আকার ধারণ করে এবং ফিরে আসতে আরও বেশি দেরি হয়।’, যোগ করেন তিনি।
স্ট্রেস ইনজুরিটা আসলে কি? স্ট্রেস ইনজুরি আসলে পিঠের নিচের দিকের অংশে হয়। এই ইনজুরি আসলে একদিনে হয় না। দীর্ঘদিনে একই অংশে ব্যথা পেলে সেটা একসময় স্ট্রেস ফ্র্যাকচারে রূপ নেয়। যেকোনো জোরে বোলার যে হাতে বল করেন, তার বিপরীত পাশের অংশেই সাধারণত এই ধরনের ইনজুরি দেখা যায়। সাধারণ ফ্র্যাকচার ইনজুরির ক্ষেত্রে হয়তো হাড় ভেঙে যায় কিংবা সার্জারির দরকার পড়ে, কিন্তু স্ট্রেস ফ্র্যাকচার ইনজুরিতে আসলে সেসবের প্রয়োজন পড়ে না। এটা আসলে অনেকগুলো মাইক্রো ইনজুরির মিলিতরূপ।
‘এটা অন্য সব ফ্র্যাকচারের মত নয়। এটা সে ধরনের ইনজুরি না যে আপনি হাঁটতে পারবেন না কিংবা বসতে পারবেন না। আপনি সবকিছুই চাইলে করতে পারবেন, কিন্তু ব্যথা লাগবে তাতে। বিশ্বজুড়ে অনেক অ্যাথলেটই আছেন যারা কোনোভাবে এই ইনজুরি নিয়েই প্রতিনিয়ত খেলে যাচ্ছেন। কিন্তু পিঠে ব্যথা নিয়ে নিজের শতভাগ দেয়াটা খুবই কঠিন কাজ।’, বলেন পারদিওয়ালা।
তাহলে বুমরাহর ইনজুরির সমাধান কি? এই প্রশ্নের জবাবে পারদিওয়ালা বলেন, ‘বিশ্রাম। কেবলই বিশ্রাম এবং সার্জারির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা। এটা খুবই সাধারণ ইনজুরি, সার্জারির কোনো দরকার নেই এজন্য। আপনি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে স্ট্রেস ফ্র্যাকচার এমনিতেই সেরে যাবে। কেবল দেখতে হবে ইনজুরির মাত্রার উপর নির্ভর করে আপনার কতদিনের বিশ্রাম লাগবে। সাধারণ ক্ষেত্রে মাইনর স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের ক্ষেত্রে ছয় সপ্তাহের মতো লাগতে পারে, আবার কখনও ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে চলে গেলে ছয় মাসও লেগে যায়।’
পারদিওয়ালার বক্তব্যে ভারতীয় সমর্থকরা অন্তত এই ভেবে স্বস্তি পেতে পারেন যে ইনজুরির কারণে বুমরাহর ক্যারিয়ার সহসাই শেষ হচ্ছে না। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে তাঁকে নিশ্চিতভাবেই মিস করবে ভারতীয় দল।