কেন পাকিস্তান দলে করোনার প্রকোপ বেশি!

মাত্রই দুই সপ্তাহ আগের কথা। পাকিস্তান দলের ৫৫ জন সদস্যকে যখন কোভিড ১৯ টেস্টের জন্যে পাঠানো হল- প্রত্যেকের ফলাফলই ছিল নেগেটিভ। ফখর জামানের কোভিডের কিছু লক্ষণ থাকলেও পরে তিনিও নেগেটিভ প্রমাণিত হন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে অবতরণের পর দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা পরীক্ষায় দেখা যায়- পাকিস্তান দলের আধ ডজন খেলোয়াড়ের করোনা পজিটিভ! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মাত্র দুই সপ্তাহের মাঝে দলটিতে করোনার হানা দেখা দিল কেন?

প্রথম যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে তা হল, পিসিবি কি ক্রিকেটারদের করোনা ঝুঁকি কমানোতে যথেষ্ট মনোযোগী ছিল? আমরা যদি এর আগে পাকিস্তানের ইংল্যান্ড সফরের দিকে ফিরে যাই, পিসিবি খেলোয়াড়দের দু’বার কোভিড টেস্ট করায়, যার মধ্যে একটি ছিল অ্যান্টিবডি টেস্ট। ইংল্যান্ড সফরের জন্যে পাকিস্তান দলের সব খেলোয়াড়দের দুইটি টেস্টের সবকয়টিতেই নেগেটিভ হতে হয়েছিল, সফরের আগে হোটেলে সাতদিন কোয়ারেন্টিনে কাটাতে হয়েছিল। কিন্তু পারতপক্ষে, নিউজিল্যান্ড সফরে তা হয়নি!

নিউজিল্যান্ড সফরের জন্যে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) খেলোয়াড়দের কোভিড টেস্ট করায় মাত্র একবার। শুধু তাই না, সাতদিনের বদলে খেলোয়াড়দের কোয়ারেন্টিন দেয় মাত্র দু’দিন! দুইদিনের কোয়ারেন্টিন ব্যাপারটাই তো আসলে কেমন হাস্যকর শোনাচ্ছে।

৩৫ জন খেলোয়াড় আর ২০ জনের কোচিং স্টাফের দলটি নভেম্বরের ২০ তারিখে লাহোরের হোটেলে উঠে। পরদিন তাদের প্রত্যেকের কোভিড টেস্ট করানো হয়, যেখানে প্রত্যেকের ফলাফল আসে নেগেটিভ। এরপর দলটি দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, ওখানে গিয়ে কুয়ালালামপুর হয়ে অকল্যান্ড যাবে তাই।

এই সফরের আগে দলটির সব খেলোয়াড়ই পাকিস্তানের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট কায়েদে আজম ট্রফি, জিম্বাবুয়ে সিরিজ আর পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) নিয়ে ব্যস্ত ছিল। পিসিবির দাবি অনুযায়ী এই সব ম্যাচেই পিসিবির বায়ো সিকিউরড বাবল বজায় ছিল। তবে নামটা তো পাকিস্তান। বায়ো সিকিউরড বাবল ঠিকঠাকভাবে বজায় থাকেনি কায়েদে আজম ট্রফির সময়ই, যখন কয়েকজন খেলোয়াড় পিসিবির নিয়ম ভেঙ্গে ফেলে। পিসিবি অবশ্য তার জন্যে খেলোয়াড়দের তিরস্কার করে।

এটা অবশ্য কাকতালীয়, গত দুই মাসে পাকিস্তানে কোভিডের হানা পড়েছে বেশ জোরেশোরেই। জুলাইয়ের পর যখন নিয়মিত শনাক্ত ৫০০ জনের কম ছিল, তা এই দুই মাসে বেশ বেড়ে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহে তো তা দৈনিক ৩০০০ এ গিয়েও ঠেকেছে। পাকিস্তান অবশ্য দ্বিতীয়বারের মত লকডাউন জারি করেনি, তবে তার সম্ভাবনা বেশ প্রবল তা জোরেশোরেই বলা যায়।

এর মাঝেই পিসিবি আয়োজন করে পিএসএল। এই টুর্নামেন্টে আবার মুলতান সুলতানসের পাঁচ জন খেলোয়াড় পজিটিভ প্রমাণিত হয়।

ফখর জামানের কথা বলছিলাম। যিনি কিনা নিউজিল্যান্ডের সফরের আগেরদিন দল থেকে বাদ পড়েন কোভিড লক্ষণ থাকার কারণে। তবে ফখর জামান পরে নেগেটিভ আসলেও,পিএসএলে তার টিমমেট দিলবার হোসেন বিগ ব্যাশ খেলতে গিয়ে পজিটিভ হয়। মজার ব্যাপার হল, এই দিলবার হোসেনও পার্থের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান ছাড়ার আগে কোভিড নেগেটিভ হয়েই প্লেনে ওঠেন।

আবার পিএসএলের আগে কোভিড টেস্ট সহ নিউজিল্যান্ড সফরের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে যে কোভিড টেস্ট করানো হয়, সব মিলায়ে দু’বার শাহীন আফ্রিদি পাকিস্তানে কোভিড টেস্টে নেগেটিভ হন । সেই শাহীন আফ্রিদিই আবার নিউজিল্যান্ডে গিয়ে হয়ে যান কোভিড পজিটিভ।

এমন সব ঘটনা আসলে এখন পাকিস্তানের কোভিড টেস্ট করার সক্ষমতা আর দক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এমনকি যে চারজন খেলোয়াড় নিউজিল্যান্ডে গিয়ে কোভিড টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন, তারা কায়েদে আজম ট্রফি, পিএসএল, জিম্বাবুয়ে সিরিজ নানা সময়ে পাকিস্তানে করা কোভিড টেস্টে নেগেটিভ হয়েছেন।

পিসিবি অবশ্য এখনও বেশ আত্মবিশ্বাসী- পিসিবি মনে করছে নিউজিল্যান্ড সফরের আগে কোভিড সতর্কতায় যা যা করণীয় তার সবই পিসিবি করেছে। এখন এখানে ব্যাপার হতে পারে তাহলে দুটো। এক, পিসিবি আসলে মিথ্যা বলছে। দুই, পিসিবি সত্যি বলছে কিন্তু পাকিস্তানের কোভিড টেস্টের বিশ্বাসযোগ্যতাই প্রশ্নবিদ্ধ।

জল ঘোলার মধ্যে অবশ্য পিসিবি বিবৃতিও দিয়ে দিয়েছে। বিবৃতিতে বলেছে, ‘সব মিলিয়ে মোট নয়টি টুর্নামেন্টের জন্যে আমরা ২৮৩০ টি কোভিড টেস্ট করিয়েছি যার মধ্যে খেলোয়াড়, ম্যাচ অফিশিয়াল, কোচিং স্টাফ সবাই ছিল। কোভিড সতর্কতাতে সঠিক প্রটোকলই পিসিবি নিয়েছে যার অংশ হিসেবে সবাইকে একটা আলাদা জায়গাতেও রাখা হয়েছিল যেটি ডিজাইন করা হয়েছিল কোভিড সতর্কতায় শক্ত প্রটকলের জন্যেই।’

এখন যদি আসলেই তাই হয়, নিউজিল্যান্ডে গিয়ে এমন কেন হল?

– ইএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link