মুকেশ কুমার তাঁদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার মধ্যেই পেলেন সুখবরটা। সপ্তমীর দিনে জানতে পারলেন ভারতীয় জাতীয় দলে ডাক পড়েছে তাঁর। তাও দলে জায়গা পাওয়ার খবরটা জানলেন যখন হুট করে ভারতীয় দলের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিজেকে আবিস্কার করলেন তখন। এ কি আর চাট্টিখানি কথা! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছয় অক্টোবর হতে শুরু হতে যাওয়া একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজে ভারতীয় দলে ডাক পেয়েছেন এই পেসার।
উৎসবের আনন্দটা তাই মুহুর্তে দ্বিগুণ হয়ে গেল তাঁর জন্যে। মুকেশের এই খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন তাঁর বাবা কাশীনাথ সিং। সেই অজপাড়া গাঁয়ের নেহায়েৎ এক ক্রিকেটপাগল কিশোর থেকে আজকের জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পথে সবথেকে বড় অবদানটা যে মুকেশের প্রয়াত বাবার। কিন্তু শেষমেশ ছেলের বহুদিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ নিতে দেখে যেতে পারলেন না তিনি। গেল বছর রঞ্জি ফাইনালের আগে ব্রেন স্ট্রোকে মুকেশ তাঁর বাবাকে হারান।
বিহারের গোপালগঞ্জের ছেলে মুকেশ। নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। চোখের সামনে পুরোটাই ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। তখন আমি শুধু আমার প্রয়াত বাবা কাশীনাথ সিংয়ের মুখটিই স্মরণ করতে পারছিলাম। বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলার আগে পর্যন্তও আমার অবুঝ বাবা মনে করেননি যে আমি পেশাদার ক্রিকেট খেলার মতো যথেষ্ট ভালো খেলি।’ সাথে সাথে মাকে তিনি আনন্দের সংবাদটি জানান। তিনি বলেন, ‘আজ আমার মায়ের চোখে আনন্দের জল ছিল। তিনি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বাড়ির অন্যরাও খবরটি শুনে কান্নাকাটি শুরু করেছিল।’
অথচ এক সময় হাড়ক্ষয়ের রোগে ভুগে তাঁর ক্রিকেট খেলার স্বপ্নটাই বাদ দিতে হচ্ছিল প্রায়। ট্যাক্সিচালক বাবার অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা, সব বাঁধা পেরিয়ে তিনি অবশেষে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছেন। সাবেক বাংলা পেসার রণদেব বসুর হাত ধরেই বাংলা দলের ভিশন ২০২০ প্রকল্পের মাধ্যমেই উঠে এসেছিলেন মুকেশ। এই রণদেব তাঁর হাড়ক্ষয় রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছিলেন।
তারপর মুকেশকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজেই ধীরে ধীরে একটি একটি করে ধাপ টপকে এগিয়ে গিয়েছেন। বাংলা দল, তারপর ভারতীয় ‘এ’ দল পার করে এবার সোজা জাতীয় দলেই জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে এই গন্তব্য নি:সন্দেহে মুকেশ কুমারের আপ্রাণ পরিশ্রমের ফসল। নিজেকে তিনি বাহবা দিতেই পারেন সেইজন্য।
জীবনের নতুন অধ্যায়ের লক্ষ্য জানাতে গিয়ে মুকেশ কুমার বলেন, ‘জীবনে সবকিছুই শেখার বিষয়। আমার এই শেখাটা কখনও থেমে থাকে না। আমি যতদিন ক্রিকেট খেলব, শেখা বন্ধ করব না।” সেইসাথে ভারতীয় ‘এ’ দলের কোচ ভিভিএস লক্ষ্মণের কাছেও কৃতজ্ঞ মুকেশ। কারণ লক্ষণের দেয়া বোলিং পরামর্শ তাঁর জীবনে নাকি দারুণ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
যাইহোক এই মুহুর্তে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথের ওয়ানডে সিরিজটি মুকেশের জন্য মোক্ষম সুযোগ। জাতীয় দলে ডাক পড়াটাই তো আর শেষ কথা নয়, নিজের বোলিং দক্ষতা দিয়ে তাঁকে জাতীয় দলে নিজের জায়গাটি পাকাপোক্ত করতে পারতে হবে। ভারতীয় দলের জায়গা নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাঝে টিকে থাকতে হলে প্রতিনিয়ত দলে অবদান রাখতে হবে, নিজের ক্রিকেটীয় জৌলুসে সবাইকে মুগ্ধতায় বুঁদ করে রাখতে হবে।
মুকেশ কুমারের জন্য সামনে তাই আরও বড়ো পরীক্ষার মঞ্চ অপেক্ষা করছে। তিনি সফলকাম হন সেই প্রত্যাশা রইলো। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ছয় অক্টোবর আমরা মুকেশ কুমারকে মেন ইন ব্লুদের অংশ হিসেবে মাঠে নামতে দেখবো।