বাঘা বাঘা ক্রিকেট বোদ্ধাদের চোখে ফেবারিট ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হবেই না বা যেন, বিগত চার আসরের দুই বারের চ্যাম্পিয়নদের যতই গ্রুপপর্বের বাধা পেরোতে হোক তারা তো সবসময়ই ভয়ঙ্কর এক দল। সাবেক ক্যারিবিয়ান ক্রিস গেইল তো ছিলেন এক কাঠি সরেস। তিনি তার দেশকে টুর্নামেন্টের ফাইনালেও দেখছিলেন। তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়ে সাবেক ক্রিকেটারদের অনুমানকে শঙ্কায় ফেলা নিকোলাস পুরানের দল পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে মূলপর্বের আশা জাগালেও নিজেদের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে ৯ উইকেটে হেরে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলো।
জিতলে সুপার টুয়েলেভ, হারলে বিদায় এমন সমীকরণই ছিলো দুই দলের জন্য। তাই ম্যাচটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল অলিখিত সেমিফাইনাল। এমন ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ব্যর্থ ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডার। দুই ওপেনার কাইল মেয়ার্স ১ ও জনসন চার্লস ২৪ করে দলীয় ২৭ রানের মধ্যেই সাজঘরে ফিরে যান। এরপর ব্র্যান্ডন কিং ও এভিন লুইস শুরুর ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। ব্র্যান্ডন কিং উইকেটে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করলেও এভিন লুইস ১৮ বলে ১৩ করে দলীয় ৭১ রানে ফিরে যান।
কিং এক প্রান্তে রানের গতি সচল রাখলেও অপর দিকে অধিনায়ক নিকোলাস পুরান, রোভম্যান পাওয়েলদের মতো পাওয়ার হিটার ব্যাটাররা ব্যর্থ হলে একসময় রান ১৩০ পেরোতে পারবে না এমন শঙ্কা জাগে। তবে শেষ দিকে ওডিইন স্মিথের ১২ বলে ১৯ রানের ক্যামিওতে ১৪৬ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্র্যান্ডন কিং সর্বোচ্চ ৪৮ বলে ৬২ রান করেন। আয়ারল্যান্ডের ডান হাতি লেগস্পিনার গ্যারেথ ড্যালেনি ৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন।
১৪৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই মারমূখী ছিলেন দুই আইরিশ ওপেনার পল স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বালবার্নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের তুলোধুনো করে পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারেই বিনা উইকেটে ৬৪ রান তোলে আয়ারল্যান্ড। আগের ম্যাচের নায়ক আলজারি জোসেফ থেকে শুরু করে আকিল হোসেন , ওবেদ ম্যাককয় সবাইকে পাড়ার বোলারের কাতারে নামিয়ে আনেন দুই ব্যাটার। পাওয়ার প্লে শেষেই আয়ারল্যান্ড বলের তুলনায় রানের ব্যবধান কমিয়ে আনে। পাওয়ারপ্লে শেষে জয়ের জন্য ১০ উইকেট হাতে রেখে ৮৪ বলে মাত্র ৮৩ রানের প্রয়োজন ছিলো আইরিশদের। ইনিংসের অষ্টম ওভারে আকিল হোসেনের বলে অ্যান্ড্রু বালবার্নি ২৩ বলে ৩৭ করে ফিরে গেলে ৭৩ রানে প্রথম উইকেটের পতন হয় আয়ারল্যান্ডের।
তবে অধিনায়কের উইকেট হারালেও অপর ওপেনার পল স্টার্লিং ছিলেন দুর্দান্ত। মাত্র ৩২ বলে নিজের অর্ধশতক পূর্ন করেন আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।অধিনায়কের বিদায়ের পর উইকেটে আসা লরকান ট্যাকারকে নিয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন স্টার্লিং। দ্বিতীয় উইকেটে এই দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৬০ বলে ৭৭ রানের জুটিতে মাত্র ১৭.৩ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় আয়ারল্যান্ড। আয়ারল্যান্ডের হয়ে পল স্টার্লিং ৪৮ বলে ৬৬ রান ও লরকান ট্যাকার ৩৫ বলে ৪৫ রান করেন। স্পিনার আকিল হোসেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে একমাত্র উইকেট নেন।জেসন হোল্ডার ব্যতীত তাদের বাকি সব বোলারের ইকোনমি ছিলো ৭.৭০ এর উপরে। বোলারদের ব্যর্থতায় বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
এই ম্যাচের আগে গ্রুপ বি এর চার দলের প্রত্যেকে ১ টি করে ম্যাচ জেতায় নিজেদের শেষ ম্যাচেই জিতলে পরবর্তী পর্বে উত্তীর্ণ হবে দলগুলো এমন সমীকরণ ছিল। তবে আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায় বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেন নিকোলাস পুরান-জেসন হোল্ডাররা। তবে মূলপর্ব নিশ্চিত করলেও পরের পর্বে কাদের সাথে খেলবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। গ্রুপের শেষ ম্যাচ জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের ম্যাচে জয়ী দলের সাথে রানরেটের ব্যবধানে ঠিক হবে গ্রুপ বি এর চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ। ইতিমধ্যে গ্রুপ এ থেকে শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডস মূল পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছে।