‘শাণিত’ ভাগ্য ও একটি স্পাইডারক্যাম

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে একটি ঘটনা ক্রিকেট মাঠে স্পাইডারক্যামের ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যদিও এই প্রযুক্তিটি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্রিকেটে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৭ সালে এটি তৎকালীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল এবং ২০১০ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে আইসিসি ইভেন্টেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার প্রচলন হয়।

স্পাইডারক্যাম হল একটি কেবল সাসপেন্ডেড ক্যামেরা সিস্টেম। দেখতে ড্রোন মনে হলেও, স্পাইডারক্যাম আসলে মাঠের চার কোণের সঙ্গে যুক্ত চারটি তারের মাধ্যমে চলাফেরা করে। উক্ত ক্যামেরাটি মাঠের যেকোনো প্রান্তে ছুটতে পারে। দর্শককে মাঠের নিখুঁত দৃশ্য দেখানোর উদ্দেশ্যে এই ক্যামেরাটি ব্যবহৃত হয়।

ঘটনাটি এমন যে, শান মাসুদ পাকিস্তানের সাথে ম্যাচ চলাকালীন এই স্পাইডারক্যামের কারণেই আউট হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। প্রথমে বিরাট কোহলি শান মাসুদকে রান আউট করার একটি সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন। এদিকে এই ব্যাটার অর্ধ শতকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের একটি ডেলিভারিতে শান মাসুদ একটি বড় হিট নিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তখন বলটি স্পাইডারক্যামের তারের সাথে ধাক্কা খায়। নইলে কোহলির জন্য এটি বেশ সহজ একটি ক্যাচ হত,  যদি না বলটি স্পাইডারক্যামের ক্যাবলের সাথে ধাক্কা খেয়ে এটির দিক পরিবর্তন না করতো।

এভাবে স্পাইডারক্যামের বদৌলতে শান মাসুদ ব্যাট হাতে দ্বিতীয় জীবন পায়। শেষমেশ অর্ধ শতক পূর্ণ করে ৪২ বলে ৫২ রান করেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। যা পরবর্তীতে পাকিস্তানকে লড়াই করার মত স্কোরে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

এই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে প্রযুক্তিটি মাঠের খেলোয়াড়দের খেলাকে বাধাগ্রস্ত করছে, তাহলে আদৌও এর ব্যবহার যুক্তিযুক্ত কিনা। বিশেষ করে ভারতীয় ভক্তরা একটা সহজ ক্যাচ হতে গিয়েও না হওয়াতে কিছুটা নাখোশ।

আবার অনেকে এই ঘটনায় শান মাসুদকে ভাগ্যবান বলে অভিহিত করছেন। যেমন পাকিস্তানের একজন ভক্ত টুইটারে লিখেছেন, ‘শুধু বুঝতে পেরেছি, গতকাল শান মাসুদ কতটা ভাগ্যবান ছিলেন। তিনি একটি রান আউট থেকে বেঁচে গিয়েছেন, আবার স্পাইডার ক্যাম এর জন্য একটি ক্যাচ আউট থেকে বেঁচে গিয়েছেন। ভাগ্যিস!’

আবার অন্য একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘স্পাইডারক্যাম নয়, বরং ভাগ্যই সেখানে শান মাসুদকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।’ এর আগেও অবশ্য এই স্পাইডারক্যাম প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। ২০১৪-১৫ সালে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট সিরিজেও প্রযুক্তিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ এটির কারণে একটি ক্যাচ মিস করেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। এখন দেখা যাক, কর্তৃপক্ষ  স্পাইডারক্যাম প্রযুক্তিটির বিতর্ক থেকে কিভাবে সমাধানের উপায় খুঁজে নেয়। কারণ দিনশেষে খেলার মাঠে কোন প্রযুক্তিই খেলার স্বত:স্ফূর্ততাতে ব্যাঘাত ঘটানোর কথা না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link