এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাঠের খেলার চাইতেও বড় প্রভাবক হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টির হানায় ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া যেন এবারের আসরের নিয়মিত দৃশ্য। মাঠের লড়াইকে পাশে রেখে তাই ডিএল মেথডের হিসাব-নিকাশ কিংবা পয়েন্ট ভাগাভাগিতেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে দলগুলোকে।
২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়াতে। কিন্তু করোনা মহামারির আশঙ্কায় সেটা পিছিয়ে নেয়া হয় ২০২২ এর শেষদিকে। কিন্তু বছরের শেষভাগে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর থাকায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই আইসিসি বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য বেছে নেয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসকে। সাধারণত বসন্তের এই সময়টা বৃষ্টির মৌসুম না হলেও মহাসাগরে লা নীনার প্রভাবে পুরো মাসজুড়েই অস্ট্রেলিয়াতে হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। ফলে ব্যাহত হচ্ছে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ক্রমেই পরিণত হচ্ছে আমেজহীন এক আসরে।
এমনিতেই যেসব ম্যাচ মাঠে গড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে, সেসব ম্যাচের উত্তেজনা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বিগত আসরগুলোতেও। ছোট দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে তথাকথিত বড় দল এবং ছোট দলের মধ্যকার ব্যবধান কমে যাওয়ায় মাঠের ক্রিকেট হচ্ছে আরো জমজমাট। কিন্তু বৃষ্টিবাধায় এরমাঝেই পরিত্যক্ত হচ্ছে ম্যাচ, ফলে আগ্রহ হারাচ্ছেন বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটপ্রেমীরা।
অথচ আইসিসির হাতে সুযোগ ছিল ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়া রোধ করার। সাধারণত বিশ্বব্যাপী বড় সিরিজগুলোতেও বর্তমানে রিজার্ভ ডে রাখা নিয়মিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি কিংবা কোনো কারণে নির্ধারিত দিনে খেলা পরিচালনা করা না গেলে যেন দর্শকরা ম্যাচের উত্তেজনা থেকে বঞ্চিত না হন সে কারণে পরেরদিন আয়োজন করা হচ্ছে ম্যাচ। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে আইসিসিকে সে পথে হাঁটতে দেখা যায়নি।
বরং তাঁদের ভাবখানা এমন রিজার্ভ ডে নামক কোনো পন্থার অস্তিত্বই নেই। অথচ এবারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালেও ছিল রিজার্ভ ডে, ফলে বৃষ্টিবাধায় একদিন খেলা না হলে শেষদিন বিশ্ব পেয়েছিল নতুন চ্যাম্পিয়নকে। বিশ্বকাপ নিয়ে যেন খানিকটা উদাসীনই আইসিসির কর্তাব্যক্তিরা।
টুর্নামেন্টের আয়োজক ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও দায় এড়াতে পারবে না এহেন অব্যবস্থাপনার জন্য। আয়তনে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম বড় দেশ হওয়ায়, দেশের একপ্রান্তে যখন তুমুল বৃষ্টিপাত অন্যপ্রান্তে তখন কাঠফাটা রোদ। আকাশ পথে যাতায়াত ব্যবস্থা থাকায় এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতেও খুব বেশি সময় লাগে না। কিন্তু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া খরচ বাঁচাতে একদিনের সবগুলো ম্যাচ আয়োজন করছে একই শহরে। উদাহরণস্বরূপ ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তান-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দুটো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল একই দিনে, মেলবোর্নে।
দুটো ম্যাচেই বাগড়া দিয়েছে বৃষ্টি, ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডের ম্যাচে তবু ফলাফল পাওয়া গেছে। অন্যদিকে অপর ম্যাচে মাঠে গড়াতে পারেনি একটি বলও। অথচ সেদিনের ম্যাচটা চাইলেই আয়োজন করা যেতো ব্রিসবেন কিংবা সিডনিতে। দুটো ম্যাচ দুই শহরে হলে অন্তত একটি ম্যাচ পুরোপুরি আয়োজনের নিশ্চয়তা থাকতো। আবার সেই মেলবর্নেই হাই ভোল্টেজ অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচ হয়েছে পরিত্যাক্ত। সেই সাথে আয়ারল্যান্ড-আফগানিস্তান ম্যাচও দেখেছে একই ফলাফল।
কিন্তু একই শহরে একই দিনে দুই কিংবা তিনটি ম্যাচের শিডিউল থাকায় তুমুল বৃষ্টির ফলে পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে দিনের সবগুলো ম্যাচই, যেটা ক্রিকেটের বিশ্বায়নের জন্য সুখকর হবে না মোটেই। শোনা যাচ্ছে, আর্থিক খরচ কমাতেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্ত। অথচ বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে অর্থ কোনো সমস্যা হবার কথা নয়, যেখানে কেবল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকেই আয় হবার কথা প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। বাকি ম্যাচগুলো থেকেও এত পরিমাণ অর্থ না এলেও, টাকার অংকটা খুব একটা কমও নয়।
নানা ভুল সিদ্ধান্ত আর অব্যবস্থাপনার জন্য ক্রিকেটপ্রেমীদের তাই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বৃষ্টিদেবতার দিকেই। সব হিসাব-নিকাশ উল্টেপাল্টে দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ তাই হয়ে উঠেছে অনিশ্চয়তার আসর হিসেবে।