‘ক্রিকেট ভালো লাগে না, কিন্তু টিভিতে ওকে দেখে ভালো লাগতো’

বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে সাকিবের মাঠে বড় আতঙ্কের নাম হওয়ার কথা শিশিরের; শিশির পড়লেই বল গ্রিপ করতে মুশকিল! কিন্তু কার্যত জীবনসঙ্গীনি করেছেন উম্মে আহমেদ শিশিরকেই।

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শিশির কখনোই ক্রিকেটভক্তদের একজন নন। তবে ক্রিকেট দেখতে গিয়েই দেখলেন বাংলাদেশ দলে দারুন স্মার্ট একটা ছেলে; ছেলেটির প্রেমেও পড়লেন। সেই প্রেম টিভি থেকে ফেসবুক হয়ে জীবনে। দু’জনের সংসারও দারুণ চলছে। সেই সংসার ও মানুষ সাকিবকে নিয়ে বলেছেন শিশির।

সাকিবের সঙ্গে আপনার পরিচয় কিভাবে হল?

পরিচয়? পরিচয় তো আসলে ফেসবুকে। এর আগে আমি ওকে টিভিতে দেখেছি। কিন্তু পরিচয় ফেসবুকে।

আপনি তো ক্রিকেট নাকি তেমন একটা দেখতেন না। তাহলে ক্রিকেটার সাকিবের প্রেমে পড়লেন কী করে?

আসলে আমাদের বাসায়, আমেরিকাতে বাংলা চ্যানেল দেখা যায়। এখন যতবার খেলার খবর বা খেলা দেখায়, ওকে দেখা যায়। তারপর ও তো ক্যাপ্টেন ছিল; ওর অনেক কথাবার্তা দেখাতো। ক্রিকেট ভালো লাগে না। কিন্তু টিভিতে ওকে দেখে ভালো লাগতো। ক্রিকেটার হিসেবে ঠিক না…

মানে, সাকিবের ক্রিকেট নয়, সাকিবের ইমেজটা ভালো লেগেছে…

ঠিক। এটাই হয়েছে। ওর ইমেজটা ভালো লেগেছে। ওকে দেখে ভালো লেগেছে।

এই সাকিবের মতো বিশাল তারকাকে বিয়ে করে ফেললেন। এখন কী ব্যাপারটা একটা বিড়ম্বনা মনে হয়? মানে, ওকে নিয়ে ইচ্ছে হলেই কোথাও যেতে পারেন না বা সবকিছু মন মতো করতে পারেন না।

নাহ। আসলে আমরা তো ওরকম বের হই না খুব একটা। অনেক কিছু করার ইচ্ছে থাকলে হয়তো ওরকম মনে হত। কিন্তু আমরা দু’জন মিলেই আড্ডা দিতে পছন্দ করি। খুব একটা বের হই না। তাই এটা সমস্যা মনে হয় না।

তারপরও এক ধরণের বাধা তো আছেই। আপনার বাংলাদেশি বন্ধুদের তো দেখছেন যে, তারা স্বামী নিয়ে ইচ্ছে মতো ঘুরছে। আপনি সেটা পারছেন না। এটা বিরক্তিকর মনে হয়?

একটু। একটু মনে হয়। তবে এসব মেনে নিয়েছি। এ নিয়ে আলাদা করে এখন আর ভাবি না।

সাকিবের অনেক প্রসঙ্গেই ইদানিং আপনার নাম চলে আসে। বিয়ের আগেও সে আলোচনায় ছিল। কিন্তু বিয়ের পর যখনই তার আলোচনা আসে, আপনার নাম চলে আসে। ফেসবুকে এগুলো তো দেখেন। বেশিরভাগ সময় আপনার নামটা আসে নেগেটিভ ভাবে। এটা কিভাবে নেন?

এটা আসলে আমি একরকম প্রস্তুত ছিলাম। আমি মেনে নিয়েছি যে, এমনই হবে। একজন তারকার যে কোনো বিষয়ে অন্য কাউকে টেনে আনা বা আলোচনায় জড়ানো; এগুলো হবে বলেই আমি মনে করেছিলাম। ফলে এসবে আমি খুব একটা এখন আর চিন্তিত হই না। মানুষ তার কথা বলবে। সাকিব তারকা; ওকে নিয়ে লোকেরা কথা বলবে। আমি সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই না।

সাকিবকে নিয়ে কখনো ভয় হয়? তারকাদের নানারকম স্ক্যান্ডাল থাকে। সাকিব কখনো কোনো স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়তে পারেন, এমন ভয় হয়?

উহু…. নাহ। আমাদের বোঝাবুঝি, বিশ্বাস অনেক ভালো।

সাকিব কেমন মানুষ?

খুব ভালো।

খুব ভালো?

হ্যাঁ, খুব ভালো।

বন্ধু হিসেবে ভালো?

খুব।

আড্ডা দেয় আপনার সাথে?

সারাক্ষণ আমরা এক সাথে থাকি। আলাদা তো খুব কম থেকেছি আমরা। ক্রিকেটের বাইরে প্রায় সবটুকু সময় আমরা একসাথে থাকি। তাই প্রচুর আড্ডা দেই আমরা।

আড্ডায় ক্রিকেট আসে কখনো?

একদম না।

কি নিয়ে আড্ডা দেন আপনারা?

কি নিয়ে…. এই শপিং করতে যাওয়া, বিভিন্ন গল্প বলা, ফিউচার প্লান। মুভি। হ্যাঁ, ঘরে কিছু মুভি দেখি; তবে একটু কম। দেশের বাইরে গেলে অনেক মুভি দেখি।

কী মুভি দেখেন? বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি…

হিন্দি কম-বেশি দেখি। ইংরেজি মুভি অনেক দেখি। বাংলাটা যেহেতু আমার বুঝতে একটু সমস্যা হয়, তাই একটু কম দেখি।

সাকিবের ভালো দিক তো অনেক বলতে পারবেন। একটু খারাপ দিক বলেন?

খারাপ দিক তো…। আচ্ছা। মাঝে মাঝে মাথা খুব গরম হয়ে যায়।

এটা সারা দেশ জানে…

হ্যাঁ। আবার অবশ্য দ্রুতই ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

এটাও আমরা জানি।

আচ্ছা। তাহলে আরেকটা খারাপ দিক হল কোথাও বের হওয়ার সময় খুব বিরক্ত করে, রেডি হওয়ার সময় খুব তাড়াহুড়ো করে।

ওকে। শেষ প্রশ্ন। সাকিবকে বিয়ে করা মানে তো শুধু সাকিব নয়, সাকিবের পুরো পরিবারের অংশ হওয়া। আমি সাকিবের বাবা-মা-বোনের কাছে এটা জানতে চেয়েছিলাম। তারা আপনাকে নিয়ে খুব খুশী। আপনি একটু বলেন, কতোটা আপন হতে পেরেছেন এই পরিবারে?

খুব। এখানে সবাই আমাকে দ্রুত আপন করে নিয়েছেন। আমার খুব ভালো লাগে। এনজয় করি। এই পরিবারের একটা মেয়ের মতো হয়ে গেছি।

____________________

[প্রকাশিত-সাকিব আল হাসান: আপন চোখে, ভিন্ন চোখে; ঐতিহ্য]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link