এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরো একবার নিজেদের আনপ্রেডিক্টেবল তকমার যথার্থতা প্রমাণ দিল পাকিস্তান। গ্রুপপর্বের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বাদ পড়ার দ্বারপ্রান্তে থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাবর আজমের দল। টানা তিন ম্যাচ জিতে শেষ দল হিসেবে সেমিফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেছে তাঁরা।
- ভাগ্যের সহায়তা
প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর সেমির পথটা আর নিজেদের আয়ত্ত্বে ছিল না পাকিস্তানের। নানা সমীকরণ মিললেও শেষ দিনে প্রয়োজন ছিল নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার হার। আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও সেটাই ঘটেছে, ডাচদের কাছে হেরে চূড়ান্ত বিস্ময় উপহার দিয়েছে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ফেভারিট দল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে গেলে হয়তো আজকের অন্য কোন গল্প নিয়ে হাজির হতে হতো।
কিন্তু সবচেয়ে প্রয়োজনের মূহুর্তেই ভাগ্য বিধাতা সহায় হলেন পাকিস্তানের। এরপরের পথটা পাকিস্তানের নিজেদের হাতেই ছিল, বাংলাদেশকে হারিয়ে তাঁরা নিশ্চিত করেছে সেমির টিকিট।
- দুধর্ষ পেস বোলিং লাইনআপ
পাকিস্তান এমনিতেই পেস বোলারদের স্বর্গরাজ্য। আর বর্তমানে সেই রাজ্যের রাজা শাহীন শাহ আফ্রিদি। সদ্য ইনজুরি থেকে ফেরা আফ্রিদি পুরনো ছন্দ ফিরে পাননি প্রথম দুই ম্যাচে। ফলে তাঁর নিষ্প্রভ পারফরম্যান্সের দিনে ম্যাচ হেরে গেছে পাকিস্তানও।
সময় যত গড়িয়েছে আফ্রিদি তত ধারালো হয়েছে, পাকিস্তানও খুঁজে পেয়েছে জয়ের পথ। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনালে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য ছিলেন তিনি, একাই তুলে নিয়েছেন চার উইকেট। সেমির ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও তাঁর বোলিং জাদুর দেখার অপেক্ষায় থাকবে পুরো ক্রিকেটবিশ্ব।
- শাদাব খান
মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট দরকার, শাদাবকে বোলিংয়ে নিয়ে আসো। আস্কিং রানরেট বেড়ে যাচ্ছে, শাদাবকে ব্যাটিংয়ে পাঠাও। এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সকল কাজের কাজি যেন শাদাব খান। ব্যাটিং কিংবা বোলিং ছাড়াও ফিল্ডার হিসেবেও দুর্দান্ত এই অলরাউন্ডার।
এই বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত ১০ উইকেট নিয়েছেন শাদাব। তাছাড়া মাঝের ওভারগুলোতে রান আটকে রাখার কাজেও দারুণ সফল তিনি, লেগস্পিনার হয়েও রান দিয়েছেন মাত্র ৬.২২ ইকোনমিতে। এছাড়া ব্যাট হাতেও ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের দরকারী সময়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর ৫২ রানের ইনিংস পরবর্তীতে নির্ধারণ করে দিয়েছিল ম্যাচের ফলাফল। যদি গ্রুপপর্ব শেষেই ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরষ্কার দেয়া হতো, তাহলে নিশ্চিইভাবে সেটা উঠতো শাদাব খানের হাতে।
- চাপমুক্ত পাকিস্তান
প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর কার্যত পাকিস্তানের সেমির আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল। দেশের সাবেক ক্রিকেটাররা থেকে শুরু করে ভক্ত-সমর্থকরা সবাই গ্রুপপর্ব শেষেই দেশের বিমানে উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন। শেষের তিন ম্যাচে তাই কোনো প্রত্যাশা ছিল না বাবর আজমের দলের উপর।
আর চাপমুক্ত হয়ে খেলার কারণেই কিনা সেরা খেলাটা বেরিয়ে এসেছে শেষ ম্যাচগুলোতে। এই মূহুর্তে পাকিস্তানের হারাবার কিছুই নেই, যেখানে সেমির বাকি দলগুলোর উপর পাহাড়সম প্রত্যাশার চাপ। নিউজিল্যান্ড কখনো বৈশ্বিক আসর জেতেনি, ইংল্যান্ড শেষ জিতেছে এক দশকের আগে, আর ভারতের মাথায় দেড়শ কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব। সেমির লড়াইতে তাই কিউইদের চাইতে এগিয়েই থাকবে প্রত্যাশাবিহীন পাকিস্তান।
- দর্শকদের উৎসাহ
পাকিস্তানের সমর্থকদের জন্য বেশ ঘটনাবহুল এক সপ্তাহ গেছে। প্রথমে কোনো আশাই ছিল না দলের, পরে গলা ফাটিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের হয়ে। ডাচরাও হতাশ করেনি, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে যেন পুর্নজাগরণ ঘটিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেটের। পরে বাংলাদেশকে হারানোর পর অসাধারণ এক রবিবার কাটিয়েছেন পাকিস্তানি সমর্থকরা। এবারের বিশ্বকাপে আরো কয়েকবার এমন দিনই কাটাতে চাইবেন তাঁরা।