স্থায়ী হোক এই সমাধান

একটু খেয়াল করুন, বিপিএলে প্রতি দলে চার জন করে বিদেশি খেলে থাকেন, কখনো সংখ্যাটা বাড়ানোও হয়। তার মানে যদি এই এডিশনেও বিদেশিদের আমরা নিতাম, তাহলে হয়তো দেশীয় খেলোয়াড়দের এমন সব পারফর্ম্যান্স আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে যেত।

গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) বা তার আগেরটায়, কোনটায় তা ঠিক মনে নেই। বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন, প্রতি বিপিএল এর আগে একটা আলাদা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হবে। সেখানে শুধু দেশি খেলোয়াড়েরা খেলবেন। প্রিমিয়ার ডিভিশন টি-টোয়েন্টি নামে একটা টুর্নামেন্ট অবশ্য হয়েছিলও। কিন্তু সেটাও নিয়মিত চলেনি। তবে এবারের বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ নিঃসন্দেহে দেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্টকে একটা নতুন মাত্রা দিল।

এমনিতেই এবারের টুর্নামেন্টটি ছিল দেশি খেলোয়াড়দের নিয়েই। এ কারণেই এবারের টুর্নামেন্টে আলাদা করে চোখ ছিল সবার। আর সেখানে স্থানীয় খেলোয়াড়েরা এমন সব পারফর্ম্যান্স উপহার দিয়েছে, যা আসলে তুলনার অতীত।

একটু খেয়াল করুন, বিপিএলে প্রতি দলে চার জন করে বিদেশি খেলে থাকেন, কখনো সংখ্যাটা বাড়ানোও হয়। তার মানে যদি এই এডিশনেও বিদেশিদের আমরা নিতাম, তাহলে হয়তো দেশি খেলোয়াড়দের এমন সব পারফর্ম্যান্স আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে যেত।

রাজশাহীর আনিসুল ইমনের কথাই ধরুন না। ছেলেটার খেলা দেখেই বোঝা গেছে, ও পিঞ্চ হিটার। ওর সবচাইতে বড় যে বিশেষত্বটা দেখা গেছে, ও কখনও সাহস হারায় না। যেকোন বল ও মারতে চেষ্টা করে, সীমানা ছাড়া করতে চেষ্টা করে। এই যে সাহসটা, এটাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মূল বিষয়।

এখন আপনারাই বলুন, বয়সভিত্তিক কোন দলেই না থাকা আনিসুল হক ইমনকে আপনারা কয়জন চিনতেন? রাজশাহীর দলে চারজন বিদেশী নিলে দুইজন নির্ঘাত ব্যাটসম্যান তো থাকতেনই। সেখানে আনিসুল হক ইমনকে হয়তো বেঞ্চে বসে থাকতে হত। তাহলে কি আমরা এমন টি-টোয়েন্টি’র যোগ্য খেলোয়াড়টিকে আবিষ্কার করতে পারতাম?

আবার ধরুন, জেমকন খুলনা তাঁদের পেস বোলিং লাইনআপ সাজিয়েছিল আল-আমিন, হাসান মাহমুদ, শহিদুলকে নিয়ে। মূলত অভিজ্ঞ আল-আমিনের সাথে হাসান মাহমুদ আর শহিদুলের বোলিং ছিল বেশ উপভোগ্যই। এখন জেমকন খুলনা যদি তাঁদের দলে চারজন বিদেশি রাখত, একজন হয়তো বোলারই রাখত। তাহলে হয়তো এই পেসত্রয় দেখার সৌভাগ্য আমাদের হত না।

ঢাকার কথাই ধরা যাক। বারবার খারাপ করার পরও সাব্বির রহমানকে ক্রমাগত সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মূল কারণও কিন্তু ছিল দলে কোন বিদেশি না থাকা। আবার আকবর আলী যে ঢাকার ফিনিশার রূপে আবির্ভাব, কে জানে বিদেশিদের সুযোগ দিতে গিয়ে আন্ডার নাইন্টিনের এমন খেলোয়াড়দের পর্যাপ্ত খেলোয়াড়েরা সুযোগ পেত কিনা।

এই টুর্নামেন্টটাকে সবচাইতে বেশি মনে রাখা যাবে অনূর্ধ্ব-১৯ এর খেলোয়াড়দের পারফর্ম্যান্সের জন্যে। ইমন সেঞ্চুরি করেছে, আকবর আলী অমানবিক স্লগ করেছে, শান্ত অধিনায়কত্ব করেছে। এতসব কিছুর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে কারণ আমাদের হাতে বিদেশী ছিল কম।

এমনটা ভাবার কারণ নেই যে, বিদেশিদের অন্তর্ভুক্তি আর করা যাবেনা। যাবে আর তার দরকারও আছে। টুর্নামেন্টের রঙ বাড়াতে তা জরুরীও। তবে, দেশি খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়ার জন্যে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের মত টুর্নামেন্ট আসলে নিয়মিতই হওয়া জরুরী।

এটা আসলে দেশি খেলোয়াড়দের জন্য একটা বাছাই টুর্নামেন্ট হতে পারে।

এই যে আমরা বলি, বিপিএলে অমুক চান্স পায় না, তমুক চান্স পায় না। এদের আসলে কী পারফরম্যান্স দেখে টি-টোয়েন্টি দলে নেওয়া হবে? দেশে আর কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয় না। ফলে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স আর ৫ ওভারের খেলা দেখে বিপিএলে দেশি খেলোয়াড় নামানো হয়। এর সাথে কিছু অনুমান শক্তি কাজে লাগানো হয়।

বিপরীতে এমন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ যদি চলতে থাকে, তাহলে বিপিএলের দলগুলোর সামনেও দেশি খেলোয়াড়দের একটা পরিষ্কার চিত্র থাকবে। তখন আর যোগ্য কারো আড়ালে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।

তাই বঙ্গবন্ধু কাপ কেবল করোনাকালীন সমাধান নয়, স্থায়ী এক আয়োজন হয়ে উঠুক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...