অভিশাপের বিষে বিষাক্ত ফ্রান্স

‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ কতরকম চমক দেখায়। কতশত আনন্দের মুহূর্ত উপহার দেয়। সেই সাথে নিদ্রাহীন রাতের জন্মও দেয়। সেই নিদ্রাহীন রাত হয়ত বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা পার করছে। ফ্রান্সের প্রতিটা খেলোয়াড় নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন যে ঠিক কি কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্যে। একটা অদ্ভুত রকম একটা সংস্কৃতি চলমান। বিশ্বকাপের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা নাকি অভিশপ্ত।

এই অভিশাপ নামক সংস্কৃতির শুরুটা অবশ্য ফ্রান্স থেকেই। যদিও বহু আগে একদফা ব্রাজিলের সাথে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। তবে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জেতার পর থেকে রীতিমত লাগাতার হয়ে আসছে বিষয়টি। ইউরোপের যেকোন চ্যাম্পিয়ন দল পরের আসরের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিচ্ছে বিশ্বকাপের মহামঞ্চ থেকে। বেশ একটা ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই কাজটা হয়ে আসছে। সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে ফ্রান্স আরও একবার এই অভিশাপের বলি হতে চলেছে।

একটু পেছনে ফেরা যাক। ১৯৬২ এর বিশ্বকাপ নিজেদের করে নেওয়ার পর, প্রথমবারের মত ব্রাজিল ১৯৬৬ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়। সবাই হয়ত ভেবেছিল সেটা শেষবার। তবে না। ইউরোপীয়ান দলগুলো এটাকে রীতিমত এক সংস্কৃতির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। শেষবার পশ্চিম জার্মানী ১৯৯০ এর বিশ্বকাপ জেতার পর অবিভক্ত জার্মানী ১৯৯৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি পৌঁছাতে পেরেছিল। এরপর থেকেই মূলত অভিশাপের কালো থাবায় কুপকাত ইউরোপীয়ানরা।

২০০২ সালে, রীতিমত জালে একটি বলও জড়াতে পারেনি ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বে তাদেরকে স্তম্ভিত করে ১-০ গোলার জয় তুলে নেয় প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা সেনেগাল। এরপর উরুগুয়ের সাথে গোলশূন্য ড্র। শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের কাছে ২-০ গোলের হার। এসব কিছু মিলিয়ে বিশ্বকাপ জেতার পরের আসরেই বাজেভাবে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ। ২০০২ এ ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন। ল্যাতিন আমেরিকার দেশটি বিশ্বকাপ জেতার পর একবারই প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়েছিল।

২০০৬ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি পৌঁছেছিল সেলেসাওরা। ২০০৬ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইউরোপের আরেক দেশ ইতালি। ফাইনালে ফ্রান্সকে রোমাঞ্চকর এক পেনাল্টি টাইব্রেকারের হারিয়ে নিজেদের চতুর্থ শিরোপা জেতে। ব্যাস! এরপর আবার সেই একই দৃশ্য। ২০১০ বিশ্বকাপে রোমের দূর্গ ধুলিসাৎ। প্রথম দুই ম্যাচে ১-১ ব্যবধানে ড্র প্যারাগুয়ে ও নিউজিল্যান্ডের সাথে। এরপর শেষ ম্যাচটি আজ্জুরিরা হেরে বসে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা স্লোভাকিয়ার সাথে। ব্যবধানটা ছিল ৩-২। অবস্থান টেবিলের তলানিতে।

২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন দল স্পেন ২০১৪তে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ। ২০১৪ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি বাদ ২০১৮তে। জার্মানির প্রথম রাউন্ডে দ্বিতীয় দফা ঘটনা ছিল রাশিয়া বিশ্বকাপ। প্রথমটি ঘটেছিল ১৯৩৮ সালে। এই একটা বিষয় থেকেই আন্দাজ করে নেওয়া যায় অভিশাপের বিষয়টি একেবারেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার নয়। ফ্রান্সও নিশ্চয়ই চাইলেই ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। দলটির অবস্থা রীতিমত করুণ। এবারের বিশ্বকাপটা ভীষণরকম চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে লেস ব্লুসদের।

কেননা দলের অন্যতম আস্থাভাজন দুই মিডফিল্ডার এনগোলো কান্তে ও পল পগবা বিশ্বকাপের আগেই ইনজুরি কারণে বাদ পড়েছেন। বিশ্বকাপের পূর্ণাঙ্গ দল ঘোষণার পর ডিফেন্ডার প্রেসনেল কিম্পেম্বে দল থেকে ছিটকে গেছেন। তরুণ মিডফিল্ডার অরেলিয়েন শুয়েমেনিও পুরোপুরি ফিট নয়। অন্যদিকে ঠিকঠাক অনুশীলন করতে পারছেন না দলের আক্রমণভাগের কাণ্ডারি করিম বেনজেমা। এতসব কিছুর মাঝে দলে আরও এক ইনজুরির বাগড়া।

অনুশীলনে বাজে রকমের ইনজুরিতে পড়েছেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা ক্রিস্টোফার এনকুনকু। তরুণ এই তারকা ফুটবলার জার্মার ক্লাব আরবি লেইপজিগের হয়ে দারুণ এক মৌসুম কাটাচ্ছিলেন। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলার প্রাক্কালেই ইনজুরিতে পরেন আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড়। এমন পরিস্থিতিতে কোচ দিদিয়ের দেশমের কপালের চিন্তার ভাঁজ নিশ্চয়ই আরও ঘণিভূত হচ্ছে। তাঁর মাথায়ও নিশ্চয়ই অভিশাপের বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছে। শেষমেশ ফ্রান্স এই অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পাবে কি না, সেটাই এখন দেখবার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link