টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন সময় থেকেই বাবর আজমের পাকিস্তান দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে ফাইনালের ব্যর্থতার কারণে সেই সমালোচনা আরও প্রখর হয়েছে। বাবরের অবস্থাটা আসলে দাঁড়িয়েছে দুই নৌকায় পা রাখার মত।
এক দিকে অধিনায়কত্বের মত গুরু দায়িত্বের ভার, অন্যদিকে নিজের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স সামলাতে গিয়ে তিনি যেন রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। দিনশেষে দেখা যাচ্ছে, না পারছেন নেতৃত্বের দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন করতে, না পারছেন ক্রিকেটার হিসেবে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে।
এই সংকটের সমাধানের জন্য একটাই পথ আছে আপাতত। সেই উপায় হল অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো। এবার তো পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি বাবরকে তেমনই এক গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন। তাঁর মতে, পাকিস্তান দলের সব ফরম্যাটের অধিনায়ক বাবর আজমের উচিত টি–টোয়েন্টির অধিনায়কের পদটি ছেড়ে দেওয়া। ফলে নিজের থেকে চাপের বোঝা কমিয়ে ব্যাটিংয়ের দিকে মনোনিবেশ করার সুযোগ পাবেন বাবর।
বাবরের জায়গায় পাকিস্তান দলের অন্য কোন সদস্যদের ঘাড়ে বিশ ওভারের ক্রিকেটের দায়িত্বটা দেয়া উচিত। শহীদ আফ্রিদি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাবর আজমের উচিত টি–টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়ে, তার ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেওয়া। আমাদের আরও খেলোয়াড় আছে যারা টি–টোয়েন্টি ফরম্যাটে দলকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। শাদাব, রিজওয়ান কিংবা শান মাসুদ চাইলেই এই দায়িত্বটা পালন করতে সক্ষম।’
অবশ্য বাবর পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। তাঁর নেতৃত্বে ৬৬ টি ম্যাচের মধ্যে ৪০ টি ম্যাচ জিতেছে পাকিস্তান। অর্থাৎ, তাঁর অধিনায়কত্বের ছায়াতলে জয় শতকরা ৬৫.৫৭ ভাগ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাবরকে দিয়ে যে অধিনায়কত্ব ও মাঠের পারফরম্যান্স একই সাথে হয়ে উঠছে না, এটি যে কেউই অকপটে স্বীকার করবেন।
এদিকে আবার বাবর আজমকে ভীতু অধিনায়কের তকমা দিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক বাঁ-হাতি পেসার মোহাম্মদ আমির। এই ক্ষোভের কারণ অবশ্য গোটা বিশ্বকাপের আসরে মোহাম্মদ নওয়াজকে দলের প্রয়োজনে ঠিকমত ব্যবহার করায় ব্যর্থতা। ভারতের বিরুদ্ধে শেষ ওভারের বোলিংয়ে ম্যাচ জেতাতে না পারলেও ড্রেসিং রুমে নওয়াজের উপর আস্থা দেখিয়েছিলেন বাবর। একটা ভাইরাল ভিডিও তে দেখা যায় বাবর নওয়াজকে সান্তনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘চিন্তা করো না, তুমি আমার ম্যাচ উইনার। তোমার উপর আমার আস্থা আছে।’
আদতে সেই ভরসা বাণীর ভিডিও নেট দুনিয়ায় বাহবা পাইয়ে দেয় অধিনায়ক বাবরকে। তবে বাস্তবতা হল এর পরের ম্যাচগুলোতে মোহাম্মদ নওয়াজ যেন কিছুটা উপেক্ষিতই ছিলেন। বিশেষ করে ফাইনালে যখন স্পিনার দিয়ে কিছুটা হলেও ইংরেজদের সমস্যায় ফেলা যাচ্ছিল, সেই অবস্থায় নওয়াজের হাতে বল তুলে দেয়া উচিত ছিল বাবর আজমের। কিন্তু তিনি তা করেননি।
এই বিষয়ে মোহাম্মদ আমির বলেন, ‘নিজের খেলোয়াড়দের উপর আসলেই বাবরের আস্থা নেই। সাজঘরে শুধু ওসব কথার কথা বলেছিল সে। যখন তুমি কারও ওপর আস্থা রাখার কথা বলছ, তখন তাঁর উপর সত্যিই বিশ্বাস দেখাও। সাধারণত নওয়াজ পিএসএলের প্রথম ওভার বল করে। তাঁর ওপর বাবরের আস্থা রাখা উচিত ছিল। নওয়াজ আগেও এমন কিছু ম্যাচ জিতিয়েছে, যেটা অকল্পনীয়। ফাইনালে হ্যারি ব্রুক যখন শাদাবকে খেলতে পারছিল না তখন সেখানে নওয়াজের মত স্পিন অস্ত্রকে কাজে লাগানো উচিত ছিল। দলের অধিনায়ককে এসব সিদ্বান্তের ব্যাপারে সাহসী হতে হয়।’
এদিকে আরেক সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার সালমান বাটও বাবরকে অধিনায়কের পদটি নিয়ে নিজের যোগ্যতায় প্রশ্ন তুলার আহ্বান জানিয়েছেন। বাটের মতে সব ভাল খেলোয়াড়ই ভাল অধিনায়ক হয় না। তিনি বলেন, ‘দলের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক বাবরের নিজেকেই প্রশ্ন করা উচিৎ যে তিনি কি টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে সক্ষম সামনে।’