ইনজুরি আর নেইমার- সমার্থক বিচারে বলতে গেলে এ দুই বিশেষ্যই এক। বিশেষত, বড় আসর আসলেই যেন ইনজুরি নামক এক দুর্ভাগ্যের শিকার হন ব্রাজিলিয়ান এ সেনসেশন। ২০১৪ বিশ্বকাপের মাঝপথে ছিটকে গিয়েছিলেন বাজে এক ইনজুরির কারণে। এরপরে ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকাটাও খেলা হয়নি ইনজুরির কারণে। আর সর্বশেষ, এবারের বিশ্বকাপে সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ইনজুরিতে পড়লেন তিনি। তাতে যদিও বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায়নি, কিন্তু খেলতে পারবেন না গ্রুপ পর্বের বাকি ম্যাচগুলো।
এখন নেইমারকে ছাড়া পরের দুই ম্যাচের জন্য ব্রাজিলের পরিকল্পনাটা কী হবে? ব্রাজিলের এই দলটা যেমন তারকায় পরিপূর্ণ তাতে নেইমার কেন্দ্রিকতা ব্রাজিলের মধ্যে কখনোই ছিল না। তারপরও দলের সেরা তারকাকে হারানো ব্রাজিলের জন্য বড়সড় একটা ক্ষতিই বলা যায়। এখন কোচ তিতে তাঁর ট্যাক্টিস কিংবা ফরম্যাশনে কতটুকু পরিবর্তন আনবে সেটিই প্রশ্নের বিষয়।
নেইমারকে বাদ দিলে আক্রমণ ভাগে এখন পর্যন্ত আছেন ভিনিসিয়াস, রিচার্লিসন, রাফিনহা। ব্রাজিলের কোচ সম্ভবত এই ত্রয়ীকে দিয়েই পরবর্তী ম্যাচের জন্য দল সাজাবেন। নেইমারের অনুপস্থিতিতে দারুণ কার্যকর হতে পারতেন লিভারপুলের ফরোয়ার্ড ফিরমিনো। পুরো মৌসুমজুড়ে ছিলেন দারুণ ছন্দে। ব্রাজিলের জন্য ফলস নাইন রোলে দারুণ কিছু হতে পারতেন এই ফিরমিনো। কিন্তু তিতের ২৬ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঠাঁই হয়নি এ ফুটবলারের। তাই ফিরমিনোকে এ বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে না নিশ্চিতভাবেই।
তবে ফিরমিনো না থাকলেও ব্রাজিল স্কোয়াডে আছেন রদ্রিগো। বয়স হিসেবে ধরলে, দারুণ এক প্রতিভা এই রদ্রিগো। চাপের মুহূর্তে দারুণ খেলার সহজাত প্রতিভা আছে তাঁর মধ্যে। রিয়াল মাদ্রিদের গত আসরের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পেছনে তাঁর অবদান ছিল অনেক। তাই তিতে তাঁর স্কোয়াডের এ ফরোয়ার্ডকে পরের ম্যাচে বাজিয়ে দেখতেই পারেন।
সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়ার চেয়ে খেলার মান বিচারে বেশ খানিকটা এগিয়ে। বিশেষত তাদের ডিফেন্স সাইডটা বেশ শক্তিশালী। আর এজন্য ব্রাজিলেরও প্রয়োজন মধ্যমাঠে বেশ খানিকটা দখল। তাই ফ্রেডকে দিয়ে মিডফিল্ডে খেলাতে পারেন তিতে। আর লুকাস পাকেতাকে আরেকটু উপরে উঠিয়ে খেলাতে চাইবেন তিনি। যাতে করে নেইমারের অনুপস্থিতি কিছুটাও ঘোচানো যায়। কারণ নেইমার ফরোয়ার্ড হলেও কিছুটা নেমে খেলতেন। ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগে বল মেকিংয়ের জন্য তাঁর কার্যকারিতা ছিল অনেক। এখন পরের ম্যাচে নেইমারের এই রোলটা প্লে করতে পারেন পাকেতা।
নেইমারের ইনজুরি ছাড়াও ব্রাজিল স্কোয়াডে আরেকটি দুঃসংবাদ হল, তাদের রাইট ব্যাক ডানিলোও ইনজুরিতে পড়েছেন। আর এ কারণে বিকল্প রাইট ব্যাক খুঁজতেই হচ্ছে তিতেকে। ৩৯ বছর বয়সী দানি আলভেজ রাইট ব্যাকেই খেলে থাকেন। ব্রাজিল একাদশে তিনি এখন প্রথম পছন্দ না হলেও তিতে তাঁকে একটা সুযোগ দিতেই পারেন। তবে এই জায়গাটায় হয়ত ফ্রেডকেই দেখা যাবে একাদশে। যদিও ফ্রেড রাইট ব্যাক থেকে আরেকটু উপরে উঠে খেলবেন।
আর ডিফেন্সে ব্রাজিলের একাদশে যথারীতিই থাকছেন মিলিটাও, মার্কুইনহস, সিলভা আর আলেক্স সান্দ্রো। তবে লেফট ব্যাক সান্দ্রোকে একটু সতর্ক থাকতেই হচ্ছে। কারণ ৪ বছর আগে, রাশিয়া বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের কাছে ব্রাজিল ম্যাচ হেরেছিল এই লেফট সাইডের দুর্বলতার কারণেই। যদিও, আলেক্স সান্দ্রোও বেশ পরীক্ষিত ডিফেন্ডার।
নেইমারের ইনজুরি দলের জন্য অবশ্যই একটা ক্ষতি। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে একটি অনুপ্রেরণা নিতেই পারে তিতের দল। ২০১৯ কোপা আমেরিকাতেও দলে ছিলেন না নেইমার। তারপরও সেবার শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল। তাই এবারের বিশ্বকাপে নেইমার ইনজুরিতে পড়লেও এখন পর্যন্ত ঠিক সেই ভাবে ব্যাকফুটে পড়েনি ব্রাজিল। কারণ ব্রাজিল দলটা কখনোই ব্যক্তিকেন্দ্রিক ছিল না। এর উপর তিতের হাতে এবারের বিশ্বকাপে নির্দিষ্ট পজিশনে প্রচুর অপশন আছে। এখন সেই অপশন গুলোই পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে তাঁকে।
এতে করে বরং, এক দিক দিয়ে সুফলও আছে। বিশ্বকাপের মঞ্চে যে কোনো ফুটবলার সক্ষমতা যাচাই করে নেওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত সার্বিয়ার বিপক্ষ প্রথম ম্যাচ জয়ে জি গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে আছে ব্রাজিল। অতি নাটকীয় কিছু না হলে, ব্রাজিল রাউন্ড অফ সিক্সটিনে নিশ্চিতভাবেই যাচ্ছে। তাই কোচ তিতে কেও সেই দূর পথের পরিকল্পনা আগেই সাজিয়ে রাখতে হবে। প্লান বি সব সময় ঠিক রাখতে হবে। কারণ দলের সেরা তারকাকে তিনি সব সময় নাও পেতে পারেন।
ব্রাজিলের এই দলটায় যেমন রসদ আছে, তাতে এবারে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার সেলেসাওরা। এশিয়ার মাটিতে শেষবার যখন বিশ্বকাপ হয়েছিল তখন শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল। দুই দশক বাদে আবার বিশ্বকাপ গড়িয়েছে এশিয়ায়। এবার কি তবে হেক্সাজয়ের আনন্দে ভাসবে ব্রাজিল? দুই দশকের বিশ্বকাপ শিরোপা খরা কিংবা হেক্সাজয় হবে কিনা, তা জানতে আর কিছু সপ্তাহের অপেক্ষা মাত্র।