যেকোন দিন, যেকোন উইকেটেই সাকিব আল হাসানের বল খেলা কঠিন। তার উপর আজ তিনি দিনের সেরা বোলার। ইতোমধ্যেই ঝুলিতে চার উইকেট তুলে নেয়া সাকিবকে তাই দেখেশুনেই খেলতে চাইলেন দীপক চাহার। সাকিবের ওভারে খেলা নিজের প্রথম দুই বলই জানপ্রাণ দিয়ে ডিফেন্ড করেছেন। তবে তৃতীয় বলটায় পারলেন না।
সাকিবের ছুঁড়ে দেয়া বলটা ঠিকই আঘাত করলো প্যাডে। সাথে সাথেই আম্পায়ার মাইকেল গফ আঙুলের ইশারায় আউট জানিয়ে দিলেন। ভারতের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের পঞ্চম উইকেট। ওয়ানডে ফরম্যাটে এই নিয়ে চতুর্থ ফাইফার। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব মানেই রেকর্ড, সাকিব মানেই অনন্য সব কীর্তি।
সাকিব নিজের একটা জাদু দেখিয়ে বিস্মিত করবেন গোটা দুনিয়াকে সেটা সবারই জানা। তবুও প্রতিনিয়ত মানুষকে বিস্মিত করার নতুন একটা পথ তিনি খুঁজে নেন। এজন্যই বোধহয় তাঁকে নিয়ে রহস্যটা এত বেশি। এজন্যই সাকিব আল হাসান হয়ে উঠেছেন ক্রিকেট দুনিয়ার সর্বকালের সেরাদের একজন।
ভারতের ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে আউট করে বাংলাদেশকে প্রথম উল্লাসে মাতিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে ভারতের বুকে কাপন ধরানোর কাজটা করেছেন সাকিবই। ইনিংসের এগারোতম ওভারেই মূলত থাবাটা দিয়েছেন সাকিব। এক ওভারেই রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির উইকেট ভারতের ব্যাটিং লাইন আপকে ভেঙে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।
সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট করলেন রোহিত শর্মাকে। একেবারে ক্লিন বোল্ড। তবে সাকিব আরো খানিকটা উল্লাস বাচিয়ে রেখেছিলেন। একটা বল পরেই ধরা গেল বিরাট কোহলি। নয়া ওয়ানডে অধিনায়ক লিটন যেন উড়লেন। লিটনের এমন ক্যাচে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন খোদ বিরাট কোহলিও।
ব্যস, সাকিব-লিটনের এমন ম্যাজিকের পর ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ আর জবাবই দিতে পারেনি। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দর ও শার্দুল ঠাকুরের উইকেটও গেছে সাকিবের পকেটেই। শেষে চাহারের উইকেটটা নিয়ে পূরণ করেছেন নিজের পাঁচ উইকেট।
সাকিবের এমন বোলিং তোপে মিরপুরে দিশেহারা ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ। একমাত্র লোকেশ রাহুল ছাড়া আর কেউ অর্ধশতকও করতে পারেননি। রাহুলের ৭৩ রানের ইনিংসই যা একটু বাচিয়ে রেখেছে ভারতকে। শেষ পর্যন্ত ৪১.২ ওভারেই অল আউট হয়ে যাওয়া ভারত করতে পেরেছে মাত্র ১৮৬ রান।
সাকিবের পাঁচ উইকেটের পাশাপাশি অসাধারণ বোলিং করেছেন এবাদত হোসেনও। এই পেসারও পরিকল্পনা করে আউট করেছেন ভারতের ব্যাটার শ্রেয়াস আইয়ারকে। ভারতের ব্যাটারকে বাউন্সার দিয়েই ভুগিয়েছেন। মিরপুরের উইকেটেও তাঁর এমন বোলিং সত্যিই নজর কাড়ে। এবাদতের নামের পাশেও যুক্ত হয়েছে চার উইকেট। আরেক পেসার তাসকিন আহমেদের অভাব একেবারের বুঝতে দেননি তিনি।
ফলে ম্যাচ জিততে হলে বাংলাদেশকে এখন করতে হবে ১৮৭ রান। মিরপুরে নিজেদের চেনা উইকেটে এই রান তাড়া করা খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা না লিটনদের জন্য। অধিনায়ক লিটনও নিশ্চয়ই চাইবেন ভারতের বিপক্ষে এই সিরিজটা স্মরণীয় করে রাখতে।
ওদকে সবমিলিয়ে এটি ছিল সাকিবের ক্যারিয়ারের ২৪ তম ফাইফার। আর ওয়ানডে ফরম্যাটে এই নিয়ে পাঁচ উইকেট পেলেন চতুর্থ বারের মত। অথচ ম্যাচের আগে ঠিকঠাক বোলিং অনুশীলনটাও করেননি সাকিব। তবে বাইশ গজে তিনিই সেরা, অপ্রতিরোদ্ধ। এত বিস্ময়ের জন্ম দেয়া এই সাকিব শুধুই কী একজন ক্রিকেটার, নাকি তিনি মিথ, কেবলই রূপকথা।