যদি বলি শুধু জয়ের বিশ্বাসেই শেষ অবধি মাঠে ছিলাম, তবে তা হবে ডাহা মিথ্যা। আসলে আমার একটা অভ্যাস হলো, ম্যাচ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কোনোসময়ই মাঠ ত্যাগ করি না; সে যতই ফলাফল অনুমিত হোক। মূলত এ অভ্যাসের কারণেই আজ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একটা নাটকীয় জয়ের চাক্ষুষ সাক্ষী হতে পারলাম।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মেহেদী হাসান মিরাজ বললেন, তাঁদের (মিরাজ-মুস্তাফিজ) নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখাটা না কি সবচেয়ে জরুরি ছিল যেটা তাঁরা রেখেছিলেন। কিন্তু আমার মোটেও সে বিশ্বাস ছিল না। আফিফ আউট হওয়ার পর আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। আর আশাটা পুরোপুরি হারিয়ে বসি নবম উইকেট পতনের সাথে সাথে। শেষ উইকেটে দরকার ৫১! কীভাবে সম্ভব, বলুন!
সে ‘অসম্ভব’কেই আজ সম্ভবে পরিণত করেছেন মিরাজ ও মুস্তাফিজ। ১২৮-১৩৬, ৮ রানের মধ্যে পাঁচ-পাঁচটা উইকেট হারানোর পর আমার মাথায় শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল, ‘বারবার কেন এই ভারতের সাথেই আমাদের এরকমটা হয়?’
মিরাজ কুলদ্বীপ সেনের এক ওভারে দুটা ছক্কা হাঁকালেন। না, দুই ছয় দেখেই আশায় বুক বাঁধিনি। এগুলোকে কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমানোই বলে মনে করেছি। কিন্তু ক্রমেই আত্মবিশ্বাসী মিরাজকে আমার চোখে পড়তে শুরু করে।
তাঁর সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত ও পরিণত ব্যাটিংয়ে একটু একটু করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। তখন ধরেই নিয়েছি, নিশ্চিত পরাজয়টা আরেকটা ‘তীরে এসে তরি ডুবানো’র পরাজয়ে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। কেননা ভারতের বিপক্ষে বিগত ৭ বছরে আমাদের প্রায় সবগুলা পরাজয়ের চিত্রই যে ছিল এমনটা!
বাংলাদেশের তখন জয়ের জন্য দরকার ১৪ রান। মিরাজ আগের ওভারে দীপক চাহারকে ৩টা চার মারার পাশাপাশি ১৫ রান তুলেছেন। তখনও বিশ্বাস হয়নি বাংলাদেশ জিতবে। মনে হচ্ছিল, এতক্ষণ ‘হারানোর কিছু নেই’ পরিস্থিতিতে মেরে খেলা মিরাজ এবার জয়ের কাছাকাছি আসায় একটু সাবধানি ভঙ্গিতে খেলবেন এবং আজকের দিনের সহজাত খেলাটা থেকে বেরিয়ে গিয়ার শিফট করতে গিয়েই নিজের উইকেটটা খোয়াবেন।
এমনকি শেষদিকে যখন ২ রান দরকার, তখনও মনটা ‘কুডাক’ দিচ্ছিল। এই বুঝি আরেকটা ১ রানে হারার ক্ষত যোগ হতে যাচ্ছে ঝুলিতে৷ আর এসব অবিশ্বাস বা নেতিবাচক চিন্তার একটাই কারণ- ভারতের বিপক্ষে আমাদের ইতিহাস বা সবশেষ কয়েকবছরে এই ভারতের বিপক্ষেই আমাদের বেশ কয়েকটা শেষ ওভারের (এমনকি শেষ বলের) পরাজয়ের রেকর্ড।
অবশেষে যেন আমাদের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ল! এতদিন এই নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এত এত ক্লোজ ম্যাচ হারতে হারতে যে জুজুটা সবাইকে পেয়ে বসেছিল, সেটার আপাত অবসান ঘটল আজ। আর যাঁরা তা ঘটালেন, তাঁদের নাম আলাদা করে এখন বলাটাও বাহুল্য।
ভারতের বিপক্ষে আজকের জয়ে আমার অনুভূতিটা ঠিক ‘ঘাম দিয়ে জ্বর সারা’র মতো। নি:সন্দেহে অবিশ্বাস্য এ জয়ের ম্যাচে আমাদের ভুলত্রুটির অভাব ছিল না। ভুলত্রুটি ছিল বলেই জয়টা ‘অবিশ্বাস্য’র পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। তাতে অবশ্য খেলোয়াড়দের বাহবা দেওয়ার সুযোগ নেই।
আজ আর ওইসব ভুলত্রুটি নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছে করছে না। সেসব নিয়ে না হয় বিশ্লেষকরা আওয়াজ তুলবেন! আমি বাংলাদেশের একজন পোড়-খাওয়া সমর্থক হিসেবে বরং উদযাপনটাই করতে থাকি।