গ্রহের সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? সে নিয়ে তর্ক চিরকালের। বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার সাথে সাথে মেসির নাম এখন নিশ্চিত ভাবেই উচ্চারিত হবে পেলে আর ম্যারাডোনার সাথে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই বিশ্বকাপ জেতান ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
মেক্সিকো বিশ্বকাপ জেতার পর সতীর্থের কাঁধে চড়ে বিশ্বকাপ হাতে ম্যারাডোনার উদযাপনের ছবিটি আইকনিক হয়ে ছিল এতদিন। এবার নিজের ক্যারিয়ারের পূর্ণতা দেয়া সেই বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার পর সাবেক সতীর্থ সার্জিও এগুয়েরোর কাঁধে চেপে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে মেসির ছবিটিও যুক্ত হবে বিশ্বকাপের আইকনিক ছবির তালিকায়।
৮৬’র বিশ্বকাপ একক নৈপুণ্যে জিতিয়ে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন দিয়াগো ম্যারাডোনা। সর্বকালের সেরাদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছিলেনও সেই বিশ্বকাপ জেতার পর। সেই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল জয়ের পাশপাশি কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’র জন্য ম্যারাডোনাকে মনে রেখেছেন ফুটবল ভক্তরা।
ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে আলবিসেলেস্তেরা। মেক্সিকোর ইস্তাদিও অ্যাজতেকায় ম্যারাডোনার সেই আইকনিক ছবিই যেন আবার ফিরে এল কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামের মঞ্চে।
নিজের ক্যারিয়ারে৷ সম্ভাব্য সব কিছুই জিতেছেন। আক্ষেপ ছিল শুধু একটি বিশ্বকাপের। অমরত্বের স্বাদ পেতে যে বিশ্বকাপ জিততেই হতো মেসিকে। ৮ বছর আগে মারাকানা স্টেডিয়াম থেকে ফিরেছিলেন চোখের জলে। ৮ বছর আবার সেই বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চ।
তবে, কাতারের লুসাইল স্টেডিয়াম এবার খালি হাতে ফেরায়নি গ্রহের সবচেয়ে বড় ফুটবল তারকাকে। শ্বাসরুদ্ধকর এক ফাইনালে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরে ম্যারাডোনার উত্তরসূরীরা। ফাইনালে ২ গোল করে রাঙিয়ে রেখেছিলেন মেসিও।
অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন বিশ্বকাপের অপূর্ণতা নিয়েই ক্যারিয়ার শেষ করতে হবে ক্ষুদে জাদুকরকে। ম্যারাডোনার সেই বিখ্যাত ছবির মত আর কোনো ছবি কখনো দেখা যাবে না। কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপে এসে ক্যারিয়ারের সম্ভাব্য সব অর্জন পূর্ণ করলেন মেসি।
ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফান্তিনোর কাছ থেকে বিশ্বকাপ শিরোপা নেবার পরেই সতীর্থদের সাথে উল্লাসে মাতেন মেসি। এরপর মেসির আইডল ডিয়াগো ম্যারাডোনার সেই বিখ্যাত ছবির পুনর্মঞ্চায়ন হয় কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে।
নিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সাবেক আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার সার্জিও অ্যাগুয়েরোর কাঁধে চড়ে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে মাঠ প্রদক্ষিন করেন মেসি। হৃদপিন্ডের সমস্যাজনিত কারণে ফুটবল থেকে অবসর নিলেও বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের সাথেই ছিলেন অ্যাগুয়েরো। মেসিকে কাঁধে নিয়ে পুরো মাঠে ঘুরে দর্শকদের সাথে আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিশ্বকাপ জয় উদযাপন করেন এগুয়েরো।
সেই বয়সভিত্তিক দল থেকে একসাথে খেলেছেন মেসি ও এগুয়েরো। জাতীয় দলে এগুয়েরোর অবসরের আগেই দুইজন একসাথে খেলেছেন দীর্ঘদিন। বিশ্বকাপ দলে না থাকলেও অন্যান্য বারের মত এবারও মেসির সঙ্গে একই কক্ষে থাকছেন অ্যাগুয়েরো। মেসির ক্যারিয়ার পূর্নতা পাবার দিন মেসিকে কাঁধে চড়িয়ে আরেকটি ঐতিহাসিক ছবির অংশ হয়ে রইলেন অ্যাগুয়েরোও।