ভিআইপি বক্সে উচ্ছ্বাস প্রকাশ কিংবা মাঠে নেমে খেলোয়াড়দের সান্ত্বনা দেয়া – বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে বিস্তৃত পরিসরে পারফর্ম করতে দেখা গিয়েছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোকে। ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে জেতার পর ভিআইপি বক্সে বসেই উদযাপন করেছিলেন তিনি, আর এবার ফাইনালে পরাজয়ের পর এমবাপ্পে, লরিসদের সাথে মাঠে দেখা যায় তাঁকে।
এখানেই শেষ নয়, ফরাসি ফুটবলারদের সঙ্গে একসাথে কথা বলতে ড্রেসিংরুমেও গিয়েছেন ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। সে সময় আবেগী এক বার্তা দিয়েছেন তিনি; ম্যাঁক্রো বলেন, ‘তোমরা একটি দারুণ দল; অন্য অনেক দল বিশ্বকাপ খেলতে এসে পরপর দুইবার ফাইনালে উঠতে কিংবা ট্রফি জয়ের এত কাছে যেতে পারে না।’
বিশ্বকাপের ফাইনালের শুরুটা একেবারেই মন মতো হয়নি ফ্রান্সের। ডি মারিয়া আর মেসির দাপটে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল তারা; তবে ম্যাচের আশি মিনিটের মাথায় কিলিয়ান এমবাপ্পের ঝড়ে ম্যাচে ফিরে আসে ২০১৮ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তবে অতিরিক্ত সময়ে আবারও এগিয়ে যায় লিও মেসির আর্জেন্টিনা, কিন্তু এমবাপ্পের হ্যাটট্রিকে সমতায় ফিরে আসে দলটি। যদিও টাইব্রেকারে হেরে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে ফরাসিরা।
কিলিয়ান এমবাপ্পের মাথা জড়িয়ে সান্ত্বনা দিতে দেখা যায় ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোকে; দলের সেরা তারকাকে হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্রই বলেছেন তিনি। এর আগেও এমবাপ্পের দলবদল ইস্যুতে উঠেছিল ম্যাঁক্রোর নাম। এমবাপ্পে ছাড়া অন্যান্য বিষণ্ণ খেলোয়াড়দের সাথেও অবশ্য নিঃসংকোচে কথা বলেছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
তবে ইমানুয়েল ম্যাক্রোর এমন আচরণকে কাঠগড়ায় তুলছেন অনেক সমালোচক। তারা মনে করেন, এমবাপ্পের সাথে এমন আঠার মত যুক্ত হওয়া মোটেই ভাল আচরণ ছিল না প্রেসিডেন্টের জন্য। ফ্রান্সের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ম্যানুয়েল বোম্পার্ড বলেন, ‘খেলাধুলার সাথে রাজনীতি মেশানো উচিত নয় আমাদের।’
আরেকটি গণমাধ্যম বলে, ‘তাঁর (ইমানুয়েল) দায়িত্ব এবং পরিচয়কে এই ধরণের মুহুর্তে বড় করে দেখা উচিত নয়। ম্যাচের ফলাফল যেমনই হোক; সেটি দু:খজনক বা গৌরবময় হোক না কেন, তা শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের এবং সম্ভবত কর্মীদের জন্য।’
সমালোচকরা সমালোচনা করলেও জাতীয় দলের প্রতি ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর এমন নি:স্বার্থ সমর্থন প্রশংসা কুড়িয়েছে অনেকের। জনপ্রিয় একটি গণমাধ্যম ৪৪ বছর বয়সী এই রাষ্ট্রপরিচালককে ফ্রান্সের বারোতম খেলোয়াড় হিসেবে উপাধি দিয়েছে।
বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে ইনজুরির কারণে ফ্রান্সের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার ছিটকে যান মাঠ থেকে। মিডফিল্ডার পল পগবা ও এনগোলো কান্তে, ডিফেন্ডার প্রেসনেল কিম্বেপে এবং ফরোয়ার্ড এনকুনকু এবং করিম বেনজেমার মত তারকা খেলোয়াড়দের হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল ফ্রান্স।
তবে, কোচ দিদিয়ের দেশমের বিচক্ষণতা এবং স্কোয়াডের বাকিদের দারুণ পারফরম্যান্সের সাহায্যে বাজিমাত করেছে ফ্রান্স। একাদশে প্রথম পছন্দদের কয়েকজন ফুটবলারকে ছাড়াই দ্বিতীয়বারের মত আসরের ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল দলটি, ফাইনালেও উজ্জীবিত আর্জেন্টিনার সাথে সমানে-সমানে লড়েছিল তাঁরা।
সেমিফাইনালের আগেই কাতারে এসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো; সে ম্যাচে মাঠে বসেই দলের জয় দেখেছিলেন তিনি। সেদিনও ম্যাচ শেষে দলের ড্রেসিংরুমে এসে খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলেছিলেন এই রাজনীতিবিদ।
এছাড়া রানার আপ দলটিকে সংবর্ধনা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে ম্যাক্রো সরকার। নতুন বছরে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ক্রীড়ামন্ত্রী অ্যামেলি ওউদিয়া ক্যাস্টেরা।
এমন লড়াকু পারফরম্যান্সের প্রদর্শনীর পর বড়সড় সংবর্ধনা পেতেই পারেন ফ্রান্স জাতীয় ফুটবল দল। কিন্তু যদি সমালোচকদের সন্দেহ সত্যি হয় অর্থাৎ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এমন সমর্থনের পেছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে থাকে তবে সেটি নি:সন্দেহে দুই পক্ষের জন্যই সৃষ্টি করবে বিব্রতকর পরিস্থিতি।