মহাশক্তিধর ব্রাজিল বা জার্মানিরা যা পারেনি তাই করে দেখিয়েছে মরক্কো। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে তাঁরা গেছে সেমিফাইনালে। সেখানে ফ্রান্সের কাছে হারলেও প্রমাণ রেখেছে নিজেদের শক্তিমত্তার। তাই, দেশে ফিরলেও ফিরেছে তাঁরা বিজয়ীর বেশেই। দেশটির ফুটবল ইতিহাসে এমন স্মরণীয় সময় যে আর আসেনি।
কাতার বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরে বীরোচিত সম্বর্ধনা পেলো মরক্কো ফুটবল দল। সদ্য শেষ হওয়া কাতার বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে মরক্কো। আরব বা আফ্রিকান কোন দল হিসেবে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপে শেষ চার-এ খেলার যোগ্যতা অর্জন করা মরক্কো দলটিকে অভ্যর্থনা জানাতে দেশটির রাজধানীতে সমবেত হয়েছিল দশ হাজারের বেশি ভক্ত।
একটি খোলা বাসের ছাদে দাঁড়িয়ে কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুইসহ দলটি হাত নাড়াতে নাড়াতে বিমান বন্দর থেকে রাবাতের কেন্দ্রস্থলের দিকে যাত্রা করে। এ সময় পুলিশের কয়েক ডজন গাড়ী ও মোটর সাইকেল লাইট ফ্ল্যাশ করে এবং সাইরেন বাজিয়ে তাদের সঙ্গে রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিনিধিরা জানায়, সমুদ্রতীরবর্তী শহরটিতে এ সময় আতশবাজির বিচ্ছুরনের সঙ্গে জনতাকে উল্লাস করতে দেখা যায়। মেকনেস শহরের ২৭ বছর বয়সি ওয়েটার অ্যাডাম নাজাহ বলেন,‘ আমাদের দলকে নিয়ে আমি খুবই গর্বিত। হয়তো আগামী আসরে তারাই কাপ জিতবে।’
অনেক সমর্থককে দেখা যায় জাতীয় দলের জার্সি ও লাল পতাকা হাতে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। খেলোয়াড়দের বহন করা বাসটি রাবাতের কেন্দ্রস্থল পার হবার সময় সেখানে উপস্থিত ৫৪ বছর বয়সি আবদেলজাব্বার বাউরোয়া বলেন, ‘আমি আমার উচ্ছাস বর্ননা করতে পারছি না। তারা আমাদের মরক্কান ও আফ্রিকার জন্য গৌরব বয়ে এনেছে।’
কাতার বিশ্বকাপে স্পেন ও পর্তুগালকে হারিয়ে শেষ চারে পৌঁছানোর আগে বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে গঠিত গ্রুপের শীর্ষস্থান নিয়ে নকআউটে উঠেছিল এটলাস লায়ন্সরা। শেষ পর্যন্ত স্থান নির্ধারনী ম্যাচে ২০১৮ বিশ্বকাপের রানার আপ ক্রোয়েশিয়ার কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হয় মরক্কো।
বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে দলটিকে দেখতে আসা ১৯ বছর বয়সি আইন বিভাগের ছাত্রী লায়লা মেসুর বলেন, ‘তাদেরকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে ইচ্ছে করছে। আমরা তাদের দেখেছি, কিন্তু বাসটি বেশ দ্রুত চলে গেছে। এমন আনন্দ এর আগে আমি অনেকদিন পাইনি।’
পরে দলটি রাজপ্রাসাদে পৌঁছায়। ‘ঐতিহাসিক এই অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে’ সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানান রাজা ৬ষ্ঠ মোহাম্মদ। যুবরাজ মউলে হাসানকে সঙ্গে নিয়ে রাজা পুরস্কৃত করেন জাতীয় বীরদের। মরক্কান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি, কোচ এবং খেলোয়াড়দের সবাইকেই পুরস্কৃত করেন রাজা।