যা কিছু প্রথম তা নিশ্চয়ই বেশ আনন্দ দেয়। প্রতিটা রন্ধ্রে একটা কম্পনের সৃষ্টি করে। বাইরে থেকে সেই কম্পন কেউ দেখে না, কেউ বোঝে না। তেমনই এক অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন সরফরাজ আহমেদ। তিনি প্রথমবার ক্রিকেট মাঠে নেমেছেন বিষয়টা তেমন নয়। সেই ২০০৭ সাল থেকে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। পাকিস্তান ক্রিকেটের কতশত জয়ের সাক্ষী তিনি সেই সাথে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতা অধিনায়ক। তবুও সেই অনুভূতির সাথে দেখা হয়ে গেছে তাঁর আরও একটিবার।
প্রায় তিন বছর পর তিনি আবার নেমেছিলেন টেস্ট খেলতে। তাও আবার নিউজিল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে এখন পালা বদলের হওয়া বইছে। নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি। তিনি দায়িত্ব পেয়েই যেন দলের ভেতর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেছেন। নিয়মিত পারফর্মার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বসিয়ে সরফরাজ আহমেদের অন্তর্ভুক্তি যে তাঁরই সিদ্ধান্ত সেটা আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।
আর ফিরে এসে তাঁর যেন প্রথমবারের অনুভূতিই হয়েছে। অবশ্য একদিক দিয়ে বিষয়টা প্রথমই। ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের হয়ে ৪৯টি টেস্ট ইতোপূর্বেই খেলে ফেলেছেন সরফরাজ। তবে তাঁর এই দীর্ঘদিনের খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি দেশের মাটিতে টেস্ট খেলার সুযোগই পাননি। অবশ্য পাকিস্তানেও ক্রিকেট ছিল নির্বাসিত। অবশেষে দিন বদলেছে। তবুও সুযোগ পাচ্ছিলেন অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। এর পেছনে অবশ্য তিনি কাউকে দোষারোপ করতে পারবেন না। কেননা তাঁর পরিবর্তে মোহাম্মদ রিজওয়ান ছিলেন রানে।
আর ঠিক সে কারণেই তাঁকে সময় কাঁটাতে হয়েছে মাঠের বাইরে। প্রায় তিন বছর আগে তিনি খেলেছিলেন নিজের ক্যারিয়ারের ৪৯ তম টেস্ট। শেষ যেবার খেলেছিলেন, তখন অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন সরফরাজ। আবার যখন ফিরলেন, এবারও অর্ধ-শতক করলেন তিনি। তবে এবারের অর্ধ-শতকটা অন্য সব বারের থেকে অনেকটাই ভিন্ন। কারণ দেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তনের ইনিংসে অর্ধ-শতক পাওয়া সহজ নয়। তাছাড়া ততক্ষণে ১০০ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় পাকিস্তান।
সরফরাজ ব্যাটিং করতে নেমে ভীষণ রকম নার্ভাস ফিল করছিলেন। তাঁর কাছে মনে হয়েছে প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামার মতই এক অনুভূতি ছিল সেটি। তিনি বলেন, ‘আমি যদি আমার খেলা প্রথম তিন বলের অনুভূতির কথা বলতে চাই তাহলে বলতে হয়, যদি কোন মিটার দিয়ে আমার তখনকার হৃদকম্পন মাপা হত, তাহলে সেটা ভেঙে যেতে পারত।’ মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে ব্যাট হাতে সরফরাজ নেমেছিলেন করাচির সেই বাইশ গজে।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগে আরও একটি উইকেট হারিয়ে ফেললে ভীষণ চাপের মুখে পড়ে যেত পাকিস্তান। সেটা সরফরাজের মত অভিজ্ঞ ক্রিকেটার খুব ভাল করেই জানতেন। তবুও লম্বা একটা বিরতির পর খেলতে নামা একটা স্নায়ুবিক চাপের সৃষ্টি নিশ্চয়ই করে। তাছাড়া নিজের জন্মভূমির মাটিতে প্রথমবারে মত খেলতে নামা বিষয়টা নিশ্চয়ই বেশ রোমাঞ্চের জন্ম দেয়। সব মিলিয়ে দারুণ কঠিন সময়ই পার করতে হয়েছে সরফরাজ আহমেদকে।
সরফরাজ এদিনে নিজের ইনিংসের শুরুর অনুভূতি নিয়ে আরও বলেন, ‘আমার হৃদকম্প অতি দ্রুত হচ্ছিল। ঠিক অভিষেক ম্যাচের মত অনুভূতি, যেহেতু আমি অনেক দিন বাদে টেস্ট খেলতে নেমেছি এবং ম্যাচের কঠিন মুহূর্তে আমাকে নামতে হয়েছে।’ সেই অনুভূতিকে সরিয়ে সরফরাজ চলে যান মধ্যাহ্ন বিরতিতে। সঙ্গী তাঁর অধিনায়ক বাবর আযম। ফিরে এসে এই দুইজন জুটি গড়েন। পাকিস্তানকে একটা খাদের কিনারা থেকে তুলে আনে সরফরাজ ও বাবর জুটি। দুই জনে মিলে গড়েন ১৯৬ রানের জুটি।
প্রাথমিক সেই নার্ভাসনেস কাটিয়ে উঠতে গোটা দল থেকে শুরু করে অধিনায়ক বাবর আজম তাঁকে সহয়তা করে। এরপরই মূলত নিজের আসল রুপটা দেখাতে শুরু করেন সরফরাজ। বাইশ গজে সাবলীল এক ইনিংস খেলে তুলে নেন অর্ধ-শতক। নিজের ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম ম্যাচে, পঞ্চাশোর্ধ একটি ইনিংস। শেষ অবধি ৮৬ রানে থামেন সরফরাজ। সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিশ্চয়ই তাঁকে পোড়াচ্ছে ভীষণ। তবুও নিজের প্রত্যাবর্তনটা এর থেকে ভালভাবে হয়ত ঘটাতে পারতেন না সরফরাজ।
করাচির ছেলে, করাচিতেই তাঁর প্রত্যাবর্তন। সেই সাথে প্রাথমিক সব চাপ সামলে তিনি খেলে ফেললেন দলকে উদ্ধার করার মত এক ইনিংস। মুদ্রার অপর পিঠে খালি হাতেই ফেরত যেতে পারতেন তিনি। তবে অভিজ্ঞতার তো একটা মূল্য রয়েছে নিশ্চয়ই। সরফরাজ চিত্রায়ন করলেন অভিজ্ঞতা ফেলনা নয়।