জমজমাট আরও একটি মৌসুমের সকল আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ খেলোয়াড় নিলাম। সেটাও ইতোমধ্যেই সেরে ফেলেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের আসরকে সামনে রেখে আয়োজিত হয়েছিল মেগা নিলাম। সব দলই ঢেলে সাজিয়েছিল নিজেদের শিবির। তবুও একটি আসর শেষে বেশ কিছু শূন্যস্থান তৈরি হয়। সেগুলো পূরণের জন্যই আয়োজিত হয়েছে মিনি নিলাম। এবারের মিনি নিলাম অবশ্য বেশ আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
কেননা আইপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়ার রেকর্ড নতুন করে লেখা হয়েছে। সেই সাথে বিদেশি খেলোয়াড়দের চড়া মূল্যে ক্রয় করতে দেখা গেছে। আবার মুদ্রার অপর পিঠে বেশকিছু নামকরা খেলোয়াড়কে নিয়ে আগ্রহই প্রকাশ করেনি ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, ডেভিড উইসিদের মত খেলোয়াড়রা শেষ বেলায় দল পেয়েছেন। এরপরও বেশকিছু বড় নাম রয়ে গেছে অবিক্রিত। তাদেরকে ঘিরেই থাকছে আজকের আলোচনা।
- ক্রিস জর্ডান (ইংল্যান্ড)
গেল আসরেও ক্রিস জর্ডান মাঠ মাতিয়েছেন অন্যতম সফল দল চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। দীর্ঘ সময় ধরেই তিনি আইপিএলের মঞ্চে বেশ সুপরিচিত। ২৮ ম্যাচ খেলে তিনি ২৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তবে ক্রমশ তাঁর পারফরমেন্সের গ্রাফ হয়েছে নিম্নমুখী। যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে বিদায় নিশ্চিতে সহয়তা করেছিলেন ক্রিস জর্ডান।
এরপরও তাঁর মত অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটারকে দলে ভেড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি কোন ফ্রাঞ্চাইজি। মাত্র ২ কোটি রুপি ভিত্তি মূল্য থাকার পরও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ক্রিস জর্ডানকে তাই এবার দেখা যাবে না ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে।
- মুজিব উর রহমান (আফগানিস্তান)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের বেশ একটা কদর রয়েছে। টি-টোয়েন্টির মেজাজ বুঝে তাঁরা নিজেদের সেরাটা নিঙড়ে দিতে পারে ময়দানে। তেমনই এক নাম মুজিব উর রহমান। বিশ্ব ক্রিকেটে তিনি বেশ সমাদৃত। ২০১৮ সালে আইপিএলে প্রথম সুযোগ পাওয়ার পর তিনি আলো ছড়িয়েছিলেন। ১১ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে প্রায় সাতের কাছাকাছি ইকনোমি রেটে নিয়েছিলেন ১৪টি উইকেট।
তবে এরপরই শুরু হয় তাঁর ছন্দপতন। তিনি নিজের সক্ষমতার প্রদর্শনটা ঠিকঠাক করতে পারছিলেন না। যার ফলশ্রুতিতে ২০২২ আসরের মেগা নিলামেও তিনি ছিলেন দলছাড়া। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে এবারের নিলামেও তিনি রয়েছেন অবিক্রিত। আফগানিস্তান জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে ঘরে বসেই উপভোগ করতে হবে আইপিএল।
- তাবরাইজ শামসি (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা বলের ক্রিকেটের আস্থাভাজন একজন সদস্য তাবরাইজ শামসি। তবে আইপিএলে তিনি নিয়মিত মুখ নন। ২০১৬ সালে তিনি প্রথমবার খেলেছিলেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে। এরপর ২০২১ সালে তিনি খেলেন। দুই দফাই তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলেছেন।
তবে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ তিনি কোন বারই রাখতে পারেননি। তাই তিনি আইপিএলে নিয়মিত নয়। ২০২৩ আইপিএলেও তাঁকে দেখা যাবে না। এক কোটি রুপির বেস প্রাইসে তাঁকে দলে নেয়নি কোন দল।
- জিমি নিশাম (নিউজিল্যান্ড)
২০১২ সাল থেকে নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ধারাবাহিক ছিলেন জিমি নিশাম। টি-টোয়েন্টিতে তিনি সব সময়ই বেশ প্রসিদ্ধ। একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের কদর দিনে দিনে বাড়লেও, নিশাম হাঁটছেন যেন ভিন্ন পথে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বিভিন্ন দলে খেলার পরও তিনি থেকে গেছেন ২০২৩ এর মিনি নিলামে।
এর কারণটা বেশ স্পষ্ট। ১২ ম্যাচে তিনি মাঠে নেমে মাত্র ৬১ রানের পাশাপাশি আটটি উইকেট শিকার করতে পেরেছেন তিনি। এমন দূর্বল পরিসংখ্যানই তাঁকে দলে না নেওয়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। তাঁকে দুই কোটি রুপিতেও দলে নিতে আগ্রহ দেখায়নি কোন দল।
- ডেভিড মালান (ইংল্যান্ড)
অভিজ্ঞতায় ভরপুর ডেভিড মালান। তাছাড়া মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ তিনি। ইংল্যান্ড দলের হয়ে ম্যাচ জয়ের বেশকিছু ইনিংসও তিনি খেলেছেন। তাছাড়া ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলারও অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ তিনি। তবে এবারের আইপিএল তাকেও দেখতে হবে নিজ ঘরে বসেই।
কেননা এক কোটি রুপি ভিত্তি মূল্য থাকা সত্ত্বেও তাঁকে দলে নেয়নি কোন দল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রায় ১৩৮ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা একজন ব্যাটার আইপিএলের ফ্রাঞ্চাইজিদের আকৃষ্ট করতে পারেননি।
- তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ)
হারিয়ে যাওয়ার শেষ বিন্দু থেকে ফিরে এসেছেন তাসকিন আহমেদ। ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়ে অভিষেক হওয়া তাসকিন আহমেদ সময়ের সাথে হয়েছেন পরিপক্ক। নিজেকে বদলে ফেলেছেন তিনি। পারফর্ম করছেন নিয়ম করে। বাংলাদেশের বেশ কিছু খেলোয়াড়দের মত তিনিও নিজের নামটি রেজিস্টার করেছিলেন।
তবে ব্যস্ত সূচির কারণে তরুণ এই পেসারকে দলে নেয়নি কোন ফ্রাঞ্চাইজি। ক্যারিয়ারের দারুণ একটা সময় পার করার পরও তিনি থাকছেন আইপিএল থেকে উপেক্ষিত। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের প্রতি আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজিদের অনীহা অবশ্য নতুন কিছু নয়।