বড় দেহ, বড় স্বপ্ন

ইয়াসির আলী রাব্বি।

এখন মোটামুটি সবার মুখেই একটা পরিচিত নাম। চট্টগ্রাম থেকে উঠে আসা এই তরুণ গেল বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে দেখিয়েছেন শটের ফুলঝুরি। ৯ ম্যাচে করেছেন ৩৬.৭৫ গড়ে ২৯৪ রান।

ইয়াসিরের খেলার একটা বিশেষ ধরণ আছে। তিনি নেমেই বল পেটাতে যান না। তিনি প্রথমে বলের গতি বোঝার চেষ্টা করেন, পিচের আচরণ জানার চেষ্টা করেন। এতে যেটা হয় প্রথমদিকে কিছুটা ধীর স্থির থাকেন তিনি।

তবে এই বোঝাবুঝিতে যে তিনি অনেক বেশি সময় নেন তা কিন্তু নয় । খুব অল্প বলই তিনি এর পেছনে নষ্ট করেন। কিন্তু এই প্রথম বোঝার ব্যাপারটা কেটে গেলে, ইয়াসিরের আসল রূপটা বেরিয়ে আসে এরপর। হাত খুলে মাঠের চারপাশে শট খেলতে থাকেন তিনি।

ইয়াসির আলী রাব্বিকে দেখলেই মোটামুটি টি-টোয়েন্টি ঘরানার খেলোয়াড় বলেই মনে হয়। এই মনে হওয়ার পেছনের কারণটাও যথেষ্ট শক্ত-তাঁর দেহের গড়ন। আফগানিস্তানের হযরতুল্লাহ জাজাই কে চেনেন নিশ্চয়ই? দেহের গড়নকে ব্যাবহার করে কি নিখাঁদ টি-টোয়েন্টি খেলেন তিনি!

ইয়াসিরকে দেখলেও অমনই মনে হয়।

সত্যি কথা বলতে, উইকেটে সেট হয়ে যাবার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা ইয়াসির নিজের গড়নকে ব্যাবহার করেন পুরোদমে। আমি চাই, ইয়াসির তার এই ব্যাবহারটাকে চলমান রাখুক। শট পাওয়ার, ক্লিন হিট এসবই তো আমরা একজন টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়ের মাঝে দেখতে চাই। একা হাতে ছয় মারতে পারা কোন একজন টি-টোয়েন্টি জনরার খেলোয়াড় তো আমাদের দলেও দরকার, নাকি?

তবে, ‘ইয়াসির পাঠ’ এ মজার ব্যাপার আছে আরও। আপনি যদি শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ কিংবা চট্টগ্রাম ভাইকিংসের হয়ে বিপিএল মাতানো ইয়াসিরকে দেখে তার খেলা নিয়ে আন্দাজ করার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি অল্প একটু জেনেছেন।

কারণ শুধু ছোট ফর্ম্যাটেই না, লম্বা সংস্করণেও ইয়াসির আলী অনেক অনেক বেশি কার্যকর। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে তিনি খেলেছেন মোট ৫১ ম্যাচ, ব্যাট করতে নেমেছেন ৮১ ইনিংসে, এতেই তাঁর রান ৩৫৪২!

কুলীন সংস্করণে তাঁর গড় কত জানেন? ৫১.৩৩! স্ট্রাইক রেট ৫৫.০৬!

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বলকে পেটানো ছেলেটার ফার্স্ট ক্লাস স্ট্রাইক রেট কিনা ৫৫.০৬! এতেই তো বোঝা যায়, ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের টেম্পারমেন্টকে কতটা সামলাতে দক্ষ তিনি।

ইয়াসির আলী রাব্বি নিজেকে কিছুটা দুর্ভাগাও মানতে পারেন। ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড সফরে তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন; লংগার ফর্ম্যাটেই। নির্বাচকেরা তখনই রাব্বিকে টেস্টে ‘রেডি রিপ্লেসমেন্ট’ ভাবা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এরপরই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন রাব্বি, সিএনজি দুর্ঘটনাতে চার মাস ছিলেন বিছানায়। তা না হলে হয়তো এতদিনে অভিষেকটাও হয়ে যেত রাব্বির।

ইয়াসির আলী রাব্বি সত্যি বলতে একটা বড় স্বপ্নই দেখাচ্ছেন আমাদের। এই স্বপ্নের শুরুটাও হয়েছিল চমকপ্রদভাবেই। কাকতালীয় বলতে পারেন, কিন্তু বিপিএল অভিষেকে ‘চিটাগাং ভাইকিংসের ‘ হয়ে ফিফটি হাঁকানো রাব্বী দলে রিপ্লেস করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুলকে!

আমরা চাই, আমাদের বাকি স্বপ্নের মত রাব্বীর স্বপ্নটা দিবাস্বপ্ন না হোক।

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link