ফুটবল কোনো কালেই বিতর্কের ঊর্ধে ছিল না। রেফারির বাজে সিদ্ধান্তে অনেক সময় মাশুল দিতে হয়েছে বেশ কিছু দলকে। একই ভাবে, সেই সব সিদ্ধান্তের কারণে অনেক দল বিভিন্ন সময় ফায়দাও লুটেছে। রেফারির সিদ্ধান্ত পক্ষে আসায় অনেক সময় পাল্টে গিয়েছে ইতিহাস। সে সব ইতিহাস এখনও বহুল চর্চিত বিষয়। ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত এমন পাঁচটি ভুল নিয়েই খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন।
- ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ শিরোপা নির্ধারণী গোলের সিদ্ধান্ত
১৯৬৬ বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ড- পশ্চিম জার্মানি মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচ। নির্ধারিত নব্বই মিনিটে স্কোরলাইন ২-২ গোলে সমতা থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। যোগ করা সে ৩০ মিনিটের ঠিক ১১ তম মিনিটে জিওফ হার্স্ট বল উড়িয়ে মারলেন পশ্চিম জার্মানির গোলবারের দিকে।
হার্স্টের সেই কিক করা বলটা গোলবারের উপরিভাগে লেগে শুধু মাটিতে স্পর্শ হয়েছে, আর এতেই গোলের সংকেত দিয়ে দেন রেফারি। রেফারির সেই গোলের সংকেতের পরই ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় ইংলিশরা। কিন্তু পরবর্তীতে রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি গোললাইন অতিক্রম করেনি।
সে সময় ভিআরও ছিল না। তাই রেফারির সরাসরি সিদ্ধান্তের কারণেই ইংলিশরা বিশ্বকাপ জেতার পথে এগিয়ে যায়। জিওফ হার্স্ট ঐ গোলের পর ম্যাচের ১২০ মিনিটে যদিও আরেকটি গোল করেছিলেন।
তবে, রেফারি ঐ গোলের সিদ্ধান্তে ইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপ শিরোপা হয়ে যায় বিতর্কিত। এমনকি এত বছর বাদেও রেফারির দেওয়া সেই গোলের সিদ্ধান্তটি নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম বাজে সিদ্ধান্ত বলেও অনেকে এটিকে আখ্যায়িত করেন।
- ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের অদ্ভুত গোল
২০১০ বিশ্বকাপের ঘটনা। ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে ঠিক ১৯৬৬ বিশ্বকাপের উল্টো ঘটনা ঘটে এ বিশ্বকাপে। সেবার জার্মানির বিপক্ষে গোললাইন অতিক্রম না করেই স্কোরশিটে গোল লেখাতে পেরেছিল ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট।
কিন্তু, দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া এ বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে দারুণ এক শটে গোল লাইন অতিক্রম করালেও রেফারির সিদ্ধান্তে গোলবঞ্চিত থেকে যান ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। আর বিশ্বকাপের ইতিহাসে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে এই না দেওয়া গোলকে তখন থেকেই অভিহিত করা হয় ঘোস্ট গোল কিংবা ভুতূড়ে গোল হিসেবে।
- চ্যাম্পিয়নস লিগে লুইস গার্সিয়ার বিতর্কিত গোল
২০০৫ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল আর চেলসি। নিজেদের মধ্য প্রথম গোলশূন্য ড্র হওয়া দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি হয়ে গিয়েছিল এক প্রকার প্রি-ফাইনাল ম্যাচের মতো।
আর এখানেই রেফারির বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে ফাইনালে উঠে যায় লিভারপুল। ম্যাচের একমাত্র গোলটি দিয়েছিলেন লুইস গার্সিয়া। কিন্তু গোলমুখে গার্সিয়ার আলতো করে ছুঁয়ে দেওয়া বলটি গোল লাইন অতিক্রম করেছিল কিনা তা নিয়ে তখনই সন্দেহ জেগেছিল।
কিন্তু, রেফারি সেই সন্দেহের কোনো অবকাশ না রেখেই গোলের সিদ্ধান্ত দিয়ে বসেন। এর ফলে ঐ একটি সিদ্ধান্তেই সেমি থেকে বাদ পড়ে যায় চেলসি। আর ফাইনালে চলে যায় লিভারপুল। এমনকি সেবার ইউসিএল শিরোপা জিতেছিল এই লিভারপুলই।
- মিলানের মুনতারির ‘না’ হওয়া গোল
ঘটনাটা ইতালিয়ান সিরি ‘এ’ লিগের ২০১১-১২ মৌসুমে। সে মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল জুভেন্টাস। আর চার পয়েন্ট কম নিয়ে রানার্সআপ হয়েছিল এসি মিলান। বিতর্কটা মূলত এই দুই দলের মধ্যকার একটি ম্যাচ নিয়েই। মিলানের মুনতারি জুভেন্টাসের গোলমুখে একটি শট নিয়েছিলেন।
জুভেন্টাসের জিয়ানলুইজি বুফন সেই শট ঠেকিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু বুফন বলটি সেভ দিয়েছিলেন বল গোললাইন অতিক্রম করার পর। তবে মুনতারির প্রায় হতে যাওয়া সে গোলটি আর স্কোরশিটে ওঠেনি রেফারির সিদ্ধান্তের কারণে।
বলটি গোললাইন অতিক্রম করেনি বলে রায় দিয়ে মুনতারেকে রেফারি গোলবঞ্চিত করেন। আর সেই সিদ্ধান্তের কারণেই ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়ে শেষ হয়েছিল। যেখানে ঐ সিদ্ধান্তে মিলানের পক্ষে আসলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট পেতে পারত এসি মিলান। লিগ শেষে এই একটি সিদ্ধান্তের কারণে অনেকটা হাতছোঁয়া দূরত্বে এসে লিগ শিরোপা মিস করে এসি মিলান।
- এক সিদ্ধান্তে অ্যাস্টন ভিলার রেলিগেশন থেকে বেঁচে যাওয়া
খুব বেশিদিন আগের কথা না। ২০১৯-২০ মৌসুমের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল অ্যাস্টন ভিলা আর শেফিল্ড ইউনাইটেড। ম্যাচ হারলেই এস্টন ভিলাকে যেতে হবে হবে রেলিগেশন জোনে।
অর্থাৎ পরবর্তী ইপিএল খেলার পথ বন্ধ হওয়ার জোগাড়। এমন সমীকরণে প্রথমেই গোল হজম করে বসেছিল এস্টন ভিলা। শেফিল্ড ইউনাইটেডের ক্রিস ওয়াইল্ডের দূর থেকে বাড়ানো বল ঠিকই ধরেছিলেন অ্যাস্টন ভিলার গোলরক্ষক অলিভার। কিন্তু সেই বল সেভ করতে গিয়ে বল নিয়ে গোলবারের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন। তাতে বল নিশ্চিতভাবেই গোললাইন অতিক্রম করেছিল।
কিন্তু, সেটি চোখ এড়িয়ে যায় রেফারির। যার কারণে সেটি আর গোল হয়নি। তখন অবশ্য হক আই টেকনোলজির ব্যবহার শুরু হয়েছিল। কিন্তু যখন এটি আঁচ করা হয় ততক্ষণে বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেছে। তাই রেফারির সিদ্ধান্তে বেঁচে যায় অ্যাস্টন ভিলা। ম্যাচ শেষ হয় গোলশূন্য ড্র থেকে। আর ড্র থেকে ঐ একটি পয়েন্টের কারণেই রেলিগেশন রাউন্ড পড়া থেকে বেঁচে যায় অ্যাস্টন ভিলা।