চামড়ার বলের খেলা ফুটবল তো অনেক দেশ খেলে তবে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপে সুযোগ পায় মাত্র বত্রিশ দল। তবে সব সময়ই যে সেরা বত্রিশ দল সুযোগ পায় তা কিন্তু নয়। বাছাই পর্বে মহাদেশীয় বিভাজন থাকায় প্রায় সময়ই সেরা বত্রিশ দল খেলতে পারে না বিশ্বকাপে।
অনেক অপ্রত্যাশিত আর নাটকীয় ঘটনায় কখনো কখনো সেরা দলও বাদ পড়ে যায়, শুধু তাই নয় পুরো চার বছর ক্লাব ফুটবলে দাপিয়ে বেড়ানো অনেক সেরা ফুটবলারও ভাগ্যের প্রহসনে বিশ্বমঞ্চে খেলার সুযোগ পান না। ইতিহাসে এমন অনেক কিংবদন্তি ফুটবলার রয়েছেন যারা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থে অংশ নিতে পারেননি।
- আলফ্রেডো ডি স্টেফানো
আলফ্রেডো ডি স্টেফানোকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে। কিন্তু ডি স্টেফানো কখনোই খেলতে পারেননি বিশ্বকাপের মঞ্চে। এই সুপারস্টার আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলেছেন আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া এবং স্পেনের হয়ে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে তিনটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করলেও অবশ্য বিশ্বকাপ খেলা হয়নি স্টেফানোর।
১৯৫৪ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে খেললেও দলটির স্কোয়াডে জায়গা হয়নি স্টেফানোর। কেননা এর কিছুদিন আগে তিনি খেলেছিলেন প্রতিবেশী দেশ কলম্বিয়ার হয়ে। আবার কিছুদিন পর স্পেনের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর ইউরোপীয় দলটির হয়ে মাঠে নামেন স্টেফানো। কিন্তু ১৯৫৮ বিশ্বকাপের মূল পর্বে স্পেন জায়গা করে নিতে না পারায় সেবারও বিশ্বকাপ খেলা হয়নি স্টেফানোর।
সর্বশেষ ১৯৬২ সালে স্পেন বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পায় ঠিকই কিন্তু চোট থাকায় বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা করে নিতে পারেননি ক্লাব ফুটবলের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। ফলে ক্লাব পর্যায়ে সর্বোচ্চ সফলতা পাওয়া সত্ত্বেও কখনো বিশ্বকাপ খেলা হয়নি আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর।
- জর্জ বেস্ট
জর্জ বেস্ট ছিলেন তাঁর সময়ের সেরা প্রতিভাবান ফুটবলার। ফুটবল পায়ে একজন শিল্পী ছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের সোনালি সময়ে তাঁর দেশ নর্দান আয়ারল্যান্ড কখনোই বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পায়নি। তবে ১৯৮২ সালে নর্দান আয়ারল্যান্ড বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। যদিও তত দিনে জর্জ বেস্টের বয়স ৩৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছিল।
ইউরোপীয় ফুটবলকে বিদায় বলে তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের একটি ক্লাবে ছিলেন। সব মিলিয়ে আর কোনো দিন বিশ্বকাপও খেলা হয়নি তাঁর। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ না খেলা খেলোয়াড়দের মাঝে সবচেয়ে সেরা মানা হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই কিংবদন্তিকে।
- জর্জ উইয়াহ
ফুটবলীয় শক্তি বিবেচনায় তুলনামূলক পিছিয়ে আছে আফ্রিকা মহাদেশ। তবে এখান থেকেই তৈরি হয়েছে অনেক সেরা ফুটবলার। আর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আফ্রিকান ফুটবলার বলা হয়ে থাকে জর্জ উইয়াহকে। কিন্তু লাইবেরিয়ার এই ফুটবলার কখনো বিশ্ব আসরে নিজের সামর্থ্য প্রমাণের সুযোগ পাননি।
জর্জ উইয়াহ খেলেছেন পিএসজি, এসি মিলান ও চেলসির মত বড় বড় ক্লাবে। তিনবার আফ্রিকার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন উইয়াহ। কিন্তু লাইবেরিয়া কখনো বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের বাঁধা টপকাতে না পারায় বিশ্বকাপ খেলা হয়নি তাঁর। ফুটবলকে বিদায় বলার পর রাজনীতিতে যোগ দেয়া এই তারকা ফুটবলার বর্তমানে নিজ দেশের রাষ্ট্রপতি।
- এরিক ক্যান্টোনা
এরিক ক্যান্টোনা ছিলেন তাঁর প্রজন্মের সেরা পারফর্মারদের একজন। কিন্তু পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও ক্যান্টোনার স্বভাব ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এই বিতর্কিত স্বভাবের কারণেই শক্তিশালী ফ্রান্সের হয়ে খেলা সত্ত্বেও কখনো বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি তিনি। ১৯৯০ সালে ফ্রান্স দলের তৎকালীন কোচ অঁরি মিশেলের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে জাতীয় দল থেকে নিষিদ্ধ হন ক্যান্টোনা।
তবে পরবর্তী সময়ে আবারো সুযোগ পান তিনি। কিন্তু দর্শকের সাথে বাজে আচরণ করায় ফুটবল থেকে বড় একটা সময়ের জন্য নিষিদ্ধ হন ক্যান্টোনা। স্বাভাবিকভাবেই আর জাতীয় দলে ফেরা হয়নি তাঁর; অংশ নেয়া হয়নি কোন বিশ্বকাপ আসরে।
- রায়ান গিগস
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা রায়ান গিগস ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। ক্লাব ফুটবলের সফল এই খেলোয়াড় ক্যারিয়ারে জিতেছেন অসংখ্য শিরোপা। কিন্তু গিগসের দেশ ওয়েলশ তাঁর সময়ে কখনো বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তাই ক্লাবে সফল হয়েও বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন কখনো পূরণ হয়নি এই ওয়েলশ স্টারের।
এরা ছাড়াও আবেদি পেলে, ইয়ান রাশ, লাসলো কুবালার মত বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলার কখনো বিশ্বকাপে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি। ফুটবল আকাশের উজ্জ্বলতম এসব নক্ষত্রের কথা ভাবলে মেনে নিতেই হয় খেলাটা বোধহয় একটু বেশিই নির্মম।