আশরাফ হাকিমি ‘বাড়ি ফেরা’

মাদ্রিদের অলিগলি ভীষণ চেনা মরক্কান ফুটবলার আশরাফ হাকিমির। কারণ তাঁর বাবা মায়ের জীবন সংগ্রামের গল্প এই মাদ্রিদের রাস্তার সাথেই মিশে আছে। একটা সময় মাদ্রিদের রাস্তায় ফেরি করে মালামাল বিক্রি করতেন তাঁর বাবা। আর বাসাবাড়ি পরিষ্কারের কাজ করতেন তাঁর মা। এভাবেই একজন হাকিমির ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্প তৈরি হয়েছে।

আশরাফ হাকিমির জন্ম স্পেনে। সেই সূত্রে স্পেন যুব দলে ডাকও পেয়েছিলেন। তবে সে ডাকে তিনি সাড়া দেননি। ফুটবলটা খেলতে চেয়েছিলেন তাঁর বাবা মায়ের দেশ মরক্কোর হয়ে। সেই মরক্কোর হয়েই এবারের বিশ্বকাপে খেললেন। মরক্কো দলটা নিয়ে সাড়া জাগালেন। অ্যাটলাস সিংহ নামের যথার্থতা প্রমাণ করলেন। আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেমির মঞ্চে পদার্পণ করার নতুন এক ইতিহাসের অংশ হলেন। ২০২২ বিশ্বকাপ তাই আশরাফ হাকিমিকে গোটা বিশ্বের কাছে একটু অন্যভাবে চিনিয়েছে। কারণ ইতিহাস বদলানোর কারিগরদের তো নিত্যদিনের দুনিয়ায় দেখা মিলে কম।

রিয়াল মাদ্রিদ অ্যাকাডেমি থেকে আশরাফ হাকিমির ফুটবলে হাতেখড়ি। তবে রিয়াল মাদ্রিদ জার্সি গায়ে খুব একটা দেখা যায়নি তাঁকে। মাত্র নয়টা খেলেছেন তিনি। এরপর জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের নজরে পড়েন। আর সেখান থেকে এখন ফ্রেঞ্চ ক্লাব পিএসজির হয়ে খেলেন তিনি। এই ক্লাবের শুরুর একাদশের নিয়মিত মুখ তিনি। তবে নতুন খবর হল, এবার আশরাফ হাকিমিকে পেতে চাইছে তাঁর পুরনো ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ।

মূলত রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি এই মুহূর্তে দলের রাইট ব্যাক পজিশনে নতুন কাউকে দেখতে চাচ্ছেন। কারণ এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের এই পজিশনেই বেশি দুর্বলতা দেখা গিয়েছে। দানি কার্বাহাল রাইট ব্যাকে খেললেও তাঁর ফর্ম এখন পড়তির দিকে। আবার তাঁর রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে যে লুকাস ভাসকাজ ও আদ্রিয়ান ওদ্রিওজোলা আছেন, তারাও তেমন প্রথম সারির রাইট ব্যাক নন।

তাই এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে এই মুহূর্তে সেরা একজন রাইটব্যাক খুঁজছে রিয়াল মাদ্রিদ। আর এ সময়ে তারুণ্য, একই সাথে ভাল মানের রাইটব্যাকের নাম করতে গেলে আশরাফ হাকিমি শুরুর সারিতেই থাকবে। যেহেতু হাকিমি মাদ্রিদের অ্যাকাডেমির ফুটবলার ছিল তাই রিয়াল মাদ্রিদ হাকিমিকে দলে ভেড়াতে বেশ আশাবাদী।

টেকনিক্যাল এবিলিটি কিংবা মাঠের পজিশন সেন্স- সব মিলিয়ে রাইট ব্যাক হিসেবে আশরাফ হাকিমি দারুণ অপশন। তাছাড়া মাদ্রিদের প্লেয়িং স্টাইলের সাথে পরিচিত তিনি। বয়সটাও সবে ২৪। তাই তাঁকে দলে ভেড়ালে রিয়াল মাদ্রিদ নিশ্চিতভাবেই অনেক দিন সার্ভিস পাবে। কিন্তু এখানে একটা জটিলতা রয়েছে। পিএসজি’র সাথে হাকিমির চুক্তি আছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।

 

এমনিতে খেলোয়াড় ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে পিএসজি সব সময় বেশ শক্ত অবস্থানেই থাকে। অনেক চেষ্টা করেও পিএসজি থেকে এমবাপ্পেকে দলে ভেড়াতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। তাই হাকিমিকেও দলে ভেড়াতে হলে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে ফ্লোরেন্তিনা পেরেজকে। অতীত ট্রান্সফারের ইতিহাস বিবেচনা করলে, এই মুহূর্তে পিএসজি থেকে আশরাফ হাকিমিকে দলে ভেড়ানো এক প্রকার অসম্ভবই  মাদ্রিদের জন্য।

তাছাড়া রিয়াল মাদ্রিদের এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য হল জুড বেলিংহ্যামকে দলে ভেড়ানো। ইংলিশ এ মিডফিল্ডারের দল বদলই নির্ভর করছে রিয়াল মাদ্রিদ রাইট ব্যাকের জন্য আশরাফ হাকিমিকে ঠিক টানতে চাইবে কিনা। কারণ বেলিংহ্যামকে দলে নিতে হলে বেশ বড় অংকের রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করতে হবে রিয়াল মাদ্রিদকে। এখন এই ডিল সম্পন্ন হওয়ার ফেয়ার প্লে’র বেড়াজালে আশরাফ হাকিমিকে দলে ভেড়াতে পারা যাবে কিনা সেই সন্দেহও থাকছে।

কারণ পিএসজির সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার আগে হাকিমিকে মাদ্রিদে আনতে হলে তাঁর পেছনেও গুণতে হবে বড় অংকের রিলিজ ক্লজ। এখন এমন জটিল পরিস্থিতিতে রিয়াল মাদ্রিদ ছুটতে চাইবে কিনা সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে ফুটবলে অর্থের ঝনঝনানি কিংবা ট্রান্সফার ফি’র উচ্চমূল্যের শুরুটা করেছিল তো এই মাদ্রিদই। তাই দলের জন্য সেরা অপশন নিশ্চিত করার জন্য রিয়াল মাদ্রিদ আশরাফ হাকিমির পেছনেও ছুটতে পারে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link