তোরা সব জয়ধ্বনি কর, তোরা সব জয়ধ্বনি কর। ঠিক এই স্লোগানেই সরব নিশ্চয়ই গোটা সিলেট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্যতার অভাব নেই। তবে অভাবটা ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে। সেই অভাবটাই যেন এই আসরে ঘুচিয়ে দিতে মড়িয়া সিলেট স্ট্রাইকার্স। দুর্বার গতিতে দলটি ছুটে চলছে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে।
২০১২ সালের দিকে শুরু হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) যাত্রা। সেই আসর থেকেই ভিন্ন ভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির অধীনে আট দফা অংশ নিয়েছে সিলেট। তবে কোনবারই শিরোপার আনন্দে ভাসেনি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বিভাগটি। সেই আক্ষেপের গল্পে যেন এই দফা ইতি টেনে দেওয়ার প্রত্যয় মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের।
বিপিএলের মঞ্চে সিলেটের সর্বোচ্চ সাফল্য তৃতীয় স্থান দখল। সেটাও ২০১৩ আসরে। এর আগে পরে আসলে বলার মত কোন কিছুই নেই সিলেটের বিপিএল ইতিহাসে। প্রতিবারই টুর্নামেন্ট শেষ করেছে টেবিলের তলানিতে থেকে। তবে নবম আসরে এসে যেন ভিন্ন এক সিলেটের দেখা মিলছে বিপিএলে। এবারের গোটা দলটাই ভীষণ ভয়ানক।
এবারের আসর শুরু হওয়ার আগে অধিকাংশ ক্রিকেট বোদ্ধারাই কাগজে কলমে পিছিয়ে রেখেছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সকে। তবে মাঠের খেলায় সবার থেকে এগিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স। দেশি ব্যাটারদের কাঁধে ভর করে রীতিমত অপ্রতিরোধ্য দলটি। আবার নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি।
বিপিএলে মাশরাফির রেকর্ডটাও দারুণ। সবচেয়ে সফল অধিনায়ক তিনি। এমন একজনকে দায়িত্ব দেওয়াটা খানিকটা স্বস্তিই দেয়। আর সেই স্বস্তির আবরণ থেকে সিলেটকে বেড়িয়ে যাওয়ার সুযোগটুকু দিচ্ছে না মাশরাফির দল। তরুণ আর অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের একটা দারুণ সংমিশ্রণ দলটি। দলের তরুণ তিন ক্রিকেটার নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয় ও জাকির হাসানের ব্যাট ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম। শান্ত ও হৃদয়ের মধ্যে লড়াইটা হচ্ছে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হবার।
অন্যদিকে, দলের বোলিং ইউনিটটার হাল নিজের দখলেই রেখেছেন মাশরাফি। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত নিয়ন্ত্রিত বোলিং প্রতিপক্ষকে কাবু করবার জন্য যথেষ্ট। ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নেও দলের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মাশরাফি। তাঁকে আবার সঙ্গ দিচ্ছে পাকিস্তানের অভিজ্ঞ বাঁ-হাতি বোলার মোহাম্মদ আমির ও লংকান থিসারা পেরেরা।
মোদ্দাকথা পুরো দলটাই রয়েছে দারুণ ছন্দে। একেবারে প্রথম ম্যাচ থেকেই। দলটাও ভীষণ ভারসাম্যপূর্ণ। সেটার প্রমাণ চার ম্যাচের চারটিতেই জয়। প্রথম তিন ম্যাচে রান তাড়া করে জিতেছে স্ট্রাইকার্সরা। অন্যদিকে, ঢাকা ডমিনেটর্সের বিপক্ষে বিশাল এক লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেয় সিলেট স্ট্রাইকার্স। সেই বিশাল লক্ষ্যমাত্রা টপকে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল না মাঝারি মানের ঢাকা দলে। অগ্যতা জয় দিয়েই ঢাকার প্রথম পর্ব শেষ করে সিলেট স্ট্রাইকার্স।
এমন দারুণ পারফর্ম সিলেটের ইতিহাসে বেশ বিরল। এই বিরল ইতিহাসটাকে বর্ণিল করবার কোনরকম সুযোগই হাতছাড়া করতে চাইবে না মাশরাফি ও তাঁর দল, সেটা বলে দেওয়াই যায়। দুর্নিবার গতির এই জয়রথ সহসাই থেমে যাওয়া বেশ দুষ্কর। তবুও ক্রিকেট প্রচণ্ড অনিশ্চিত। সেই অনিশ্চয়তার বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে সিলেট নিজেদের প্রথম শিরোপা উৎসবে মেতে উঠবে সবাই হয়ত তেমনটাই প্রত্যাশা করে। তবে সমীকরণের শেষটা তো কেবল সময়ই বলতে পারবে।