আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়- সেই পথযাত্রায় লিওনেল মেসি নিশ্চিতভাবেই নায়ক। তবে নায়কের নায়কোচিত মুহূর্তের জন্যও তো পার্শ্বনায়কের প্রয়োজন হয়। মেসির স্বপ্ন পূরণে তাই এগিয়ে এসেছিল গোটা আর্জেন্টিনা স্কোয়াড।
গোলবার আঁকড়ে রেখে, দারুণ সব সেভ দিয়ে বিশ্বকাপ বাঁচানো কিংবা জেতানো- দুই কাজই ভালভাবে করেছেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর রক্ষণভাগে চীনের দেয়াল রূপে আবির্ভূত হয়ে কিংবা ঠান্ডা মাথায় প্রতিপক্ষের আক্রমণ বিনষ্ট করার মূলে ছিলেন ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো।
রোমেরো বরাবরই শান্ত, ধীর প্রকৃতির। অবশ্য এর বৈপরীত্যের দেখা মিলে যখন তিনি কাউকে ট্যাকল করেন, উইংগারদের সাথে পিছু লেগে তাদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ান। কাতার বিশ্বকাপ জুড়ে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগে অন্যতম ভরসার নাম হয়ে ছিলেন এই রোমেরো। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে খেলেছেন পুরো ১২০ মিনিট।
আর সেই ফাইনালেই ফ্রান্সের এমবাপ্পের সাথে তাঁর একটি মুহূর্তের দৃশ্যে চোখ আঁটকে যায়। ২-২ গোলে সমতায় ম্যাচ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই গোল করে বসেন মেসি। আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ৩-২ গোলে। আর ঐ গোলের পরই এমবাপ্পের মুখের সামনে গিয়ে ভিন্ন রকম এক উদযাপন করতে দেখা যায় রোমেরোকে। ঠিক এমবাপ্পেকে ইঙ্গিত করেই কেন সেই উদযাপন করেছিলেন তিনি তা এতদিন অজানা ছিল। অবশেষে সেই মুহূর্ত নিয়ে মুখ খুলেছেন ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো।
ইংলিশ এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এমন উদযাপন মূলত এমবাপ্পের প্রতি একটা প্রতিশোধ ছিল। আমাদের এনজো ফার্নান্দেজের সাথে সে খুব বাজে আচরণ করেছিল। তাই লিওর গোলের পর আমিও ওকে ইঙ্গিত করে চেঁচিয়ে অমন উদযাপন করেছিলাম।’
যদিও মেসির গোলের পরও সে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়তে পারেননি রোমেরো। শেষ মুহূর্তে সেই এমবাপ্পেই পেনাল্টি থেকে গোল করে আবারও ফ্রান্সকে সমতায় আনেন। ১২০ মিনিট শেষ স্কোর লাইন ৩-৩ হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রকারে।
ফ্রান্সের সাথে সে টাইব্রেকারের মুহূর্ত নিয়ে রোমেরো বলেন, ‘টাইব্রেকারের সময় আমি শুধু লিওর শটটা দেখেছিলাম। এরপরে আর একটিও শট আমি দেখিনি। চোখ বন্ধ করে ছিলাম। আমি শুধু ঈশ্বরের কাছে দোয়া করছিলাম।’
ফাইনালে ফ্রান্সকেই চেয়েছিলেন এমন মন্তব্য করে রোমেরো আরো বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই ফাইনালে ফ্রান্সকে চেয়েছিলাম। কারণ ওরা আগের বারের চ্যাম্পিয়ন ছিল। তাদের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচের ভিডিওটা আমি প্রতিদিন দেখি।’
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে বহুল আকাঙ্ক্ষিত এক স্বপ্ন পূরণ হয়েছে মেসির। এই বিশ্বকাপজয়ই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে সর্ব জয়ীদের কাতারে। রোমেরোও প্রশংসা বানে ভাসিয়েছেন লিওকে। তিনি বলেন, ‘ফুটবলের দিক থেকে মেসি সর্বকালের সেরা। আর মানুষ হিসেবে সে আরো অসাধারণ। একদম সাদামাটা একটা মানুষ। এই জীবনবোধেই তিনি গ্রেট।’
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে আড়ালের নায়ক ছিলেন আরেক লিওনেল। তিনি কোচ লিওনেল স্কালোনি। ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো লিওনেল স্কালোনিতে এতোই মুগ্ধ যে তিনি তাঁকে আজীবনের জন্য আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে দেখতে চান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি চুক্তি সম্পাদনের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমি তাঁর সাথে আজীবন চুক্তি করব। স্কালোনি এমন একজন কোচ যার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়া যায়। আমি এখন পর্যন্ত যত জনের অধীনে খেলেছি তাদের মধ্যে তিনিই সেরা।’